Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯ আশ্বিন ১৪৩১, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

নরসিংদী জজ কোর্ট চত্বর থেকে বাদী অপহরণের চেষ্টা

মসজিদের মুসল্লিদের হস্তক্ষেপে ব্যর্থ

| প্রকাশের সময় : ১৪ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার, নরসিংদী থেকে : মোশারফ হোসেন শিপলু নামে মামলার এক বাদীকে ভারতীয় অ্যাকশন মুভির কায়দায় আদালত চত্বর থেকে অপহরণ করতে গিয়ে মসজিদের মুসল্লিদের বাধার মুখে ব্যর্থ হয়েছে একদল সশস্ত্র অপহরণকারী। তবে ব্যাপক মারধর ও ধস্তাধস্তির কারণে মারাত্মক আহত হয়েছেন বাদী শিপলু ও তার এক সহযোগী। প্রায় ১৫ মিনিটব্যাপী অপহরণের জন্য এই ধস্তাধস্তির ঘটনা সিনেমার মতই প্রত্যক্ষ করেছে শত শত মানুষ। পরে মসজিদের মুসল্লিরা এসে মাইক্রোবাসটি আটক করে পুলিশের নিকট সোর্পদ করেছেন। সুযোগ বুঝে অপহরণকারীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেছে। গতকাল সোমবার দুপুরে প্রকাশ্য দিবালোকে নরসিংদী জজ কোর্ট ও কালেক্টরেট ভবন চত্বরে এই ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে। আহত শিপলু ও তার সহযোগীকে রক্তাক্ত অবস্থায় নরসিংদী জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এই ঘটনার পর আদালত এলাকায় উপস্থিত শত শত মানুষের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে অন্যান্য অফিস আদালত ও রাস্তা থেকে হাজারো মানুষ জড়ো হয় ঘটনাস্থলে। সচেতন লোকজন আফসোস করে বলতে থাকেনÑ আদালত প্রাঙ্গণেই যদি সন্ত্রাসীরা এই ধরনের ঘটনা ঘটানোর সাহস পায়, তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার আর জায়গা কোথায় থাকবে।
মামলার বাদী শিপলুর আত্মীয়-স্বজন ঘটনা সম্পর্কে জানিয়েছেন, বছরখানেক পূর্বে নরসিংদী সদর উপজেলার দক্ষিণ পুরানপাড়া গ্রামে বকুল উদ্দিন ভূইয়ার পুত্র মোশারফ হোসেন শিপলু একটি ড্রেজার মেশিন ক্রয় করে বালু উত্তোলনের ব্যবসায় নিয়োজিত হন। এই ড্রেজারটি ক্রয়ের সময় নাগরিয়াকান্দী মহল্লার মৃত শফিকুল ইসলামের পুত্র শহিদুল ইসলামের নিকট থেকে এক লাখ টাকা ধার নেন। ধারের শর্ত ছিল বালু বিক্রি করে টাকা পরিশোধ করে দিবেন। কিন্তু শিপলু সঠিক সময়ে টাকা পরিশোধ করতে পারেন নি। গত বর্ষার সময় ড্রেজারটি আড়িয়ালখাঁ নদে বালু উত্তোলনকালে শহীদুল, শিপলুকে ডেকে নিয়ে শহরের ইসলাম প্লাজা নামে একটি মার্কেটের ভিতর আটকে রেখে তার উপর শারীরিক নির্যাতন চালায়। পরে সে ঘটনাক্রমে মুক্তি লাভ করে। এর কিছুদিন পর শহীদুলার নেতৃত্বে ৪-৫টি স্পিডবোট নিয়ে ২০-২৫ জনের একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী আড়িয়ালখাঁ নদে গিয়ে ফাঁকা গুলিবর্ষণ করতে থাকে। এতে ড্রেজার চালক ও ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বরত লোকজন ড্রেজার ছেড়ে পালিয়ে যায়। এসময় আড়িয়ালখাঁ নদ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ব্যাপক আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। লোকজন আড়িয়ালখাঁ সেতুর উপর উঠে এ দৃশ্য দেখার সময় সন্ত্রাসীরা পুনরায় গুলিবর্ষণ করলে লোকজন সেতু ছেড়ে পালিয়ে যায়। পরে সন্ত্রাসীরা ড্রেজারটি চালিয়ে বাউলবাড়ীর ঘাটের দিকে নিয়ে যায়। এই ঘটনার পর শিপলু,  শহীদুলসহ ৭-৮ জনকে আসামি করে আদালতে একটি মামলা করেন। রায়পুরা আমলি আদালতের মামলা নং সিআর ৩৩৯/১৬। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি তদন্ত করার জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব অর্পণ করেন। পিবিআই মামলাটির উপর তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার পর গতকাল সোমবার শহীদুলসহ অন্যান্য আসামিরা আদালতে হাজিরা দিতে যায়। এই হাজিরার পাশাপাশি তারা ভারতীয় অ্যাকশন মুভির স্টাইলে মামলার বাদী শিপলুকে অপহরণ করার জন্য পূর্ব পরিকল্পিতভাবে একটি মাইক্রোবাস নিয়ে আদালত চত্বরে ওঁৎ পেতে থাকে। এতে নেতৃত্ব দেয় শহীদুলের বড় ভাই সাইফুল ইসলাম সোহেল। সোহেল একটি প্রাইভেটকার নিয়ে আদালত প্রাঙ্গণের অদূরে বসে থাকে আর ২০-২৫ জনের একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী আদালতের বহিরাঙ্গন থেকে কালেক্টরেট ভবনের মূল ফটক পর্যন্ত বিভিন্নস্থানে বিভক্ত হয়ে কমান্ডো কায়দায় অবস্থান নেয়। মাইক্রোবাসটি রাখা হয় আদালতের গেটের সামনে। এ সময় অবস্থা টের পেয়ে বাদী শিপলু মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তার বাড়ির লোকজনদেরকে জানায় যে, অবস্থা খুবই খারাপ, আসামিরা তাকে মারধর বা হাইজ্যাক করতে পারে। সে আদালত থেকে বাইরে বেরোতে সাহস পাচ্ছে না। এই খবর পাবার পর শিপলুর বাড়ি থেকে ৫-৭ জন লোক আদালতের গেইটে গিয়ে জমায়েত হয়। এরপর শিপলু সাহস করে আদালতের গেইট থেকে বেরিয়ে কয়েক কদম সামনে আসার সাথে সাথেই ৫-৬ জনের একটি অস্ত্রধারী দল তাকে ধরে মারধর শুরু করে। এতে শিপলুও তার প্রাণ বাঁচানোর জন্য তাদের সাথে ধস্তাধস্তিতে লিপ্ত হন। এ সময় সন্ত্রাসীরা তাকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে অপেক্ষমান মাইক্রোবাসটিতে উঠানোর চেষ্টা করে। সন্ত্রাসীরা তাকে ধাক্কিয়ে মাইক্রোবাসের ভিতরে ঢুকায় আবার শিপলু জোরপূর্বক সেখান থেকে বাইরে বেরিয়ে আসেন। এ সময় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মহড়া দিতে থাকে।
এ অবস্থা চলার সময় শত শত মানুষ আদালত প্রাঙ্গণে জড়ো হয়ে এই দৃশ্য প্রত্যক্ষ করতে থাকে। এ সময় কোর্ট মসজিদে মুসল্লিরা যোহরের সুন্নত নামাজ পড়ছিলেন। হৈ-হুল্লোড় শুনে মুসল্লিরা মসজিদ থেকে উঁকি দিয়ে এই ঘটনা দেখেন। তারা দেখতে পান যে, একজন যুবককে সন্ত্রাসীরা মারধর করছে ও জোরপূর্বক মাইক্রোবাসে উঠানোর চেষ্টা করছে। যুবকটি মারাত্মকভাবে আহত হবার পরও শত শত মানুষ দাঁড়িয়ে দেখছে, কিন্তু অস্ত্রের ভয়ে কেউ তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসছে না। এই অবস্থায় ২-৩ জন মুসল্লি এগিয়ে গিয়ে মাইক্রোবাসটির সামনে দাঁড়িয়ে যুবকটিকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত কয়েকজন পুলিশের মধ্যে একজন পুলিশ দৌড়ে গিয়ে কালেক্টরেট ভবনের মূল ফটকটি বন্ধ করে দেন। এই অবস্থায় লোকজন গর্জে উঠে চিৎকার করতে থাকলে অপহরণকারীরা অবস্থা বেগতিক দেখে জনগণের সাথে মিশে গিয়ে সুযোগ বুঝে পালিয়ে যায়। এই ফাঁকে শহীদুলের বড় ভাই সাইফুল ইসলাম সোহেল নিজেকে চেম্বার নেতা পরিচয় দিয়ে গাড়ি নিয়ে গেইট খুলে দ্রæত কেটে পড়েন।
উপস্থিত জনগণ মাইক্রোবাসটি আটক করে রাখে। পরে খবর পেয়ে নরসিংদী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মাইক্রোবাসটি থানায় নিয়ে যায়। মারাত্মক রক্তাক্ত আহত অবস্থায় শিপলু ও তার সহযোগীকে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।  এ ব্যাপারে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি। শিপলুর বড় ভাই বাবলু জানিয়েছে, থানায় মামলা করতে যাওয়ার পর পুলিশ মামলা নিচ্ছে না। তবে পুলিশ জানিয়েছে দু’পক্ষই থানায় মামলা নিয়ে এসেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ