পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সংঘটিত গণহত্যাকাÐের দিনটি জাতীয়ভাবে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে। স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর এ উদ্যোগ নেয়া হলো। গতকাল দশম জাতীয় সংসদের সমাপনী দিনে জাসদের এমপি শিরীন আখতারের আনীত ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে বর্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যাকে স্মরণ করে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস ঘোষণা এবং জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিকভাবে এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করার প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রস্তাবটির ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ প্রায় অর্ধশত এমপি। তবে শিরীন আখতারের প্রস্তাবের ওপর সামান্য সংশোধনী আনেন সরকার দলীয় চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ। সংশোধনীতে তিনি বলেন, মূল প্রস্তাবের ২য় পংক্তিতে অবস্থিত আন্তর্জাতিকভাবে শব্দটির পূর্বে জাতিসংঘসহ শব্দটি সন্নিবেশ করা হউক। ৪ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে চলা আলোচনায় সরকার ও বিরোধী দলের এমপিরা ১ ডিসেম্বরকে মুক্তিযোদ্ধা দিবস ও সিমলা চুক্তি অনুযায়ী আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে পাকিস্তানি ১৯৫ যুদ্ধাপরাধীর বিচারও দাবি জানান।
আলোচনার শুরুতে সংসদ নেতা শেখ হাসিনার প্রস্তাবক্রমে একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে সংঘটিত পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী কর্তৃক নারকীয় গণহত্যাকাÐ তৈরিকৃত প্রামাণ্য ও স্থিরচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এতে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা, বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার, ভয়াল গণহত্যা, বুদ্ধিজীবী হত্যাকাÐ, ২৫ মার্চ গণহত্যা নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন রিপোর্ট, বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের গণহত্যা নিয়ে বক্তব্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল ও ইপিআরে গণহত্যার চিত্র স্থান পায়। এই প্রমাণচিত্র প্রদর্শনের সময়ে পুরো সংসদ অধিবেশনে ছিল পিনপতন নীরবতা।
আলোচনার শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পিকারের অনুমতি নিয়ে বলেন, শিরীন আখতার তাঁর নোটিশের সঙ্গে বেশ কিছু স্থির ও ভিডিও চিত্র দিয়েছেন। তিনি বলেন, ২৫ মার্চের পথ ধরেই এদেশে গণহত্যা শুরু হয়। আমাদের এ পার্লামেন্টে অনেক এমপি আছেন যারা ওই সময়ের ভয়াবহ চিত্র দেখেননি। আমার কাছে ২৫ মার্চের আরও কিছু স্থির ও ভিডিও চিত্র রয়েছে। আপনার অনুমতি পেলে সেগুলো দেখাতে চাই। তাহলে এ নিয়ে আলোচনার আগে ওইসব এমপি অনেক কিছু জানতে পারবেন। এরপরই অধিবেশন কক্ষে থাকা কয়েকটি প্রজেক্টরে প্রায় ১৮ মিনিটের সেই প্রামাণ্য চিত্র দেখানো হয়।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস এবং ১ ডিসেম্বরকে মুক্তিযোদ্ধা দিবস হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাব দিয়ে বলেন, যেহেতু একাত্তরে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা এবং এদেশীয় সহযোগীরা বাংলাদেশের ৩০ লাখ নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। যা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ১৯৭৩-এর সংজ্ঞা অনুযায়ী গণহত্যা। তাই ২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে গ্রহণের প্রস্তাব করেন তিনি। তিনি বলেন, ৫৪টি দেশের ১৩৭টি পত্র-পত্রিকায় গণহত্যার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। অবাক করা বিষয় খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছেন। অথচ আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় এ সংখ্যা নিয়ে স্পষ্ট তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, খালেদা জিয়ার দল, জামায়াতে ইসলামী একাধিকবার ক্ষমতায় এসেছে। তারা সংসদকে কলুষিত করেছে। খালেদা জিয়া ও অপশক্তিকে চিরতরে অপসারণ করতে হবে। শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ২৫ মার্চ কালরাত্রেই পাকিস্তানি বাহিনী প্রায় এক লাখ বাঙালীর ওপর গুলি চালায় বলে ওই সময় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, পরাজিত অপশক্তি ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিয়েছে। খালেদা জিয়া মনেপ্রাণে পাকিস্তানি, মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের তিনি অবমাননা করেছেন। এখনও উনি দেশের স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেননি। শেখ হাসিনা সাহসের সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছে। সিমলা চুক্তি অনুযায়ী তিনি আন্তর্জাতিক আদালতে ১৯৫ পাকিস্তানি সেনা যুদ্ধাপরাধীদেরও বিচারের দাবি জানান।
জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, বাঙালীদের জীবনে দুটি কালরাত এসেছে। একটি ২৫ মার্চ গণহত্যা, অপরটি ১৫ আগস্ট জাতির জনকের হত্যাকাÐ। ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদাররা নির্বিচারে গণহত্যা চালায়। এক রাতেই লাখো বাঙালীকে তারা হত্যা করে। সারাদেশকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দিতে চেয়েছিল। স্বাধীনতার জন্য ত্রিশ লাখ মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে। তাই ২৫ মার্চ জাতীয়ভাবে গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণার পাশাপাশি ওইদিনে সরকারি ছুটির দাবি জানান তিনি।
ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর বলেন, পৃথিবীর কোন দেশের ইতিহাসে এ ধরনের পশুত্ব দেখা যায়নি। হানাদার বাহিনী যে অত্যাচার, অবিচার ও নৃশংসতা করেছে তা নজিরবিহীন। প্রস্তাব তুলে ধরে তিনি বলেন, এরই মধ্যে জাতিসংঘ ২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বরকে গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আমরা ২৫শে মার্চকে গণহত্যা স্মরণদিবস হিসেবে পালন করতে পারি।
জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, পাকিস্তানের স্বার্থ রক্ষার জন্য বিএনপি সৃষ্টি হয়েছিলো। পাকিস্তানের মদদপুষ্ট জামায়াতের সঙ্গে গাঁটছাড়া বেঁধে বিএনপি এদেশ ধ্বংসের চক্রান্ত করছে।
সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডা.দীপু মনি বলেন, বাংলাদেশে গণহত্যা বিংশ শতাব্দীর ৫টি গণহত্যার মধ্যে অন্যতম। ২৫শে মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস পালনের মাধ্যমে আমরা মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণ করবো।
ফারুক খান বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশে গণহত্যা হয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশে পাকিস্তানের পরিচালিত গণহত্যা ছিল ইতিহাসের মধ্যে ভয়ঙ্করতম। বাংলাদেশে এখনও পাকিস্তানীদের দোসররা রয়েছে। বাংলাদেশে বসে খালেদা জিয়া শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। তাই গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের দোসরদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে এই গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি পাবো আশা করি। পাকিস্তানীরা এখনও আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা করছে। অনেকে বলছেন, পাকিস্তানীরা মুসলমান আমরাও মুসলমান। এই বলে কি বোঝানো হচ্ছে। ’৭১ সালে পাকিস্তানীরা বাংলাদেশের ওপর যা করেছে জাতি হিসেবে আমরা তা ভুলতে পারি না। তাদের সঙ্গে আমাদের রয়েছে আদর্শিক লড়াই। এ চেতনায় নিজেদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। পাকিস্তানের কাছে আমাদের ৩৫ হাজার কোটি পাওনা রয়েছে সেটা তাদের পরিশোধ করতে হবে আর আমাদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
জাসদের মইন উদ্দীন খান বাদল বলেন, সারা বিশ্বকে জানাতে হবে এতো দাম দিয়ে কোন জাতি স্বাধীনতা কেনেনি। তাই পাকিস্তানীদের দোসরদের বিষয়ে এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জেনারেল জিয়া ২৬ মার্চ পাকিস্তানিদের পক্ষে সারাদিন বোয়ালখালিতে ছিলেন, আক্রান্ত সৈনিক বা মুক্তিযোদ্ধাদের বাঁচাতে একচুলও সাহায্য করেননি।
ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, পাকিস্তানের আইএসআই’র টাকায় এখনও দেশের ভেতরে অনেক ষড়যন্ত্র করছে। স্বাধীনতার জন্য ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিতে পারে এই ইতিহাস পৃথিবীতে বিরল। এই ইতিহাস কেউ মুছে ফেলতে পারবে না।
আবদুল মান্নান বলেন, পাকিস্তান আগেও একটি বর্বর জাতি ছিল, এখনও আছে। প্রধানমন্ত্রী যে স্থির ও ভিডিও চিত্র দেখিয়েছেন তাতে পাকিস্তান যে বর্বর জাতি ছিলো তা আরও শক্তভাবে প্রমাণ করেছে। খালেদা জিয়া শহীদের সংখ্যা নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে প্রমাণ হয় তারা এখনও পাকিস্তানী প্রেতাত্মা হিসেবে এদেশে টিকে থাকতে চায়।
অধ্যাপক আলী আশরাফ বলেন, প্রজেক্টরে যে দৃশ্য দেখানো হলো তাতে আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। এটা একটি অকাট্য সত্য। ২৫শে মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করে আমরা পৃথিবীকে আবারও দেখিয়ে দেবো জাতির জনক যে স্বপ্ন ও উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলাদেশ গড়তে লড়াই করেছিলেন তা সফল হয়েছে। আমি এই প্রস্তাবে সম্পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি।
সংরক্ষিত মহিলা আসনের ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পী বলেন, বাংলার প্রতি ইঞ্চি মাটি রক্তের বিনিময়ে পাওয়া গেছে। শহীদদের রক্তের ঋণ আমাদের শোধ করতে হবে। আমাদের ধমনীতে শহীদের রক্ত। এই রক্ত কখনও বৃথা যেতে দেব না।
এছাড়া বক্তব্য রাখেন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, খাদ্যমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম, ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী বেগম তারানা হালিম, স্বতন্ত্র এমপি ফখরুল ইমাম, ঝালকাঠির এমপি বজলুল হক হারুণ, আফম বাহাউদ্দিন নাসিম, নজিবুল বাসার মাইজভান্ডারী, ফজলে হোসেন বাদশা, নুরুল ইসলাম সুজন, মনিরুল ইসলাম, ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, এটি এম ওয়াহাব, বিএনএফ এর আবুল কালাম আজাদ, সাগুফতা ইয়াসমিন, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, তাহজীব আলম সিদ্দিকী, সংরক্ষিত আসনের নুরজাহান বেগম, কাজী রোজী প্রমুখ।
প্রস্তাব উত্থাপনকারী জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের গণহত্যার ঘটনা ঐ সময় কালের হলেও সাম্প্রতিককালে গণহত্যার বিষয়টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পাবার লক্ষ্যে সংসদে এবং সংসদের বাইরে ব্যাপক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। তাই এ বিষয়টি নিয়ে আসন্ন মার্চ মাসের প্রথম সুযোগে সংসদে আলোচনা করে প্রস্তাব আকারে তা গ্রহণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ হঠাৎ কুড়িয়ে পাওয়া কোন খেলনা নয়। আন্দোলন সংগ্রামের ধারায় এ দেশের জন্ম। শুধু বাংলাদেশের জন্যই নয়, আজকের সুসভ্য বিশ্ব সমাজ ও বিশ্বমানবতার অগ্রযাত্রার স্বার্থেও অন্তত একটি দিন গণহত্যার মত পৈশাচিকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জন্য নির্ধারিত থাকা প্রয়োজন। জনগণেরও আজ তা অন্তরের দাবি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।