Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আবারও মোদির ‘ওয়ান ম্যান শো’

| প্রকাশের সময় : ১৩ মার্চ, ২০১৭, ১২:৪০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : ভারতের বিধানসভা নির্বাচনে পাঁচ রাজ্যের মধ্যে দু’টিতে জয় পেয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি। এর মধ্যে ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য উত্তর প্রদেশও। গত সাধারণ নির্বাচনের মতোই এই বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মোদি। পাঞ্জাব ছাড়া বাকি চার রাজ্যেই বিজেপির অবস্থান শক্ত হয়েছে। অপরদিকে, প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী দল কংগ্রেস প্রতিটি রাজ্যেই মাঠ হারিয়েছে। মোদির জন্য এই বিধানসভা নির্বাচনকে ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের প্রাক-পরীক্ষা বলেই মনে করা হচ্ছিল। আর তাতে মোদি অনেকটাই এগিয়ে গেলেন বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। অন্যদিকে পাঞ্জাবে জয়লাভের পরও খুব একটা আলোচনায় নেই কংগ্রেস।  
২০১৯ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে উত্তর প্রদেশে শক্ত অবস্থান দরকার ছিল মোদির। তাই এবার উত্তর প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নেয় বিজেপি। কিন্তু গত নভেম্বরে কালো টাকা নিয়ন্ত্রণের নামে ৫০০ ও ১০০০ রুপির ব্যাংকনোট বাতিলের সিদ্ধান্তে বেশ বিতর্কের মুখে পড়তে হয় মোদিকে। উত্তর প্রদেশের হতদারিদ্র্য মানুষকে যে কষ্ট ভোগ করতে হয়েছে, তার প্রভাব নির্বাচনে পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছিল। তাই বিধানসভার ফলাফল মোদি ও তার দলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
নোট বাতিলের সিদ্ধান্তটি নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে বলে আভাস দিয়েছিলেন বিশ্লেষকরাও। নির্বাচনের আগেই দিল্লি অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন-এর ফেলো অশোক মালিক জানান, ‘ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্যটিতে সরকারের জনসমর্থন যাচাই হবে নোট বাতিলের নীতি সেখানে কতোটা প্রভাব ফেলেছে, তার ভিত্তিতে।’
চ্যালেঞ্জে জয়
বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যায়, নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত তেমন কোনও প্রভাব ফেলতে পারেনি। ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে মোদির পথ অনেকটাই পরিষ্কার বলে মনে করা হচ্ছে। ভারতের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পার্লামেন্ট সদস্য সম্বলিত নির্বাচনি এলাকা এখন তার নিয়ন্ত্রণেই থাকছে।
উত্তর প্রদেশে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা কেশব প্রসাদ মৌড়া বলেন, ‘আমরা খুবই চিন্তিত ছিলাম প্রধানমন্ত্রীকে এতটা সংশ্লিষ্ট করা ঠিক হবে কিনা। তবে মোদির কারণেই শেষ পর্যন্ত বিশাল জয় নিশ্চিত করেছে বিজেপি।’
৪০৩ সিটের মধ্যে ৩১২টি সিট পেয়েছে মোদির দল। ১৯৭৭ সালের পর এটাই বিধানসভা নির্বাচনে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়। ভারতীয় রাজনীতিতে উত্তর প্রদেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ভারতের সবচেয়ে জনবহুল এই রাজ্যে প্রায় ২০ কোটি মানুষের আবাস। প্রতি ছয়জন ভারতীয়ের একজন উত্তর প্রদেশ থেকে আসা।
ভারতের সাধারণ নির্বাচনেও উত্তর প্রদেশে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রায় এমন ফলাফলই ছিল। আর পরিসংখ্যানে দেখা যায়, উত্তর প্রদেশের সমর্থন পেলেই কেন্দ্রে নির্বাচনে জয় পাওয়া সম্ভব। এক সাক্ষাৎকারে মৌড়া বলেন, ‘আসলে মোদির জাদুতেই প্রতিপক্ষ হেরে গেছে’।
মোদির নির্দেশনায় উত্তর প্রদেশে বিজেপির জয়
শত ব্যস্ততা সত্তে¡ও মোদি এই নির্বাচনকে দিয়েছেন সর্বোচ্চ গুরুত্ব। নির্বাচনকালে পুরো তিনদিন অন্য সব কাজ বাদ দিয়ে তিনি বারানসি ছিলেন। উত্তরপ্রদেশে এবার মোট ২৪টি জনসভা করেছেন তিনি। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মিলন বৈষ্ণব জানান, এই ভোট অনেককিছুই পরিষ্কার করে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘ভোটাররা বিজেপির পলিসি দিয়ে অনুপ্রাণিত হোক বা না হোক, নরেন্দ্র মোদি যেকোনো পদক্ষেপ নিতে পারেন এই বিষয়ে বিশ্বাস ছিল তাদের।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে ভারতে সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নরেন্দ্র মোদি। তার ব্যক্তিত্ব ও গ্রহণযোগ্যতা এখন সবচেয়ে বেশি। বিরোধী দল তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করলেও, তা ইতিবাচক ফলাফল আনতে পারেনি। উত্তর প্রদেশে জয়ের জন্য মোদি অবশ্য তার পুরোনো কৌশলই ব্যবহার করেছেন। ধর্মীয় অনুভূতি ব্যবহার করেই তিনি এই অঞ্চলের ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করেছেন। বিজেপির প্রেসিডেন্ট অমিত শাহও তাকে দিয়েছেন পূর্ণ সমর্থন।
সমালোচকদের দাবি, মোদি ও অমিত শাহ হিন্দু ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করতে সা¤প্রদায়িক কথা বলেছেন। মসজিদ এলাকায় একটি হিন্দু মন্দির প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছেন অমিত শাহ। মোদিও ভোটারদের সমর্থন নিতে এমন সা¤প্রদায়িক মন্তব্য করেছেন। আবার মুসলিম নারীদের ভোট পাওয়ারও চেষ্টা করেছেন মোদি। তিন তালাকের বিরুদ্ধে তার শক্ত অবস্থানের কথা উল্লেখ করে ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করেছেন। লাক্ষেèৗয়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষক আরকে মিশ্র বলেন, ‘ভোটের ফলাফল থেকে এটা নিশ্চিত যে, মুসলিম ও নিম্নবর্ণের হিন্দুরাও বিজেপিকে ভোট দিয়েছে।’
উত্তর প্রদেশে ধরাশায়ী কংগ্রেস
মোদির বিজেপি এমন কিছু রাজ্যের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে যেখানে অর্ধেকের বেশি ভারতীয়ের বসবাস। অন্যদিকে স্বাধীনতার পর ৭০ বছর ধরে ভারত চালানো কংগ্রেসের অধীনে রয়েছে মাত্র ৮ শতাংশ জনগণ। কংগ্রেসকে নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক শেখর গুপ্ত বলেন, ‘ভারতের কোনও রাজ্যই এখন গান্ধী পরিবারকে ভোট দেবে না।’ পাঞ্জাবে জয়লাভের পরও আলোচনায় নেই কংগ্রেস। সেখানেও উত্থান ঘটছে আম আদমি পার্টির (এএপি)।
স্বরাজ ইন্ডিয়া পার্টির প্রতিষ্ঠাতা যোগেন্দ্র যাদব মনে করেন, উত্তর প্রদেশে মোদির এমন জয়ের পর বিরোধী দলগুলো একজোট বাধবে। ‘মোদি-বিরোধী জোট’ তৈরি করেই হয়ত ২০১৯ নির্বাচনে তার মোকাবিলা করতে হবে। তবে এটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্তও হতে পারে আশঙ্কা তার।
ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হবে তরুণ প্রজন্মের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা। এটাই মোদি সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
দিল্লি ভিত্তিক সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের অর্থনীতিবিদ রাজিব কুমার বলেন, ‘কর্মসংস্থানই সবচেয়ে বড় ঝুঁকি। এখানেই নরেন্দ্র মোদিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।’
মোদির এই সফলতা ১৩০ কোটি জনসংখ্যার দেশ চালানোর জন্য তার ওপর চাপ হয়ে যাবে বলেও কোনো কোনো বিশ্লেষক মনে করছেন। মোদির বায়োগ্রাফার ও সাংবাদিক নিলাঞ্জন মুখার্জি বলেন, ‘তাকে (মোদি) এখন সংস্কারক ও জনপ্রিয় নেতা এই দুইয়ের মাঝে সমন্বয় করে চলতে হবে।’ সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ