Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভিবাসীদের জন্য কল্যাণমুখী কাজ করছে সরকার-প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী

| প্রকাশের সময় : ১২ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেছেন, অভিবাসী কর্মীদের জন্য কল্যাণমুখী কাজ করছে সরকার। প্রবাসী কর্মীদের সুখে-দুঃখে কাজ করছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। বৈধ প্রক্রিয়ায়ই দক্ষ-অদক্ষ কর্মী পাঠাচ্ছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী বলেন, বিদেশে কর্মীরা সমস্যার মুখোমুখী হলে তা’ নিরসনের দ্রæত উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, সারাদেশে ৪০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে সরকার প্রতিবছর কয়েক লাখ কর্মীকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলছে। গতকাল সোনারগাঁ হোটেলে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সীজ (বায়রা) ও ব্যাপ ফোর্সেস-এর যৌথ  উদ্যোগে অনুষ্ঠিত নিরাপদ অভিবাসন এবং মানবপাচার প্রতিরোধ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি একথা বলেন। বায়রার সভাপতি বেনজীর আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। স্বাগত বক্তব্য রাখেন লেঃ কর্নেল তুহিন মোঃ মাসুম। এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব বেগম শামছুন নাহার, র‌্যাবের মহাসচিব বেনজীর আহমেদ, বিএমইটি’র মহাপরিচালক মোঃ সেলিম রেজা, বায়রার সাবেক সভাপতি মোঃ নূর আলী, বায়রার মহাসচিব রুহুল আমিন মিন্টু, সিরিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে প্রতারণার শিকার হয়ে দেশে ফেরত আসা যথাক্রমে পটুয়াখালির বেগম শাহীনুর ও ফরিদপুরে মোঃ মুহিবুল্লাহ। অনুষ্ঠান শেষে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি প্রতারণার শিকার ১০ জন অভিবাসী কর্মীর হাতে এক লাখ টাকা করে দশ লাখ টাকার চেক বিতরণ করেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বাংলাদেশ এখন আর হতদরিদ্রের দেশ নয়। আগামী দশ বছর পর লাখ লাখ বিদেশী বাংলাদেশে কাজ করতে আসবে। যত্রতত্র কর্মীদের না পাঠিয়ে কর্মীদের সঠিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই বিদেশে কর্মী প্রেরণ করতে হবে। মানবপাচার রোধে র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মানবপাচার রোধে সমন্বিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে। তিনি বলেন, ইস্তাম্বুলের একটি জেলেই প্রায় ৮শ’ বাংলাদেশী আটক রয়েছে। তারা প্রতারণার শিকার হয়ে ঐ দেশে আটকা পড়েছে। তারা দেশে ফিরে আসতে চায় না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নৌ-যানে করেও মানুষ প্রতারণার শিকার হয়ে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে ইতিপূর্বে থাইল্যান্ডের জঙ্গলে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। সিরিয়ায় সীমাহীন নির্যাতনের শিকার বেগম শাহীনুরের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিদেশগমনেচ্ছু নিরীহ মানুষ আর যাতে প্রতারণার শিকার না হন সে ব্যাপারে সর্বত্র গণসচেতনতা বাড়াতে হবে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব বেগম শামছুন নাহার বলেন, বিদেশে মানবপাচার রোধে টাক্সফোর্স গঠন করা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো মহিলা গৃহকর্মী না দিলে পুরুষ কর্মী নিতে চাচ্ছে না। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়ায় কর্মী প্রেরণ নিয়ে আদালতে মামলা-মকদ্দমা রয়েছে। এ নিয়ে শেষ পর্যন্ত কি হয় তা’ বলা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় জি টু জি ’র ১৪ লাখ কর্মীর নিবন্ধন হলেও ১০ হাজার কর্মী গিয়েছে। তারা কেউ প্রতারিত হয়নি। ঐ প্রক্রিয়ায় পর্যাপ্ত কর্মী না যাওয়ার ব্যাপারে উভয় দেশের রিক্রুটিং ব্যবসায় জড়িতরাই দায়ী।
র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, গণসচেতনতার অভাবে মানবপাচারের ঘটনা বাড়ছে। দেশের ইজ্জতের কথা ভেবে মানবপাচার রোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, ভূইফোঁড় এজেন্সি’র মাধ্যমে মানবপাচারের ঘটনা ঘটছে। বায়রার বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো এ ধরনের অপকর্মের সাথে জড়িত নয়। মানবপাচার রোধে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনের ওপর গুরুত্বারোপ করে র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, সমাজবিরোধী ও দেশবিরোধী মানবপাচারকারী চক্রকে মৃত্যুদÐ হওয়া উচিত। তিনি বলেন, এসিড নিক্ষেপের ঘটনায় ৬ জনকে মৃত্যুদÐ দেয়ায় দেশে এসিড নিক্ষেপ বন্ধ হয়ে গেছে। মানবপাচার রোধেও মৃত্যুদÐ কার্যকর করা জরুরী হয়ে পড়েছে। বায়রার মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপন বলেন, মানবপাচার রোধে গণসচেতনতা বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, অভিবাসী আইন (২০১৩) ও মানবপাচার আইন (২০১২)-এর যাতে অপব্যবহার না হয় সে ব্যাপারে সকলের দৃষ্টি রাখতে হবে। তিনি টিআইবি’র প্রকাশিত রিপোর্টের সাথে দ্বি-মত পোষণ করেন।
বায়রার সাবেক সভাপতি মোঃ নূর আলী মানবপাচার রোধে মনিটরিং সেল গঠনের দাবি জানিয়ে বলেন, মালয়েশিয়ায় প্রচুর কর্মীর চাহিদা রয়েছে। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালু থাকলে বিগত ৯ বছররে প্রায় ২৭ লাখ কর্মী যেতো মালয়েশিয়ায়। ফলে নৌ-যানে আর মানবপাচারের ঘটনা ঘটতো না। ১৪ লাখ কর্মীর নিবন্ধন করে বিগত ৭ বছরে মাত্র ৮ হাজার কর্মী গেছে মালয়েশিয়ায় এর জন্য দায়ী কে? সিআইপি বন্ধ রাখায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে নূর আলী অবিলম্বে ভালো কাজে উৎসাহিত করার জন্য সিআইপি চালু এবং মন্দ কাজের জন্য শাস্তিমূলক উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানান। বিএমইটি’র মহাপরিচালক সেলিম রেজা বলেন, মানবপাচারকারীরা দেশ ও জাতির শত্রæ। জনশক্তি রফতানি বৃদ্ধির পরিসংখ্যান দিয়ে সেলিম রেজা বলেন, চলতি বছর প্রায় ১০ লাখ কর্মী যাবে বিদেশে। তিনি দক্ষ কর্মীর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ