Inqilab Logo

রোববার, ০৯ জুন ২০২৪, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বাবুলের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ এসআই আকরামের বোনের

| প্রকাশের সময় : ১৬ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রাম ব্যুরো : এবার সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ করলেন ‘সড়ক দুর্ঘটনায়’ নিহত এসআই আকরাম হোসেনের বোন জিন্নাত আরা পারভীন। তার দাবি তাকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। তার অভিযোগ আকরামের মৃত্যুর পর বাবুল আক্তারের কারণে পুলিশ তাদের ওপর বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করেছিল। গতকাল (বুধবার) চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তার (আইও) সাথে সাক্ষাৎ করে সাংবাদিকদের সামনে এ অভিযোগ করেন তিনি।
বেলা সাড়ে ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত আইও ও নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) কামরুজ্জামানের সাথে তার কার্যালয়ে কথা বলেন এসআই আকরাম হোসেনের বোন জিন্নাত আরা পারভীন ও ভাগ্নি মোর্শেদা জাহান ডলি।
আইওর কার্যালয় থেকে বের হয়ে পারভীন সাংবাদিকদের বলেন, আমার ভাই এসআই আকরাম হোসেন ও মিতু হত্যা একই উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে বলে তার কিছু তথ্য দিয়ে গেলাম। আকরামের স্ত্রী বর্ণির সাথে বাবুল আক্তারের পরকীয়ার কারণে প্রথমে আকরাম ও পরে মিতুকে হত্যা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ তার।
গত ১৮ ফেব্রæয়ারী ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে আকরামের পাঁচ বোন অভিযোগ করেন, তাদের ভাইয়ের স্ত্রী ঝিনাইদহের মেয়ে বনানী বিনতে বসির বর্ণির সঙ্গে বাবুলের ‘সম্পর্ক’ ছিল। ২০১৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর আকরামকে হত্যার পরিকল্পনা করে বাবুল আক্তার ও বর্ণি। এ কারণে আকরামকে যমুনা সেতু হয়ে ঝিনাইদহ আসার পরামর্শ দেয় বর্ণি। পথে সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার মাথায় আঘাত করে। পরে ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার বড়দাহ থেকে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
আকরামের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ফরিদপুর ও পরে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। ঢাকায় চিকিৎসা নিয়ে আকরামের অবস্থার উন্নতি হচ্ছিল, কিন্তু বর্ণি স্যুপে বিষ মিশিয়ে খাওয়ালে ২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারি আকরাম মারা যান।
এতদিন পর কেন বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে পারভীন বলেন, আমার ভাইকে ‘পূর্ব পরিকল্পিতভাবে কুপিয়ে’ হত্যা করা হয়েছিল। এটাকে ওরা ‘সড়ক দুর্ঘটনা’ বলে চালানোর চেষ্টায় ছিল।
বাবুল আক্তার ঝিনাইদহের এসপির মাধ্যমে তাদের ‘চাপে’ রেখেছিলেন অভিযোগ করে পারভীন বলেন, আমাদের বলা হয়েছিল পুলিশ প্রশাসনে বোনদের কোন অধিকার নেই, বৌ’দের অধিকার আছে।
এসআই আকরামের মৃত্যু পর আদালতে করা মামলায় বাবুল আক্তারের নাম দিতে চাইলেও তাদের দিতে দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ পারভীনের।
আকরামের মৃত্যুর সময় বাবুল আক্তার মিশনে থাকলেও ওই সময় তিনবার তিনি দেশে এসেছিল অভিযোগ করে পারভীন বলেন, ওই সময় বাবুল আক্তার মাগুরার বাড়ি ও ঢাকায় থেকে বর্ণিকে সাথে নিয়ে আমরা যেন মামলা করতে না পারি এবং ময়না তদন্ত রিপোর্ট পাল্টে ফেলা যায় তার জন্য কাজ করে বেরিয়েছিলেন। মিতু হত্যাকাÐের নয় মাস পর কেন দুই হত্যাকাÐের যোগসূত্র খোঁজা হচ্ছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আকরামের বোন বলেন, মিতুকে হত্যার পর আমরা তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু মিতুর বাবা-মা ‘ভুল বুঝে’ বাবুল আক্তারের পক্ষে কথা বলেছিলেন এ জন্য যেতে পারিনি। মিতুর বাবা মোশারফ হোসেনের পক্ষ থেকে পরকীয়ার অভিযোগ তোলার পর আকরামের পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের সাথে যোগাযোগের কথা জানান তিনি।
কি তথ্যের ভিত্তিতে বাবুল আক্তারের সঙ্গে বর্ণির পরকীয়ার সম্পর্ক অভিযোগ তোলা হচ্ছে সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে পারভীনের সাথে থাকা তার ভাগ্নি মোর্শেদা জাহান ডলি বলেন, ২০০৭ সালে আকরামের মেয়ে হওয়ার পর আমরা বিষয়টি জানতে পেরেছি। সিজার হওয়ার কারণে বর্ণি পাঁচদিন হাসপাতালে থাকার পর বাবুল আক্তারের বোন লাবনীর বাসায় ছিলেন। সেখানে বাবুল আক্তার তার সেবা শুশ্রƒষা করেছিলেন বলেও দাবি তার।
ডলি আরও বলেন, আমার মামা অনেকবার জানিয়েছিলেন বাবুল আক্তারের জন্য তিনি সংসারে অশান্তিতে আছেন। আকরামের মৃত্যুর এক মাস আগে বর্ণি বাবুল আক্তারকে সঙ্গে নিয়ে ‘গেঞ্জাম’ করে ঝিনাইদহের ভাড়া বাসায় উঠেন। ঝামেলা মিটিয়ে ফেলার কথা বলে ডেকে নিয়ে বাবুল আক্তারের বাড়ি শৈলকুপা এলাকায় আকরামকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের। আকরামের স্ত্রী বর্ণি দুই বছর ধরে বাবুল আক্তারের বাড়িতে অবস্থান করছেন বলেও জানান পারভীন। বিষয়গুলো তদন্ত কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে বলেও জানান পরভীন।
আইও কামরুজ্জামান বলেন, আমি কাউকে ডাকিনি। তারা নিজ থেকে কথা বলতে এসেছেন। তারা অনেক কিছু বলেছে এবং তাদের বক্তব্য শুনেছি। তদন্তাধীন বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা জানিয়ে তদন্তকর্মকর্তা বলেন, যাদের নাম এসেছে তদন্তের স্বার্থে সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
তদন্ত কর্মকর্তাকে লিখিত বক্তব্য দেয়া হয়েছে বলে পারভীন দাবি করলেও কামরুজ্জামান বলেন, আমাকে লিখিতভাবে কিছু দেয়া হয়নি। মিডিয়াকে যা দিয়েছে সে ধরনের একটি কপি আমাকে দেয়া হয়েছে। গত বছরের ৫ জুন খুন হন মিতু।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ