পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ফারুক হোসাইন : ১৯৭১ সালের মার্চ মাস পুরো বাংলা ছিল আন্দোলনে উত্তাল। ৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের পর থেকে স্বাধিকার ও স্বাধীনতার আশা সঞ্চারিত হয় প্রতিটি মানুষের মধ্যে। একই সাথে তাদের মধ্যে শঙ্কাও দেখা দেয় পাকিস্তান সরকারের আচরণের কারণে। তবে ২৬ মার্চের গণহত্যার আগে কোন বাঙালি কল্পনাই করতে পারেননি। স্বাধীনতার জন্য তাদের এত চড়ামূল্য দিতে হবে। সেই উত্তাল মার্চের আজ ১৩তম দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনটি ছিল শনিবার। স্বাধিকারের দাবিতে বঙ্গবন্ধুর ডাকে বাংলায় যে অসহযোগ আন্দোলন চলছিল। এদিনও তা অব্যাহত ছিল। যথারীতি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে সরকারি, আধাসরকারি অফিস-আদালত কর্মচারীদের অনুপস্থিতির জন্য বন্ধ থাকে আজও। বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহ বেঁধে দেয়া নির্দিষ্ট সময়ানুযায়ী স্বাভাবিকভাবে তাদের কাজ চালিয়ে যায়। স্বাধিকার আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে শোক এবং গণহত্যার বিরুদ্ধে ক্ষোভের বহির্প্রকাশে আজও সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠান, বাসভবন এবং যানবাহনে কালো পতাকা উত্তোলিত থাকে। এদিন সিএ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, নৌ-পরিবহন, ডাক, পাটকল এবং সুতাকলের শ্রমিক সংগঠনসমূহ এবং ছাত্র ইউনিয়ন বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করে। স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ নেতৃবৃন্দ ইকবাল হল (বর্তমানে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) প্রাঙ্গণে পরিষদের সকল আঞ্চলিক শাখার আহŸায়ক, সম্পাদক ও সদস্যদের সভা আহŸান করে। সন্ধ্যায় ছাত্রলীগ লালবাগ আঞ্চলিক শাখার সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্বাধীন বাংলাদেশের দাবিতে নিউজ পেপার প্রেস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের একটি বিশাল মিছিল নগরীর প্রধান সড়কসমূহ প্রদক্ষিণ শেষে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে এসে সমবেত হয়। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিস্ফোরণের দিকে ধাবমান এ উপলব্ধি থেকে এই দিনে বিশেষ বিমানযোগে ঢাকা ত্যাগ করেন ঢাকার জাতিসংঘ ও পশ্চিম জার্মানি দূতাবাসের কর্মচারী, তাদের পরিবার এবং ইতালি, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডার ২৬৫ জননাগরিক।
এদিকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে প্রতিনিধিত্বকারী সংখ্যালঘু দলগুলোর এক যৌথ সভা আজ লাহোরে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব গৃহীত হয়। সভার সিদ্ধান্তে বলা হয় যে, বর্তমান সঙ্কটের মূল কারণ হচ্ছে পারস্পরিক অবিশ্বাস। আমরা মনে করি যে, অবিলম্বে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ঢাকায় গিয়ে দ্রæত সকল প্রকার অবিশ্বাস, আস্থাহীনতা ও মতদ্বৈততা দূর করে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে এনে আন্তরিকভাবে ও মুক্ত মনে শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাত করে ৪টি শর্ত মেনে নিয়ে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে আলোচনা শুরু করবে এবং অবিলম্বে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতার নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করার যথাযথ পরিবেশ তৈরি করবে।
এদিকে সামরিক সরকার সর্বব্যাপী রাজনৈতিক গণমতকে উপেক্ষা করে নয়া এক সামরিক ফরমান জারি করে। সামরিক আদেশে বলা হয়, প্রতিরক্ষা খাতের বেতনভুক বেসামরিক কর্মচারীদের আগামী ১৫ মার্চ সকালের মধ্যে কাজে যোগদানের নির্দেশ প্রদান করা হচ্ছে। যারা উক্ত তারিখের মধ্যে কাজে যোগদানে ব্যর্থ হবেন, তাদের ছাঁটাই করা হবে এবং পলাতক হিসেবে তাদের সামরিক আদালতে বিচার করাও হতে পারে। দেশরক্ষা বিভাগের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমনÑ এমইএস, কম্বাইন্ড ওয়ার্কশপ, অস্ত্রাগার, সিএমএ, এলএও, সিএসডি, বিদ্যুত ও পানি সরবরাহ এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থার সকল বেসামরিক কর্মচারী, যারা প্রতিরক্ষা খাত হতে বেতন পেয়ে থাকেন তাদের ১৫ মার্চ সকাল ১০টার মধ্যে স্ব স্ব বিভাগের নিকট কাজে যোগদানের ব্যাপারে রিপোর্ট করতে হবে। যদি কেউ উক্ত সময়ের মধ্যে কাজে যোগদানে ব্যর্থ হন তবে তাকে চাকরিচ্যুত করা হবে এবং পলাতক হিসেবে সামরিক আদালতে বিচার করে সামরিক আইনের ২৫নং বিধি মোতাবেক সর্বোচ্চ ১০ বছর সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হবে। জেনারেল ইয়াহিয়ার নির্দেশে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসকের জারিকৃত এ ফরমানের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু মুজিব বলেন, সামরিক আইনের আর একটি অধ্যাদেশ জারি হয়েছে জানতে পেরে আমি বিস্মিত হয়েছি। আজ যখন সামরিক আইন প্রত্যাহারের জন্য ইতোমধ্যে বাংলার সমগ্র গণমানুষের প্রচন্ড দাবির কথা আমরা ঘোষণা করেছি, তখন নতুন করে এরূপ আদেশ জারি করা জনসাধারণকে উস্কানিদানেরই শামিল। এ ধরনের আদেশ যারা জারি করছেন তাদের এ সত্যটি উপলব্ধি করা উচিত যে, আজ জনসাধারণ তাদের ইস্পাত কঠিন সংকল্পে ঐক্যবদ্ধ। এ ধরনের ভীতি প্রদর্শনের মুখে তারা কিছুতেই নতিস্বীকার করবে না। সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আমি এ ধরনের তৎপরতা থেকে বিরত থাকার আহŸান জানাই। জনসাধারণকে এ ধরনের ভীতি প্রদর্শনের প্রচেষ্টা সত্তে¡ও তারা তাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাবে। কারণ তারা জানে যে, ঐক্যবদ্ধ মানুষের এ শক্তির বিরুদ্ধে কোন কিছুরই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির ক্ষমতা নেই। সত্যিকার অর্থেই এসময় পরিস্থিতি এমন আকার ধারণ করে যে, সর্বাত্মক অসহযোগের ফলে সরকারের প্রশাসন যন্ত্র সম্পূর্ণরূপে বিকল হয়ে পড়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।