পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আবার তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে : পুলিশ
উমর ফারুক আলহাদী : নিখোঁজ অধিকাংশ তরুণদের এখন পর্যন্ত সন্ধান মিলেনি। কোন কোন তরুণ নিখোঁজের দেড় বছর অতিবাহিত হলেও তাদের কোন তথ্য পায়নি পরিবার। নিখোঁজ সন্তানের অপেক্ষায় নির্ঘুম রাত কাটছে মায়ের। কবে তার প্রিয় সন্তান ফিরে আসবে তা কেউ বলতে পারছেন না। আদৌ তার সন্তান জীবিত আছে না কি চিরতরে হারিয়ে গেছে না ফেরার দেশে, তাও জানেন না হতভাগী মা। সন্তান হারানোর বুকভরা কষ্ট নিয়ে রাতের পর রাত কাটাচ্ছেন তারপরেও প্রিয় সন্তানের কোন হদিস পাচ্ছেন না। পুলিশের তালিকায় ৪০ নিখোঁজ ব্যক্তির মধ্যে এখন পর্যন্ত কতজন নিখোঁজ রয়েছে তারও কোন তথ্য নেই পুলিশের কাছে। এরই মধ্যে আরো কিছু তরুণ নিখোঁজ হওয়ার তথ্য পেয়েছে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। আইন-শৃংখলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, জঙ্গি দলে তরুণদের নিয়োগ প্রক্রিয়া থেমে নেই। তবে প্রথম ধাপে যাঁরা নিখোঁজ হয়েছিলেন, তাদের অভিভাবকদের বেশির ভাগই পুলিশকে সন্তান নিখোঁজের বিষয়ে জানালেও এখন অভিভাবকেরা সেটা করছেন না। তাই এখন থেকে অভিভাবকেরা নিখোঁজ সন্তানদের তথ্য সজ্ঞানে না দিলে তাঁদের বিরুদ্ধেও জঙ্গিবাদে মদদ দেয়ার অভিযোগ আনা হবে।
র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেছেন, পরিবারের কোনো সদস্য নিখোঁজ থাকলে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তা জানাতে হবে। তিনি বলেন, র্যাবের কাছে পরিবারের পক্ষ থেকে নিখোঁজদের সম্পর্কে তথ্য দিলে তাদের শনাক্ত করতে কিংবা খুঁজে পেতে সহজ হবে।
গতবছর গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর হারিয়ে যাওয়া ৪০ তরুণের তালিকা করেছিল পুলিশ। এসময় র্যাব প্রথমে ২৬২ জন পরে ৬৮ জন নিখোঁজের তালিকা প্রকাশ করেন। কিন্তু নিখোঁজ এসব তরুণের অনেকেরই কোন সন্ধান পাচ্ছে না আইন-শৃংখলা বাহিনী। অবশ্য বিভিন্ন সময়ে নিখোঁজ হওয়া তরুণদের জঙ্গিবাদে যুক্ত থাকার প্রমাণ পেয়েছে র্যাব-পুলিশ।
র্যাবের কর্মকর্তারা বলছেন, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সংশোধিত তালিকায় নিখোঁজ ৬৮ জনের তথ্য পাওয়া গেছে। গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলায় জড়িত জঙ্গিরা দীর্ঘদিন নিখোঁজ থাকার পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীগুলো নিখোঁজদের তালিকা তৈরি শুরু করে। প্রথম দফায় গত ১৯ জুলাই র্যাব ২৬২ জনের তালিকা তৈরি করেছিল। সেটি যাচাই-বাছাই শেষে ৬৮ জনের এ তালিকা প্রকাশ করলো র্যাব। নিখোঁজদের তালিকায় তিনজন নারীও রয়েছেন। র্যাব আরও জানায়, নিখোঁজদের বয়স প্রধানত ১৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা জানান, তরুণদের রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হওয়া এখন অনেক কমলেও ঠিকমতো তথ্য মিলছে না। স¤প্রতি কয়েকজন তরুণের জঙ্গিবাদে যুক্ত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে, যারা কয়েক মাস আগে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়েছেন। তবে এই তরুণদের কয়েকজনের অভিভাবকেরা বিষয়টি চেপে রেখেছিলেন। পুলিশকে তাঁদের সন্তান নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানাননি এসব অভিভাবক।
ধারণা করা হচ্ছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভয়ে বা সামাজিক কারণে তাঁরা এমনটি করছেন। এতে কাজ করতে খুব সমস্যায় পড়তে হচ্ছে কর্মকর্তাদের। কতজন নিখোঁজ হয়েছেন, এ ধারণাটা ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের খোঁজ বের করাও কঠিন হচ্ছে। একজন কর্মকর্তা বলেন, একজন নিখোঁজ হওয়ার তথ্য পেলে তাঁর পরিবার, বন্ধু, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইত্যাদি ঘেঁটে অনেক তথ্য পাওয়া যায়। এসব তথ্য ওই তরুণকে আটকের বেলায় সহায়ক হয়। কিন্তু অভিভাবকেরা তথ্য না দিলে তো সমস্যা।
এ কারণে তাঁরা এখন অভিভাবকদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের দুজন কর্মকর্তা। তাঁরা বলেন, যদি কোনো তরুণ নিখোঁজ হওয়ার পর তাঁর অভিভাবকেরা পুলিশকে ইচ্ছাকৃতভাবে অবহিত না করেন এবং পরে সেই তরুণটির সঙ্গে জঙ্গিবাদ-সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়, এমন ক্ষেত্রে সেসব অভিভাবকের বিরুদ্ধেও জঙ্গিবাদে মদদ দেওয়ার অভিযোগ আনা হবে।
এদিকে র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ জানান, প্রথম দফায় দেওয়া ২৬২ জনের তালিকা যাচাই-বাছাই শেষে তারা সংশোধিত তালিকায় ৬২ জনের প্রকাশ করেছেন। এ নিখোঁজ তালিকার ৬৮ জনের মধ্যে কতজনের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা রয়েছে সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
অন্যদিকে গতবছর পুলিশ নিখোঁজ ৪০ ব্যক্তির নাম তালিকা প্রকাশ করেছিল। পরবর্তীতে এসব নিখোঁজ ব্যক্তিদের সম্পর্কে কোন তথ্য পুলিশ প্রকাশ করেনি। তাদের কতজনের সন্তান মিলেছে এবং কতজন নিহত হয়েছে বা নিখোঁজ রয়েছে, তার কোন তথ্য পরিসংখ্যানও নেই তাদের কাছে।
জানতে চাইলে কাউন্টার টেররিজমের প্রধান যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ধর্মীয় মতবাদের অপব্যাখ্যায় বিভ্রান্ত হয়ে এখনও কিছু তরুণ জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিতে নিখোঁজ রয়েছে। এদের সম্পর্কে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। তিনি বলেন, যারা নিখোঁজ হচ্ছেন, তাদের সম্পর্কে পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশকে না জানালে এর দায়ভার পরিবারকেও নিতে হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিখোঁজ ৪০ জনের তালিকায় ১৯ জন জঙ্গিবাদে জড়িয়ে দেশের বাইরে আছেন বলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে তথ্য রয়েছে। এর বাইরে ওই তালিকার কয়েকজন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে নিহত হন। ১০ জন জীবিকার সন্ধানে অবৈধভাবে সাগরপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে নিখোঁজ হন। আবার কয়েকজন মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করে দীর্ঘদিন থাইল্যান্ডের কারাগারে ছিলেন, পরে দেশে ফিরেছেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ছানোয়ার হোসেন বলেন, এখন থেকে নিখোঁজ সন্তানে তথ্য পরিবার থেকে পুলিকে জানাতে হবে। তিনি বলেন, এ রকম একটা সিদ্ধান্ত হতে যাচ্ছে। ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিরা বিষয়টি চূড়ান্ত করবেন।
এদিকে গুলশান হামলার পর হামলাকারীদের কয়েক মাস ধরে নিখোঁজ থাকার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর ১০ যুবকের সন্ধান চেয়ে তাদের প্রতি ফিরে আসার আহŸান জানিয়েছিলেন অভিভাবকরা। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্র থেকে জানানো হয় এই ১০ যুবকের সন্ধান পেতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা চেয়েছিল তাদের পরিবার। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে ওই সব পরিবারের পরিচয় তখন প্রকাশ করা হয়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।