Inqilab Logo

সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪, ১০ আষাঢ় ১৪৩১, ১৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

শাস্তি বাড়িয়ে স্ট্যান্ডার্ডস ওজন ও পরিমাপ আইনের অনুমোদন মন্ত্রিসভায়

| প্রকাশের সময় : ১৪ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : অনুমোদনহীন বাটখারা উৎপাদন ও ব্যবহারসহ এবং পণ্যের ওজনে অনিয়মের সাজা বাড়িয়ে নতুন আইন করার প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘স্ট্যান্ডার্ডস ওজন ও পরিমাপ আইন, ২০১৭’ আইনের খসড়া অনুমোদন পায়।
সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের জানান, সুপ্রিম কোর্টের আদেশে ১৯৮২ সালের ‘দ্য স্ট্যান্ডার্ড অব ওয়েট অ্যান্ড মেজার্স অর্ডিন্যান্স’ সংশোধন ও পরিমার্জন করে আন্তর্জাতিকভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে বাংলা ভাষায় আইনটির খসড়া তৈরি করা হয়েছে।
সচিব বলেন, খসড়া আইনে আইন লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র আর্থিক শাস্তির পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে মানদন্ডহীন বাটখারা বা পরিমাপক ব্যবহারের শাস্তি অনূর্ধ্ব ছয় মাসের কারাদন্ডের সঙ্গে অর্থদন্ড তিন হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সরকারের অনুমতিক্রমে সম্পূর্ণ রফতানির উদ্দেশ্যে তৈরি বা উৎপাদিত কোনো বাটখারা বা পরিমাপক ব্যতীত কোনো পরিমাপক তৈরি করার অপরাধে অনূর্ধ্ব এক বছরের কারাদন্ড বা এক লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। আগে জরিমানা ছিল ১০ হাজার টাকা। তবে এই অপরাধে অনূর্ধ্ব এক বছরের কারাদন্ড বহাল থাকছে।
শফিউল আলম বলেন, সরকারের অনুমতিক্রমে সম্পূর্ণ রফতানির উদ্দেশ্যে তৈরি বা উৎপাদিত কোনো ওজন বা পরিমাপক ব্যতীত অন্য কোনো ওজন বা পরিমাপক উৎপাদন করলে উৎপাদনকারীর শাস্তি অনূর্ধ্ব এক বছরের জেল অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা। আগে জরিমানার পরিমাণ ছিল পাঁচ হাজার টাকা।
যদি কোনো ব্যক্তি সত্যতা প্রতিপাদনের জন্য পরিলক্ষিত ত্রুটি সংশোধন ব্যতীত অন্য কোনো উপায়ে রেফারেন্স স্ট্যান্ডার্ড,  সেকেন্ডারি স্ট্যান্ডার্ড বা প্রচলতি মানদন্ড পরিবর্তন বা পরিমিত করে তাহলে সেই ব্যক্তি অনূর্ধ্ব ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন। এর আগে জরিমানা ছিল পাঁচ হাজার টাকা, তবে এই অপরাধে দুই বছরের কারাদন্ড বহাল থাকছে। এছাড়াও প্রস্তাবিত আইনে এশিয়া প্যাসিফিক মেটিওরোলজি প্রোগ্রাম (এপিএমপি), ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন অর্গানাইজেশন (আইএসও) এবং ইন্টারন্যাশনাল ইলেক্ট্রোটেকনিক্যাল কমিশনের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর এ সংক্রান্ত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত হবে বলেও তিনি জানান।
বাংলাদেশ শিল্প প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ আইন অনুমোদন :
করপোরেশনের মূলধনের পরিমাণ নির্ধারণের ক্ষমতা সরকারের হাতে রেখে ‘বাংলাদেশ শিল্প-প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ আইন, ২০১৭’-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
সচিব বলেন, ১৯৭২ সালের প্রেসিডেন্টের ১৬ নম্বরের আদেশের মাধ্যমে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয়করণ করা হয়। পরবর্তী সময়ে আরো কিছু সংশোধনী আনা হয়। সামরিক শাসনামলের হওয়ায় আইনটি পরিমার্জনসহ বাংলায় করে আনা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, জাতীয়করণ করা শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পেট্রোবাংলা আগে এর মধ্যে ছিল। এটি বাদ দেয়া হয়েছে, কারণ পেট্রোবাংলা জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের আওতায় চলে গেছে। পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন যে করপোরেশনগুলো আছে তাদের সঙ্গে আলাপ করে তালিকাটা শুদ্ধ এবং সংখ্যাগতভাবে সঠিকতা যাচাই করে এখানে আনা হয়েছে। ভুল-ত্রæটি যা ছিল ঠিক করে  দেয়া হয়েছে।
শফিউল আলম বলেন, করপোরেশনের অনুমোদিত মূলধন কি পরিমাণ হবে সেই ক্ষমতাটা সরকারের হাতে রাখা হয়েছে।
আগের আইন থেকে অনেকগুলো জিনিস বাদ দিয়ে খসড়াটি  তৈরি করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, জাতীয়করণের কারণে শিল্প প্রতিষ্ঠান সরকারের কাছে ন্যস্ত হয়ে যাওয়ায় আইন থেকে ন্যস্ত করার বিধান বাদ দেয়া হয়েছে।  কোম্পানি আইনের প্রযোজ্যতা নতুনভাবে আইনে সংযোজন করা হয়েছে। আগের আইন থেকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের অংশটিও বাদ দেয়া হয়েছে।
আগের আইনের তফসিলে জাতীয়করণ করা আড়াই শ’র বেশি শিল্প প্রতিষ্ঠানের তালিকা ছিল জানিয়ে শফিউল আলম বলেন,  কেবল সরকারের বর্তমানের শিল্প প্রতিষ্ঠানের নাম প্রস্তাবিত আইনের তফসিলে রাখা হয়েছে। যেগুলো বিরাষ্ট্রীয়করণ ও বিক্রি হয়ে গেছে সেগুলো এর মধ্যে রাখা হয়নি। নতুন আইনের তফসিলে জাতীয়করণ করা ১০৯টি শিল্প প্রতিষ্ঠানের তালিকা রয়েছে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
বিএডিসি আইন অনুমোদন
মন্ত্রিসভা ‘বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন আইন, ২০১৭’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) আইনটি ১৯৬১ সালের জানিয়ে তিনি বলেন, এটি ইংরেজিতে ছিল, এখন বাংলায় অনুবাদ করে নতুনভাবে আনা হয়েছে। এখানে তেমন কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। তবে অপ্রয়োজনীয় কিছু ধারা বাদ দেয়া হয়েছে।
মিজারুল কায়েসের মৃত্যুতে শোক
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ মিজারুল কায়েস এবং আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ছোট ভাই আরিফুল হক রনির মৃত্যুতে মন্ত্রিসভায় শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ শোক প্রস্তাব করা হয়। ব্রাজিলে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মিজারুল গত ১১ মার্চ দেশটির একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। শ্বাসকষ্টজনিত রোগের কারণে তিনি সেখানে ভর্তি হন।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, মিজারুল কায়েসের উদ্দেশে মন্ত্রিসভা  শোক প্রস্তাব গ্রহণ করে এবং তার শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়েছে।
এদিকে আরিফুল হকের মৃত্যুতে মন্ত্রিসভায় শোক প্রস্তাব করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার প্রধান আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো: সিরাজুল হকের দ্বিতীয় ছেলে আরিফুল হক। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ইঞ্জিনিয়ারিং পেশায় নিযুক্ত ছিলেন। সরকারের বড় বড় প্রকল্পে ইন্টারনেটে বা অনলাইনে কনসালটেন্সি সার্ভিস দিতেন, অনেকটা ফ্রি অব চার্জ। ৫৩ বছর বয়সী আরিফুল ১১ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের ডালাস শহরের সাউথ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দীর্ঘদিন তিনি হৃদরোগে ভুগছিলেন। ডালাসে স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন। আজ মঙ্গলবার সেখানকার মুসলিম কমিউনিটি কবরস্থানে নামাজে জানাজা শেষে তাকে সমাহিত করা হবে বলে জানিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে আইনমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ