পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : মিয়ানমারের সৈন্যরা যখন গত অক্টোবরে রাখাইন রাজ্যে জঙ্গিদের তালাশ করছিল, তার ফল সেখানকার সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের জন্য ডেকে এনেছিল বড়ধরনের বিপর্যয়। গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল, মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল, নারীদের ধর্ষণ করা হয়েছিল। বিবিসির সংবাদদাতা জোনা ফিশারের প্রতিবেদন এখানে অনুবাদ করে দেয়া হল:
‘রাখাইনে ধর্ষণের শিকার এক মহিলা যখন ধর্ষণের অভিযোগ করেন, তখন দেশটির নেত্রী অং সান সূচির দফতর থেকে বলা হয়েছিল তিনি মিথ্যা বলছেন এবং প্রতিশোধপরায়ণ সৈন্যরা তাকে হেনস্থা করেছিল।
মাটিতে দুপা মুড়ে বসে ২৫ বছরের জামালিদা বেগম আমাকে বলছিলেন উত্তর পশ্চিম মিয়ানমারের পিয়াউং পায়েক গ্রামে তার স্বামীকে সৈন্যরা গুলি করে মারার পরের দিনগুলোতে কী ঘটেছিল।
জামালিদা তার দুই সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে যান এবং দূরে দাঁড়িয়ে দেখেন সেনাবাহিনী গ্রামের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে। উপগ্রহে তোলা ছবিতে দেখা যায় অন্তত ৮৫টি বাড়ি পুড়ে গেছে।
পাঁচদিন পরে কয়েকজন প্রতিবেশীকে নিয়ে তিনি ফিরে আসেন এবং দেখেন তার বাড়ি ও জিনিসপত্র সব নষ্ট হয়ে গেছে। যে অল্প কটি বাড়ি অক্ষত ছিল সেখানে তারা একসঙ্গে আশ্রয় নেন। কিন্তু পরের দিন ভোরে সৈন্যরা ফিরে আসে।
‘ওরা ৩০ জন নারীকে বেছে নেয়। অর্ধেকের বয়স ১২ থেকে ১৫র মধ্যে,’ বলেন জামালিদা। সৈন্যরা তাদের গ্রামের স্কুলে নিয়ে যায়।
‘এরপর ওই ৩০ জনের মধ্যে থেকে তারা চারজনকে বেছে নেয়,’ বলেন জামালিদা।
‘আমি আর তিনজন অল্পবয়েসী মেয়ে। আমাদের আলাদা করে দেয়া হয়। সৈন্যরা আমাকে স্কুলের পূব দিকে পুকুরধারে নিয়ে যায়। অন্য সাতজন সৈন্য বাকি তিনজনকে স্কুলের দক্ষিণ দিকে পাহাড়ে নিয়ে যায়’।
‘ওরা চিৎকার করে আমাকে আমার শার্ট আর থামি (লুঙ্গি জাতীয় পোশাক) খুলতে বলে। আমি রাজি না হলে আমাকে মারতে শুরু করে,আমার জামা ধরে টেনে আমাকে মাটিতে ঠেলে ফেলে দেয়। তিনজন সৈন্য আমাকে এক ঘণ্টা ধরে ধর্ষণ ও অত্যাচার করে। আমাদের শরীরের নিচের অংশ রক্তে ভেসে যাচ্ছিল। আমার পায়ের পেশীতে টান ধরেছিল। ওরা আমার চোখে ঘুষি মেরে বলে আমি ওদের দিকে তাকিয়ে আছি। আমার চোখে মারের চোটে কয়লার আগুনের মত লাল হয়ে গিয়েছিল। আমাকে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে রেখে ওরা জিপে করে চলে যায়’।
গত বছর ৯ অক্টোবর রোহিঙ্গা জঙ্গিরা মিয়ানমারের তিনটি পুলিশ চৌকিতে আক্রমণ চালানোর পর সৈন্যদের উত্তর রাখাইনে ‘নির্মূল অভিযানে’ পাঠানো হয়। ওই আক্রমণে নয়জন পুলিশ সদস্য মারা যায়। এরপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপক অভিযোগ ওঠে, যার মধ্যে ছিল ধর্ষণের বহু অভিযোগ। মিয়ানমারে মানবাধিকার নিয়ে দীর্ঘদিন আন্দোলন চালিয়ে আসা দেশটির নেত্রী অং সান সূচি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং জোর দিয়ে বলেন সৈন্যরা আইনের মধ্যে থেকেই কাজ করছে। একই সঙ্গে নিরপেক্ষ সাংবাদিক বা পর্যবেক্ষকদের সেখানে ঢুকতে বাধা দেয়া হয়। তবে তীব্র প্রতিবাদের মুখে একটি তদন্তকারী দল গঠন করেন তিনি এবং ১১ ডিসেম্বর তারা পিয়াউং পায়েক
গ্রামে ঢোকে।
ওই তদন্তকারী দলের একমাত্র মহিলা সদস্য ড: থে থে জিন, যিনি মিয়ানমারের মহিলা বিষয়ক ফেডারেশনের চেয়ারম্যান তার চাপে জামালিদা প্রথম দিকে রাজি না হলেও পরে কথা বলতে রাজি হন।
‘তিনি বলেন, আমরা তোমার কোনো ক্ষতি করব না, ধর্ষিতা ও নির্যাতিতা নারীদের নিয়ে এসো,’ জানান জামালিদা। ‘আমি তাদের সবকিছু বলি, ওরা রেকর্ড করে’।
জামালিদার সঙ্গে তাদের কথোপকথন তদন্তকারী দল ভিডিও করে এবং ওই ছবির সাত মিনিট অংশ টেলিভিশনে দেখানো হয়। অবিশ্বাস্য ছিল ওই ভিডিওচিত্র। জামালিদাকে যেভাবে অনুবাদক শাসাচ্ছিল শুধু সেটার কারণেই নয়, বার্মার রাষ্ট্রীয় স¤প্রচার মাধ্যম জামালিদা তার ভাষায় তদন্তকারীদের কী বলছে তা অনুবাদও করছিল না। তার বক্তব্য পুরো অনুবাদ করার পর এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে সেখানে যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল তার জোরাল তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। ওই ছবিতে জামালিদা বলছে, সৈন্যরা তিনটি মেয়েকে জঙ্গলের ভেতর নিয়ে যায়।
অনুবাদক বলে, ‘ওই মেয়েদের যে ধর্ষণ করা হয়েছে কীনা তা কি তুমি দেখেছ’?
‘দেখিনি,’ ছিল জামালিদার উত্তর।
‘তাহলে সেটা সত্যি নয়,’ অনুবাদক চিৎকার করে ওঠে।
‘হ্যাঁ-ও বলা যায়, না-ও বলা যায়,’ বলে জামালিদা। ‘ওদের শরীরের এই অংশ দিয়ে রক্ত ঝরছিল,’ জামালিদা তার দুই পায়ের মাঝের অংশ দেখিয়ে বলে। ‘সেটা বলো না, সেটা বলো না, বলো না ওদের রক্তপাত হচ্ছিল, সোজা বলো ওদের ধর্ষণ করা হয়েছে তুমি দেখেছ কীনা?’ অনুবাদক উত্তর দেয়।
এরপর অনুবাদক তদন্তকারীদের বলে, জামালিদা বলছে মহিলাদের ধর্ষিতা হতে সে দেখেনি। জামালিদাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করা হয়, তাকে ধর্ষণ করা হয়েছিল কীনা। সে তদন্তকারীদের বলে, সৈন্যরা তাকে নিয়ে গিয়ে তার কাপড়চোপড় খুলে ফেলে তাকে নির্যাতন করেছে। ‘সরাসরি ধর্ষণ করেনি’।
অনুবাদক বলে, ‘ওকে ধর্ষণ করা হয়নি’।
পরিস্থিতি এরপর জটিল হয়ে ওঠে। দশদিন পর আবার জামালিদার ছবি তোলা হয়। এবার পিয়াউং পায়েকের সরকারের পছন্দের কিছু সাংবাদিক ছবি তুলতে আসে।
জামালিদাকে ডেকে আনা হয়। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করে জামালিদা। কেবল সেইবার সে বলে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে।
তার দু’বারের কথার গরমিল সঙ্গে সঙ্গে তুলে ধরা হয় অং সান সূচির দফতর থেকে। তার দফতর থেকে সেই সময় জোরেসোরে দাবি করা হচ্ছিল রাখাইনে নৃশংসতার খবরগুলো সব ‘ভুয়া’। জামালিদাকে মিয়ানমারের টেলিভিশনে দেখানো হয় এবং তাকে মিথ্যাবাদী হিসাবে তুলে ধরা হয়। অং সান সূচির ফেসবুক পাতায় বড় ছবির ব্যানারে তার কাহিনীকে মিথ্যাচারের বড় উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরে হয়।
তাহলে সত্যটা কী?
আমি জামালিদার সঙ্গে কথা বলেছি। তার জবানবন্দি বিস্তারিত এবং বিশ্বাসযোগ্য। সাংবাদিক ও তদন্তকারীদের সে যা বলেছে তার মধ্যে মিল রয়েছে- শুধুমাত্র ওই একটি তথ্য ছাড়া। আমার মনে হয়েছে সে সত্যি বলছে। আমি তাকে ওই গরমিল বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম। সে জোর দিয়ে বলেছে সরকারি তদন্তকারীকে সে ধর্ষণের কথাই বলেছিল। কিন্তু একজন অনুবাদক চিৎকার করছিল ও তাকে মারধোরের হুমকি দিচ্ছিল।
‘ওরা সবাইকে বলেছে আমাদের ধর্ষণ করা হয়নি, নির্যাতন করা হয়নি। আমাদের দেশে ন্যায়বিচার বলে কিছু নেই,’ বলেছেন জামালিদা।
থে থে জিন যে বলেছিলেন মুখ খোলার জন্য কাউকে শাস্তি দেয়া হবে না তা ছিল শুধু ফাঁকা বুলি। সৈন্যরা জামালিদাকে খুঁজতে এসেছিল যখন, তখন যে ভিন গ্রামে পালিয়ে গিয়েছিল। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার পর জামালিদা বুঝতে পারে সেখানেও সে নিরাপদ নয়।
‘সৈন্যরা সব মহিলাদের উঠোনে জড়ো করেছিল আমাকে খুঁজে বের করার জন্য, আমার ছবি দেখাচ্ছিল সবাইকে। ভয়ে আমি জঙ্গলে লুকিয়েছিলাম,’ জামালিদা জানায়।
দিনের পর দিন পালিয়ে বেড়ানো সহ্য করতে না পেরে জামালিদা নাফ নদী পার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে যায়। আমি থেন থেনে জিনের সঙ্গেও কথা বলেছি। তিনি বলেছিলেন জামালিদার সঙ্গে কথা বলার কথা তার মনে নেই। সৈন্যরা হয়ত তাকে খুঁজছিল, কিন্তু সেটা তাকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য হয়রানি করার জন্য নয়।”
-বিবিসির সংবাদদাতা জোনা ফিশারের প্রতিবেদন। জামালিদা বেগমের সঙ্গে বাংলাদেশে কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে কথা বলেছেন জোনা ফিশার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।