Inqilab Logo

বুধবার, ২৯ মে ২০২৪, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

বিচার বিভাগকে জিম্মি করে রাখা হয়েছে ফের দুই সপ্তাহ সময় মঞ্জুর

মাসদার হোসেন মামলার শুনানিকালে আপিল বিভাগ

| প্রকাশের সময় : ১৫ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মালেক মল্লিক : মাসদার হোসেন মামলায় শুনানিকালে আপিল বিভাগ রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তাকে উদ্দেশ করে বলেছেন, বিচার বিভাগকে জিম্মি করে রাখা হয়েছে। এইভাবে চলতে পারে না। মনে রাখা দরকার, রাষ্ট্রের কাছে ব্যক্তি নয়, প্রতিষ্ঠান বড়। রাষ্ট্রের পক্ষে একটা ফেয়ার প্লে-এর বিষয় আছে। একটা যৌক্তিক কারণ থাকবে তো। গতকাল মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের আট বিচারপতির বেঞ্চ থেকে এ মন্তব্য আসে। নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলা বিধির গেজেট প্রকাশের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ কয়েক দফায় সময় নেয়। এর আগে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি শৃঙ্খলাবিধি প্রণয়নে ১৪ মার্চ পর্যন্ত সময় মঞ্জুর করেন আপিল বিভাগ। সে অনুযায়ী গতকাল মামলাটি কার্যতালিকায় আসলে আদালত নতুন করে সময় আবেদন করেন রাষ্ট্রপক্ষ। পরে আপিল বিভাগ শেষবারের মত দুই সপ্তাহ সময় দেন। এ নিয়ে নবম বারের মতো আদালতের কাছ থেকে সময় নিলো রাষ্ট্রপক্ষ।  
গত বছরের ৩১ অক্টোবর এক বাণীতে প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ বিচার বিভাগের ধীরগতির অন্যতম কারণ। এই অনুচ্ছেদের ফলে অধস্তন আদালতের বিচারকদের পদোন্নতি, বদলি ও শৃংখলামূলক কার্যক্রম সুপ্রিম কোর্টের পক্ষে এককভাবে গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। দ্বৈত শাসনের ফলে বহু জেলায় শূন্যপদে সময়মতো বিচারক নিয়োগ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে বিচারকার্যে বিঘœ ঘটে এবং বিচার প্রার্থীদের ভোগান্তি বেড়ে যায়।
গতকাল সকাল ৯টায় আদালতের কার্যক্রম শুরুর পরই অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ২ সপ্তাহের সময় প্রার্থনা করেন। পরে আপিল বিভাগ অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে বলেন, বিচারকদের শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশ নিয়ে বারবার সময় নেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে কতবার আর সময় নেয়া হবে। আদালত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দেশে কি কোন সরকার আছে ? দেশটা কি আটকে আছে? দেশ কি চলছে না? মনে রাখা দরকার রাষ্ট্রের কাছে ব্যক্তি কিছু নয়, প্রতিষ্ঠানই বড়। আর সময় দেয়া যাবে না।
পরে অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে বলেন, মন্ত্রণালয় আমাকে জানিয়েছে, রুলস প্রণয়ন করবেন প্রেসিডেন্ট। শিগগিরই বিধিমালা জারি করা হবে। দুই সপ্তাহ চেয়েছি। আশা করি, এ সময়ের মধ্যে অচলাবস্থা নিরসন হবে। পরে আদালত দুই সপ্তাহ সময় মঞ্জুর করেন।
১৯৯৯ সালের দুই ডিসেম্বর মাসদার হোসেন মামলায় ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেয়া হয়। ওই রায়ে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল। ২০১৫ সালের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় শৃঙ্খলা সংক্রান্ত একটি খসড়া বিধি প্রস্তুত করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়। কিন্তু গত বছরের ২৮ আগস্ট আপিল বিভাগ খসড়ার বিষয়ে বলেন, শৃঙ্খলা বিধিমালা সংক্রান্ত সরকারের খসড়াটি ছিল ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী বিধিমালার হুবহু অনুরূপ, যা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থী।
গত বছরের ৬ নভেম্বরের মধ্যে এরপর সুপ্রিম কোর্ট একটি খসড়া বিধিমালা করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। মামলাটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসে। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষে এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি জানাতে না পারায় আপিল বিভাগ বিধিমালা চূড়ান্তের বিষয়ে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, তা লিখিতভাবে জানাতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দিয়ে আদেশের দিন ধার্য করেন। ৭ ডিসেম্বর অ্যাটর্নি জেনারেল ফের সময়ের আবেদন জমা দেন।
কিন্তু এক সপ্তাহ পর ফের এক সপ্তাহ সময় চাইলে আপিল বিভাগ রাষ্ট্রপক্ষকে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেন। এছাড়াও গেজেট প্রকাশ না করায় আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিবকে আদালতে হাজির করতে মৌখিক নির্দেশ দেন সর্Ÿোচ্চ আদালত।
তবে ওই দুই সচিবের হাজির হওয়ার একদিন আগেই নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ সংক্রান্ত বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা নেই বলে প্রেসিডেন্ট সিদ্ধান্ত দেন। ওই সিদ্ধান্তের বিষয়টি ১২ ডিসেম্বর অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে জানালে আদালত বলেছিল, প্রেসিডেন্টকে ভুল বোঝানো হচ্ছে। চলতি বছর ১৫ জানুয়ারি অ্যাটর্নি জেনারেল সময়ের আবেদন করেন। সে সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিধিমালার গেজেট আদালতে দাখিলের জন্য ৫ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছিলেন আদালত। এক সপ্তাহ পর গত ১২ ফেব্রুয়ারি আচরণবিধির গেজেট করতে কেন সময় দরকার, তার কারণ ১৩ ফেব্রুয়ারি লিখিতভাবে জানাতে রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দেন। এরপর ১৩ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষ আদালতকে জানান, বিধিমালাটি বিবেচনার জন্য  প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠানো হয়েছে। পরে তিনি ২ সপ্তাহ সময় আবেদন করলে আপিল বেঞ্চ বিধিমালার গেজেট প্রকাশের জন্য ২ সপ্তাহ সময় দেন। এইভাবে এই পর্যন্ত নবম বারের মতো সময় নেয় সরকার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ