পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টালিন সরকার : বিশ্ব দরবারে ক্রিকেটের জন্য বাংলাদেশ যেমন পরিচিত; তেমিন মেক্সিকো পরিচিত ফুটবলের জন্য। বাংলাদেশের প্রতিবেশি যেমন বৃহৎ রাষ্ট্র ভারত; তেমনি মেক্সিকোর প্রতিবেশি রাষ্ট্র আমেরিকা। মেক্সিকো পরাশক্তি দেশের জন্য যদি চ্যালেঞ্জ হতে পারে; প্রবাসে থেকে দেশে রেমিটেন্স পাঠানো নাগরিকদের সুবিধা-অসুবিধা দেখভালের জন্য মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে; তাহলে বাংলাদেশ পারবে না কেন? সীমান্তে প্রাচীর ইস্যুতে মেক্সিকো থোড়াই কেয়ার করছে আমেরিকাকে। ট্রাম্প সরকারের সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসী নীতির কারণে আমেরিকায় প্রবাসী মেক্সিকানদের সহায়তার জন্য ৫০টি শহরে আইনি সহায়তা কেন্দ্র খুলেছে মেক্সিকো। ওই সব কেন্দ্রে আমেরিকায় কর্মরত কয়েক লাখ মেক্সিকান ফ্রি সহায়তা পাবেন। বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবাসী। তারা হাড়ভাঙা খাটুনি করে দেশে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে। বিদেশে কাজ করতে গিয়ে লাখ লাখ প্রবাসী শ্রমিক নানামুখী সমস্যায় পড়ছে। হাজার হাজার রয়েছেন বিদেশের কারাগারে। পালিয়ে বেড়াচ্ছেন এমন প্রবাসীর সংখ্যাও কম নয়। অথচ তাদের আইনি সহায়তা দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ দেখা যায় না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের যেসব দূতাবাস রয়েছে সেগুলোর অধিকাংশের সম্পর্কে প্রবাসীদের নেতিবাচক ধারণা। বিপদে পড়ে দূতাবাসে সহায়তার জন্য গেলে উল্টো ঝামেলায় পড়তে হয় এ অভিযোগ সর্বত্র। যার জন্য প্রবাসে বিপদে পড়লে খুব কম প্রবাসী নিজ দেশের দূতাবাসে সহায়তা নিতে যান। অথচ দেশের অর্থনীতি, রেমিট্যান্স ইত্যাদির কথা চিন্তা করলে প্রবাসে বিপদে পড়া শ্রমিকদের সহায়তার জন্য অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। প্রয়োজন শুধু দেশপ্রেম ও ইচ্ছাশক্তি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফেব্রæয়ারি মাসে আমেরিকা থেকে অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়িত করার বিধিমালা স্বাক্ষর করেছেন। তাঁর এই সিদ্ধান্তে আমেরিকায় বসবাসরত মেক্সিকান নাগরিকদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। যে সব মেক্সিকান যুক্তরাষ্ট্রে বছরের পর বছর বসবাস করছেন তাদের আমেরিকা থেকে বিতাড়িত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রবাসী নাগরিকদের এই বিপদ নিয়ে চিন্তিত মেক্সিকো সরকার। আমেরিকায় থাকতে সামনে তাদের দীর্ঘ ও ব্যয়বহুল আইনি লড়াই করতে হবে। সে জন্যই আমেরিকার ৫০টি শহরে মেক্সিকো সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা কেন্দ্র খোলা হয়েছে। যেসব মেক্সিকানের আইনী সহায়তার প্রয়োজন এবং যাদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে তাদের বিনে পয়সায় আইনি সহায়তা দেবে ওই সব কেন্দ্র। প্রবাসে থেকে কাজ করে যারা নিজ দেশে রেমিট্যান্স পাঠায় তাদের জন্য নিজ দেশের নীতি নির্ধারকদের যেন ঘুম হারাম হয়ে গেছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষকদের অবদান সবচেয়ে বেশি হলেও রিজার্ভে অবদান বিদেশী রেমিট্যান্স ও গার্মেন্টস পণ্য রফতানী। গার্মেন্টস পণ্য থেকে যে রেমিট্যান্স আসে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসে প্রবাসী শ্রমিকদের আয় থেকে। সেই প্রবাসী শ্রমিকদের বিদেশের মাটিতে নানা ধরণের হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে। ৯ মার্চ টিআইবি এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে বাংলাদেশ থেকে যেসব পুরুষ শ্রমিক বিদেশে কাজ করতে যান; তাদের শতকরা ৯০ ভাগই দুর্নীতি এবং হয়রানীর শিকার হন। অথচ তাদের পাশে কেউ নেই! ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকটি দেশ, সউদী আরব, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিংগাপুর, ইরাক, ইরান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, ব্রæনাই, লিবিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে প্রায় অর্ধকোটি প্রবাসী শ্রমিক কাজ করেন। এদের মধ্যে কয়েক লাখ শ্রমিক নানা সমস্যায় দিনযাপন করছেন। ভিসা জটিলতা, শ্রম জটিলতা, কাজ করে বেতন না পাওয়া, নির্ধারিত বেতনের চেয়ে কম বেতন দেয়া, কর্মস্থল পরিবর্তন সমস্যাসহ নানাবিধ সমস্যায় ভুগছেন। ওই সব দেশের রাজধানীতে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোর প্রবাসী ওই সব শ্রমিকদের সহায়তার জন্য নির্দেশনা থাকলেও ভুক্তভোগী প্রবাসীরা কমই সহায়তা পেয়ে থাকেন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ দু’একটি দেশের দূতাবাস ছাড়া অধিকাংশ দেশের দুতাবাসে সহায়তার জন্য গেলে উল্টো ঝামেলায় ফেলা হয়। শুধু তাই নয়, দেশী ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশ কাজের জন্য বিদেশ গিয়ে বর্তমানে বিশ্বের ৩৭টি দেশের বিভিন্ন কারাগারে ১৩ হাজার ২৪ জন বাংলাদেশ বন্দী আছেন। এসব বন্দীর কেউ বিচারাধীন অবস্থায় আছেন; আবার কেউ সাজা খাটছেন। প্রকৃত চিত্র এই হিসেবে চেয়েও বেশি বলে মনের করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ শুধু আকাশ পথে নয়; নৌ-সাগরসহ বিভিন্ন রুটে বাংলাদেশরা কাজের সন্ধানে বিদেশ যাচ্ছেন। সাগর পথে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে নৌকা ডুবি ও জঙ্গলে প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমিকদের গণকবরের খবর পাওয়া গেলেও দুর্গম পথে ইউরোপের দেশগুলোতে পাড়ি দিতে গিয়ে আফ্রিকার দেশগুলোর কারাগারে বন্দী হওয়া লোকজনের খবর খুব কমই আসে মিডিয়ায়। অনেক বাংলাদেশী অফ্রিকার দেশগুলোর কারাগারে আটক থাকলেও তাদের কোনো তথ্য পায় না দূতাবাস। বাধ্য হয়ে বিদেশের কারাগারে বিভীষিকাময় জীবন পাড় করে বন্দী প্রবাসীরা। প্রবাসে কর্মরত বাংলাদেশিরা বিপদে পড়লে তাদের সহায়তা দিতে বিশেষ ডেক্স রয়েছে। কিন্তু দায়িত্বরতরা বিপদগ্রস্থ শ্রমিকদের সহায়তার চেয়ে নিজেদের আয় রোজগারের দিকে বেশি উৎসাহী। প্রশ্ন হলো প্রবাসী শ্রমিকদের সহায়তা দিতে কয়টি দেশে আইনি সহায়তা কেন্দ্র খুলেছে বাংলাদেশ? যারা বিদেশে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে শ্রম দিয়ে দেশে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন তাদের সুবিধার জন্যই বা কী করছে আমাদের সরকার? সউদী আরব, মালয়েশিয়াসহ কয়েকটি দেশে হাজার হাজার শ্রমিক দুর্বিসহ জীবন যাপন করছেন। কয়টি দেশে প্রবাসী শ্রমিকদের আইনী সাহয়তা দেয়ার জন্য কেন্দ্র খুলেছে?
আমেরিকা ও মেক্সিকোর সীমান্তের দৈর্ঘ্য ৩ হাজার ২শ’ কিলোমিটার। আর বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তের দৈর্ঘ্য ৪ হাজার ৯৬ কিলোমিটার। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। শুধু তাই নয় প্রাচীর নির্মাণের খরচের অর্থ মেক্সিকো থেকে নেয়ার ইংগিত করেন। কিন্তু মেক্সিকো সরকার যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে তা ট্রাম্পের জন্য অবমাননাকর। তারা ক‚টনৈতিক রীতিনীতি না মেনেই মুখের ওপর ‘কড়া জবাব’ দিয়েছে। ভারতের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ব্যাপারে কী এমন বক্তব্য কল্পনা করা যায়? বাংলাদেশের তিন দিকেই ভারত। ভারতের সীমান্ত প্রায় ৪ হাজার ৯৬ কিলোমিটার। এ সীমান্তে অনেক আগেই কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে ভারত। সেই কাঁটা তারে ফেলানীর লাশ ঝুলেছে। অনেক বাংলাদেশী বিএসএফের হাতে প্রাণ হারিয়েছে। গরু চোরাচালানের নামে অনেক বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছে; জুলুম নির্যাতন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা। নতজানু পররাষ্ট্রনীতি তথা দিল্লীর আয়নায় পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করায় এসবের প্রতিবাদ করতে পারিনি। বরং বিএসএফের হাতে বাংলাদেশি কেউ প্রাণ হারালে ওগুলো গরু চোর হিসেবে প্রচার করে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলেছি। কাঁটাতারের বেড়ার পর এখন সীমান্তের অর্ধেক অংশে নতুন করে বিশেষ বেড়া দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যেই সীমান্তের অর্ধেক অংশে বেড়া নির্মাণের কাজ শেষ করেছে। দিল্লী ঘোষণা দিয়েছে ২০১৯ সালের মধ্যে পুরো সীমান্তে এই বেড়া নির্মাণের কাজ শেষ করা হবে। দিল্লী থেকে প্রকাশিত দ্য হিন্দু পত্রিকার রিপোর্টে বলা হয় বাংলাদেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ২ হাজার ২১৬ দশমিক ৭ কিলোমিটার, আসামের ২৬৩ কিলোমিটার, ত্রিপুরার ৮৫৬, মেঘালয়ের ৪৪৩ এবং মিজোরাম রাজ্যের ৩১৮ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। চোরাচালান ঠেকাতে বেড়া নির্মাণের কথা বলা হচ্ছে। আমরা না পারছি প্রতিবেশি দেশের এই বেড়া নির্মাণের প্রতিবাদ করতে; না পারছি দেশে রেমিট্যান্স পাঠানো বিদেশে কর্মরত প্রায় কোটি প্রবাসীর দুঃখকষ্টে সহায়তা করতে। মেক্সিকোর মতো দেশ সীমান্তে প্রাচীর ও প্রসাসী নাগরিকদের জন্য যা করতে পারছে; আমরা কেন তা করছে পারছি না?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।