Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া সিরিয়ায় সমাধান আসবে না

| প্রকাশের সময় : ১৫ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মিডল ইস্ট মনিটর : যুক্তরাষ্ট্র রেকর্ড সময়ে সিরিয়ার দৃশ্যপটে ফিরে এসেছে। তারা আল-রাক্কার লড়াইয়ে প্রধান ভূমিকা বিতরণকারীতে পরিণত হয়েছে এ বিষয়ের উপর জোর দিতে যে তার সম্পৃক্ততা ছাড়া কোনো সমাধানেই পৌঁছনো যাবে না যা ইরাকে দায়েশের (ইসলামিক স্টেট বা আইএসের আরবি নাম) ক্ষেত্রে ঘটছে। এর জন্য নানা রকম ব্যাখ্যা রয়েছে। ওবামা প্রশাসনের শেষদিকে এ ধারণা বিদ্যমান ছিল যে এই অঞ্চল থেকে মার্কিন প্রত্যাহার কৌশলগত চিন্তার ফল এবং তা শুধু সাবেক প্রেসিডেন্টের বিবেচনা ও হিসাব-নিকাশের পরিণতি নয়।
ওয়াশিংটন উদ্বিগ্ন যে দায়েশ ও তার শাখা সংগঠনগুলোর পরাজয়ের সাথে এটা প্রতীয়মান যে দৃশ্যপট থেকে আমেরিকার প্রাথমিক প্রত্যাহার হলে যে শূন্যতা সৃষ্টি হবে রাশিয়া তা পূরণ করতে পারবে না। সিরিয়ার গৃহীত পদক্ষেপের মাধ্যমে রাশিয়া দেখিয়েছে যে সে এমন দেশ নয় যে বিশাল দায়িত্ব বহন করতে পারে। রাশিয়া আসাদ সরকারের পতন রোধ করার পর দ্বিতীয় পদক্ষেপ নেয়নি। গত বছরের শেষ থেকে তারা আঙ্কারা যুদ্ধ বিরতি চুক্তি এবং আস্তানা বৈঠকের প্রেক্ষিতে নেতৃত্ব নেয়ার চেষ্টা করেছে, তবে বাস্তব কোনো ফল লাভ করতে পারেনি। বাশার আল আসাদ ও তার সরকারকে রক্ষার জন্য রাশিয়ার সৈন্যরা যখন সিরিয়ায় অবস্থান করছে তখন যুদ্ধ বিরতির ক্ষেত্রে প্রকৃত কোনো অগ্রগতি অর্জিত হয়নি। এ অবস্থায় সিরিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক পক্ষগুলোকে সে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছে যে এই সমস্যাপূর্ণ ও জটিল বিষয়ে এক নেতৃত্বদানকারী ভূমিকা পালনে সে সক্ষম।
দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে যে যুক্তরাষ্ট্র এখনো আন্তর্জাতিক নির্ভরতা হিসেবে বিবেচিত যার সমর্থনে রয়েছে ইরান ব্যতিত ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ভুক্ত ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। রাশিয়া সে নির্ভরতা নয়। এদিকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে ও সিরিয়ায় রাজনৈতিক প্রক্রিয়া সৃষ্টিতে অক্ষমতা মস্কোর বিশ^াসযোগ্যতা প্রতিদিন হ্রাস পাচ্ছে। এটাও মনে হচ্ছে যে তার সকল চেষ্টারই লক্ষ্য আসাদকে রক্ষা করা।
আরো কথা হচ্ছে শুধু সিরিয়া নয়, যে কোনো জটিল আন্তর্জাতিক ব্যাপারই যুক্তরাষ্ট্র যদি তাতে ভূমিকা গ্রহণ না করে বা সমর্থন না দেয় তাহলে তা সফল হয় না। যুক্তরাষ্ট্র এমনকি দর্শকমাত্র হলেও সে তার অনুমোদন নেই এমন যে কোনো আন্তর্জাতিক সমাধান ব্যর্থ করে দিতে সক্ষম। আল-রাক্কার যুদ্ধের দিকে তার মনোযোগ আরোপ এবং সেখানে ভূমিকা পালনকারীদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যদিয়ে গত দু’সপ্তাহে বিষয়টি পরিস্কারভাবে দৃশ্যমান হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের লক্ষ্য হচ্ছে সিরিয়ায় তার অবস্থানের পুনর্বিন্যাস ও প্রায় দু’বছর আগের ওয়াশিংটনের প্রস্তাবিত সেই ধারণায় প্রত্যাবর্তন যে তাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে আইএসের পরাজয়। কৌতূহলের বিষয়, যে সব পক্ষ এর বিরোধিতা করেছিল তারাই এখন এ যুদ্ধে নিজেদের স্থান চিহ্নিত করার জন্য ধাবিত হচ্ছে।
এটা পরিস্কার নয় যে সিরিয়া সরকার আল-রাক্কায় কি ভূমিকা পালন করবে। যদিও সিরিয়া সরকার গত মাসে রাশিয়া ও কুর্দি ডেমোক্র্য্যাটিক পার্টির মিলিশিয়াদের সহায়তায় রাক্কার দিকে অগ্রাভিযানে অগ্রগতি লাভ করেছে, তা সত্তে¡ও এ যুদ্ধে তাদের অংশগ্রহণের সম্ভাবনা ক্ষীণ। এ যুদ্ধে এ পর্যন্ত দু’টি মাত্র পক্ষ অংশগ্রহণের যোগ্যতা লাভ করেছে। তারা হচ্ছে কুর্দিরা ও তুরস্ক সমর্থিত ইউফ্রেটিস শিল্ড-এর যোদ্ধারা।
আসাদ সরকারের বিশ^াস যে রাশিয়া কর্তৃক তার সুরক্ষা আপনাআপনি আন্তর্জাতিক ভাবে তার পুনর্বাসন করবে। এক্ষেত্রে যে প্রশ্ন ওঠে তাহলো যদি যুক্তরাষ্ট্র আল-রাক্কা মুক্ত করা ও দায়েশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিয়োজিত না হয় তাহলে রাশিয়া কেন আসাদ সরকারকে টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করবে? এটা বিশেষ করে প্রাসঙ্গিক এ জন্য যে সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র মস্কোর মত একই পথে নেই। এটাই ব্যাখ্যা করে যে কেন রাশিয়া মসুল ও আল-রাক্কা মুক্ত করার লড়াইয়ে জড়িত নয়। রাশিয়া সিরিয়ায় ইরান ও হেজবুল্লাহর সাথে জোটবদ্ধ, আর তা মার্কিন সামারিক বাহিনীর কাছে গ্রহণযোগ্য নয় যারা এ দু’টি শহর মুক্ত করার লড়াইয়ে প্রধান সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ