পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সাখাওয়াত হোসেন বাদশা : আর্থিক দুরবস্থার কারণে বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়েছে নির্মাণাধীন তিনটি বিদ্যুৎ প্রকল্প। এতে করে বিদ্যুৎ খাত নিয়ে সরকারের ভিশন-২০২১ রূপকল্প বাস্তবায়ন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে দেখা দিয়েছে। স্পেনের কোম্পানি আইসোলেক্স ইঞ্জিনিয়ার অ্যান্ড স্যামসং সিঅ্যান্ডটি করপোরেশন যৌথভাবে এই বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের কাজ করছে। এই তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট উৎপাদন ক্ষমতা হচ্ছে ৮৮৫ মেগাওয়াট। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সম্ভুক গতির কারণে সরকারকে কমপক্ষে ২ হাজার কোটি টাকা লোকসান গুনতে হবে।
শুরু থেকেই স্পেনের কোম্পানি আইসোলেক্স নিয়ে বিতর্ক ছিল। পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে গেছে যে, এই প্রতিষ্ঠানটির কাজের ধরন দেখে সরকার নিজেই ক্ষুব্ধ। এরপরও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারছে না। বর্তমানে আর্থিক দুরবস্থার কারণে এই কোম্পানিটি বিবিয়ানা সাউথ প্রজেক্ট ৪০০ মেগাওয়াট ও সিদ্ধিরগঞ্জে ৩৩৫ এবং খুলনায় ১৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন বিদ্যুৎকেন্দ্র তিনটি নির্মাণ করতে পারছে না।
বিশেষ করে বিবিয়ানা সাউথ প্রজেক্ট ৪৫০ মেগাওয়াট ও সিদ্ধিরগঞ্জে ৩৩৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র দু’টি বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে নির্মাণ করা হচ্ছে। এই প্রকল্প দু’টির নির্মাণকাজ মাঝ পথে থেমে যাওয়ায় সরকার আইসোলেক্সকে নির্মাণকাজ সম্পন্ন পৃঃ ২ কঃ ১
আর্থিক দুরবস্থায় স্পেনের কোম্পানি আইসোলেক্সকরার তাগিদ দেয়ার পরও কোনো সুফল আসছে না। বরং এ দু’টি প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করতে আইসোলেক্স সরকারের কাছে অতিরিক্ত প্রায় ৫শ’ কোটি টাকা দাবি করেছে। এ নিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় জরুরি বৈঠক ডেকে প্রতিষ্ঠানটিকে জানিয়ে দিয়েছে সরকারের পক্ষে অতিরিক্ত অর্থের যোগান দেয়া সম্ভব নয়।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, নির্মাণাধীন বিবিয়ানা সাউথ ৪০০ মেগাওয়াট গ্যাসভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট প্রকল্পের সার্বিক কার্যক্রম সরেজমিন পরিদর্শন শেষে গত ২ মার্চ দেয়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রকল্পের সার্ভিস পাইলের কাজ শুরু করার লক্ষ্যে প্রি-লোডিংয়ের জন্য ব্যবহৃত অতিরিক্ত মাটি অপসারণের কাজ মন্থরগতিতে চলমান রয়েছে।
প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে সার্ভিস পাইলের কাজ শুরু হয়েছে এবং ১৩০০টির মধ্যে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ২০টি সার্ভিস পাইলের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের অন্যান্য কাজের অগ্রগতিও পরিলক্ষিত হয়নি। সাইটে ইপিসি ঠিকাদারের কোনো কর্মচাঞ্চল্য নেই।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইপিসি ঠিকাদারের সাথে ২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর চুক্তি স্বাক্ষরের ২ বছর ৩ মাস পরও প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই। বাস্তব অবস্থা পর্যালোচনায় ইপিসি ঠিকাদারের পক্ষে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে মর্মে প্রতীয়মান হয় না।
প্রকল্পটির এমন দরবস্থার কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে, প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের সাথে আলোচনাক্রমে প্রকল্পটি জরুরি ভিত্তিতে বাস্তবায়নের কার্যক্রম চূড়ান্ত করতে হবে। দ্বিতীয় সুপারিশে বলা হয়েছে, ঠিকাদারের পক্ষে প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ পুরোদমে চালু করা সম্ভব না হলে ঠিকাদারের সাথে সম্পাদিত চুক্তি বাতিলপূর্বক নতুন ঠিকাদার নিয়োগের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
বিবিয়ানা সাউথ প্রকল্প নিয়ে আইসোলেক্সের যে দুরবস্থা চলছে, একই অবস্থা বিরাজ করছে সিদ্ধিরগঞ্জ প্রকল্পের ক্ষেত্রেও।
এ ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, যথেষ্ট যাচাই-বাছাই না করে ঢালাওভাবে বিদেশি কোম্পানিকে কাজ দিলে ভবিষ্যতে বড় প্রকল্পগুলোর ভাগ্যেও বিবিয়ানা সাউথ ও সিদ্ধিরগঞ্জ প্রকল্প দু’টি মতো দুরবস্থার সৃষ্টি হবে। আর এতে করে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকা- চরমভাবে ব্যাহত হবে। সেই সাথে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সরকারের ভিশন-২০২১ রূপকল্প। তিনি বলেন, কাজ দেয়ার ক্ষেত্রে ঠিকাদারের আর্থিক সক্ষমতা যথেষ্ট যাচাই-বাছাই করেই দেয়া উচিত। অনেক ক্ষেত্রে দরপত্রের শর্ত পূরণ করার পরও মাঝ পথে এসে কাজ থেমে যায়। এসব ক্ষেত্রে বড় প্রকল্পের কাজ দেয়ার আগে সরকারকে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে বলে বিদ্যুৎ খাতের বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
আইসোলেক্সের কাজ নিয়ে ২০১৪ সালেই অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। ওই সময় বলা হয়েছিল সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে স্প্যানিশ কোম্পানি কাজটি পেলেও প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ ছিল না। যদিও চীনা প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দিয়েছিল ২ হাজার ৩৭০ কোটি ৮৫ লাখ ৪৭ হাজার টাকার। আর স্প্যানিশ কোম্পানি আইসোলেক্স দরপ্রস্তাব করেছিল ২ হাজার ২২৬ কোটি ৩৭ লাখ ৮৮ হাজার ৩৪৯ টাকা।
সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে স্প্যানিশ কোম্পানিকে কাজটি দেয়া হয়। কিন্তু শর্তের বেড়াজাল আর কর্তাদের অনিয়মের কারণে বর্তমানে এই দর গিয়ে ঠেকেছে প্রায় ৩২শ’ কোটি টাকায়। অর্থাৎ ১২শ’ কোটি টাকা বাড়তি পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে। ইপিসি ঠিকাদারকে অর্থ বাড়িয়ে দেয়ার এমন ঘটনা নজিরবিহীন। কিন্তু সেই কাজটিই করা হয়েছে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেডের (এপিএসসিএল) ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরো জানা গেছে, ২০১২ সালের ডিসেম্বরে দরপত্র জমা দেয়ার শেষ সময় ছিল। দুই স্তরের এ দরপত্রে প্রথমে ৯টি কোম্পানি দরপত্র জমা দেয়। আর দ্বিতীয় স্তরে বা চূড়ান্ত পর্যায়ে তিনটি কোম্পানি দরপত্র জমা দিয়েছিল। এগুলো হচ্ছে চীনা ন্যাশনাল টেকনিক্যাল ইম্পোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএনটিআইসি), আইসোলেক্স ইঞ্জিনিয়ার অ্যান্ড স্যামসং করপোরেশন ও টেকনিকাস রিইউনিডাস (টিআর) ও টিএসকে ইলেকট্রনিক। এর মধ্যে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি আইসোলেক্সকে দরপত্রে অযোগ্য ঘোষণা করেছিল। এরপরও তারা সর্বনি¤œ দরদাতা হিসেবে সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজটি পেয়ে যায়।
আইসোলেক্সের কাজ নিয়ে খোদ বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুও অসন্তুষ্ট। সরকারকে না জানিয়েই নিরাপত্তার ঘাটতি দেখিয়ে তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আইসোলেক্স কোম্পানি তাদের ৪১ প্রকৌশলীকে প্রত্যাহার করে নিলে সরকারের ভেতর অসন্তোষ দেখা দেয়।
এ নিয়ে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘চুক্তি অনুযায়ী নির্মাণাধীন কোনো প্রকল্প এলাকা থেকে কোনো কোম্পানি চলে যেতে পারে না। তারা চুক্তির কোন শর্ত অনুসারে কর্মী প্রত্যাহার করেছে তা আমাদের জানায়নি। তাদের ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রয়োজনে তাদের জরিমানা করা হবে।’
আইসোলেক্সের আর্থিক দুরবস্থা নিয়ে জানতে চাইলে সিদ্ধিরগঞ্জের প্রকল্প পরিচালক নাজমুল আলম ইনকিলাবকে বলেন, আমরা তাগিদ দিচ্ছি তারা যাতে প্রকল্পটির কাজ দ্রুত শেষ করে। এর বেশি কিছু আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।