পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
![img_img-1719362756](https://old.dailyinqilab.com/resources/images/cache/169x169x3_1678437663_IMG-20230310-WA0005.jpg)
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মো: শামসুল আলম খান : জেনবায়ু নামের একটি ওষুধ কোম্পানি। এ কোম্পানির ভবনের নির্মাণ সামগ্রী আনা-নেয়ার কাজে যেন বাঁধা হয়ে দাঁড়ালো মহাসড়কের বিভাজক (ডিভাইডার)! একটু-আধটু পথ ঘুরে নির্মাণ সামগ্রী বহনকারী কোম্পানির যন্ত্রদানব (ট্রাক) প্রবেশ করতে হতো সেখানে। আর তাই কীনা এ সমস্যা সমাধান স্বরূপ এ ওষুধ কোম্পানির মালিক ভিন্নপথে হাঁটলেন। বিশেষ কৌশলে ‘বগলদাবা’ করলেন স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের বিতর্কিত এক নেতাকে। সেই নেতা কী না আবার জনপ্রতিনিধি। অভিভাবকহীন ত্রিশালে ইদানিং তার আবির্ভাব ‘দন্ডমুন্ডের কর্তা’ হিসেবে!
নিজের গাঁয়ে ‘প্রভাবশালী’ তকমা আঁটা এ নেতা হলেন ম্যানেজ। ব্যাস, আর ঠেকায় কে! সবার চোখের সামনে ঝকঝকে মহাসড়কের প্রায় ১৫ ফিট বিভাজক (ডিভাইডার) ভেঙে ফেললো এ ওষুধ কোম্পানি। মহাসড়কের দেখভালের দায়িত্বশীলদের কানেও গেলো এ খবর। সংশ্লিষ্ট থানায় ঠুকা হলো সাধারণ ডায়েরি (জিডি)। ঘটনাটি মাস ছয় কী সাতেক আগের। দীর্ঘ বিরতির পর পুনরায় এ ভাঙা বিভাজক এলো আলোচনায়। একটি সড়ক দুর্ঘটনার পর ভাঙা বিভাজকে দেয়া হলো ‘বাঁশের বেড়া’। পিচঢালাই মসৃণ ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কের মাঝখানে ত্রিশালের বাগান স্পটে এমন বাঁশের বেড়া বেশ বেখাপ্পাই ঠেকেছে।
কিন্তু নিজেদের স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কের বিভাজক (ডিভাইডার) ভাঙা ওষুধ কোম্পানিটির বিরুদ্ধে রহস্যজনক কারণে এখন পর্যন্ত কোন রকম ব্যবস্থা নেয়নি স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন। এ নিয়ে জনমনে ক্ষোভ-অসন্তোষেরও কমতি নেই। তবুও নীরব স্থানীয় প্রশাসন।
সূত্র জানায়, ময়মনসিংহ নগরীর ধর্ণাঢ্য ব্যবসায়ী আনোয়ার বেগ’র মেয়ের জামাই ব্যবসায়ী আশরাফুল আলম প্রায় দুই বছর আগে ত্রিশালের বাগান এলাকায় জেনবায়ু নামের একটি ওষুধ কোম্পানির নির্মাণ কাজ শুরু করেন। এ কোম্পানির জায়গা-জমি দখল নিয়েও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ।
ক্ষমতাসীন দলের নেতা সঙ্গে থাকায় জমি হারানো নি:স্ব মানুষজনও আর ‘টু’ শব্দটিও উচ্চারণ করতে পারেনি বলেও অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত হবার পর একটি লেনের প্রায় সমান আয়তনের সড়ক বিভাজক (ডিভাইডার) দেয়া হয়। আর এ বিতর্কিত ওষুধ কোম্পানিটি মহাসড়কের ঠিক পাশেই স্থানীয় ত্রিশাল উপজেলার বাগান এলাকায়।
এতে করে নির্মাণ সামগ্রী আনা নেয়ার কাজে যন্ত্রদানবকে (ট্রাক) খানিক পথ ঘুরে ওই কোম্পানিতে প্রবেশ করতো হতো। মূলত এ কারণেই বছর খানেক আগে এখানকার প্রায় ১৫ ফিট বিভাজক (ডিভাইডার) ভেঙে ফেলেন কোম্পানির মালিক। এক্ষেত্রে আগাগুড়ো তাকে সহায়তা করেন স্থানীয় ওই আওয়ামী লীগ নেতা।
ভাঙার মাস কয়েক পরেই এ খবর পৌঁছে মহাসড়কের চারলেন প্রকল্পের দায়িত্বশীলদের কানে। সরেজমিনে তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কারো নাম উল্লেখ না করে ত্রিশাল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে দায় এড়ান। এরপর বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। এরপর চলতি বছরের ১২ ফেব্রæয়ারি মহাসড়কের ওই ভাঙা অংশ দিয়ে হুট করে প্রবেশ করার সময় মাটি ভর্তি একটি ট্রাক সংঘর্ষ বাঁধিয়ে দেয় সেনা সদস্যদের একটি জিপের সঙ্গে। এতে চার সেনা সদস্য আহত হন। স্থানীয়রা কোম্পানিটির এমন কাÐে প্রতিবাদ জানায়।
কিন্তু ওই নেতার প্রভাবে আর কেউ মুখে ‘টু’ শব্দটিও করেনি। শেষ পর্যন্ত ওই নেতাই মহাসড়কে দিলেন বাঁশের বেড়া।
এ মহাসড়কের বিভাজক (ডিভাইডার) ভাঙার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে সিকিউরিটি সদস্য আবুল কালাম বলেন, আমি এখানে যোগদানের আগেই এটি ভাঙা হয়। উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বললে সব জানতে পারবেন।
‘আপনাদের বিষয় ভাইস চেয়ারম্যান জানেন কীভাবে’ এমন প্রশ্ন করলে গজর গজর ভঙ্গিতে সিকিউরিটি কর্মকর্তা মাহাবুব আলম বলেন, ‘তিনি আমাদের মালিকের পার্টনার। আমাদের সবকিছু তিনিই দেখেন। তার অনুমতি নিয়েই এটি ভাঙা হয়েছে।’
স্থানীয় উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন ক্ষোভ নিয়ে বলেন, সড়ক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্বপ্নের এ মহাসড়ক নির্মাণে ঘাম ঝরিয়েছেন। তিনি আমাদের ঝকঝকে মহাসড়ক উপহার দিয়েছেন। আর কথিত প্রভাবশালীরা নিজেদের ইচ্ছামতো মহাসড়কের বিভাজক (ডিভাইডার) ভাঙছে। এতে করে সড়কে রক্ত ঝরছে।
জানতে চাইলে ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান বলেন, চারলেন প্রকল্পের কর্তৃপক্ষ মাস সাতেক আগে এ ডিভাইডার ভাঙা নিয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন। তদন্ত করে ডিভাইডারটি ভাঙার সত্যতা পাওয়া গেছে।
একই বিষয়ে ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু জাফর রিপন বলেন, এ কোম্পানির জায়গা নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। এসিল্যান্ড সেটি তদন্ত করে দেখছে। তারা ডিভাইডার ভাঙলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অভিযোগসমূহের বিষয়ে ত্রিশাল উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের যুগ্ম আহবায়ক আশরাফুল আলম বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার পর ওই ডিভাইডারের ভাঙা অংশে বাঁশের বেড়া দেয়া হয়েছে। ক’দিনের মধ্যেই পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হবে। আর অন্যান্য অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি এক সময় তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার অনুরোধ জানান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।