পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রফিকুল ইসলাম সেলিম : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল (রোববার) চট্টগ্রাম ওয়াসার সবচেয়ে বড় প্রকল্প উদ্বোধন করবেন। ‘শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার’ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে এক হাজার ৮৪৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর চট্টগ্রাম ওয়াসার এটাই বাস্তবায়নকৃত সবথেকে বড় প্রকল্প। এটি বাস্তবায়নের ফলে ওয়াসা গত নভেম্বর থেকে দিনে আরও ১৪ কোটি লিটার পানি সরবরাহ দিতে পারছে। আর এর মধ্যদিয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীতে দীর্ঘ আড়াই দশকের পানি সঙ্কটের কিছুটা হলেও লাঘব হয়েছে। পানি নিয়ে নগরবাসীর ভাবনা এখন ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে।
২৯ বছর আগে এরশাদ সরকারের আমলে মোহরা পানি শোধনাগার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হয়। এরপর বিগত চার দলীয় জোট সরকারের সময়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া একটি বড় প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। তবে সেটি নানা জটিলতায় আর আলোর মুখ দেখেনি।
বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ায় গভীর নলক‚প বসিয়ে নগরবাসীর পানির চাহিদা পূরণের চেষ্টা করে আসছিল ওয়াসা। তবে তাতে পানি সঙ্কট দিনে দিনে প্রকট হয়েছে। পানির জন্য হাহাকার আর দুঃসহ যন্ত্রণা বেড়ছে। পানি সঙ্কট নিরসনে সরকারের ব্যর্থতায় জনমনে ক্ষোভ অসন্তোষেরও সৃষ্টি হয়। এ ক্ষেত্রে বিগত দিনে চট্টগ্রামের মন্ত্রীদের ভ‚মিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠে।
বিগত ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে লালদীঘি ময়দানে শেষ নির্বাচনী জনসভায় শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের উন্নয়নের ভার নিজ হাতে তুলে নেয়ার ঘোষণা দেন। সেই নির্বাচনী প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে ওয়াসা এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে। এই প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজও চলছে। এটি বাস্তবায়ন হলে দিনে আরো ১৪ কোটি লিটার পানি পাবে ওয়াসা। মদুনাঘাট পানি শোধনাগার প্রকল্পের কাজ শেষ হলে পাওয়া যাবে আরও ৯ কোটি লিটার।
ফলে আগামী চার বছর পর থেকে নগরবাসীকে ২০৪০ সাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা পানি সরবরাহ দিতে পারবেন- এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, নগরবাসীকে বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার নির্ধারিত মানদÐ মেনে পানি সরবরাহ করবে ওয়াসা। এ পানি হবে সরাসরি টেপ থেকে খাওয়ার যোগ্য। সেই লক্ষ্য নিয়ে ওয়াসা কাজ করছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল বিকেল ৩টায় নগরীর পতেঙ্গার বোট ক্লাবে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই প্রকল্পের উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। এর মধ্যে দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে পানি সরবরাহ করার প্রায় সাড়ে চার মাস পর এই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হচ্ছে।
বন্দরনগরী থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে রাঙ্গুনিয়ার পোমরায় কর্ণফুলী নদীর তীরে সাড়ে ৩৫ একর জমির ওপর এই পানি শোধনাগারটি নির্মাণ করা হয়েছে। শুরুতে এ প্রকল্পটির নাম ছিল কর্ণফুলী পানি শোধনাগার প্রকল্প। স¤প্রতি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের এক সাধারণ সভায় মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর নামে করার প্রস্তাব দেন। ওই প্রস্তাবের পর ১৯ জানুয়ারি পানি শোধনাগারটি ‘শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার’ নামকরণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
১৯৮৮ সালে চট্টগ্রাম ওয়াসার সর্বশেষ প্রকল্প ‘মোহরা পানি শোধনাগার প্রকল্প’ উদ্বোধন হয়েছিল। এরপর দীর্ঘ ২৯ বছরে ওয়াসা আর কোনো প্রকল্প চালু হয়নি। এই প্রকল্প থেকে পানি পাওয়া যায় দৈনিক ৯ কোটি লিটার। ওয়াসার সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ৩১ অক্টোবর থেকে পরীক্ষামূলকভাবে শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার প্রকল্প থেকে পানি সরবরাহ শুরু করে ওয়াসা। দৈনিক ১৪ কোটি লিটার ক্ষমতাসম্পন্ন এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১১ সালে। জাপানের জাইকা, বাংলাদেশ সরকার এবং ওয়াসার যৌথ অর্থায়নে এক হাজার ৮৪৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়।
এরমধ্যে জাইকা ৯৪০ কোটি ৩০ লাখ টাকা, বাংলাদেশ সরকার ৮৮৪ কোটি ২২ লাখ এবং চট্টগ্রাম ওয়াসা ২৪ কোটি টাকা অর্থায়ন করে। প্রকল্পের অধীনে ৬৯ কিলোমিটার ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন পাইপলাইন এবং তিনটি জলাধার নির্মাণ করা হয়। প্রকল্প এলাকায় স্থানীয় সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজি, রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ নানা জটিলতায় তিন দফা প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে অবশেষে গেল বছরের নভেম্বরে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ করে ওয়াসা। এ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়সহ চট্টগ্রাম ওয়াসার আরও কয়েকটি প্রকল্পের কাজ চলছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আগামী চার বছরের মধ্যে পানি সঙ্কট কেটে যাবে।
ওয়াসার হিসাবে নগরীতে বর্তমানে পানি চাহিদা দৈনিক ৫০ কোটি লিটার। কিন্তু ওয়াসা ২০১৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সরবরাহ করতে পারত মাত্র ১৮ থেকে ২০ কোটি লিটার। শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার প্রকল্প চালু করার পর থেকে নতুন করে আরো ১৪ কোটি লিটার উৎপাদন বেড়ে যায়। বর্তমানে ওয়াসার পানি উৎপাদন হচ্ছে দৈনিক ৩২ থেকে ৩৩ কোটি লিটার। সরবরাহকৃত পানির মধ্যে শেখ হাসিনা পানি সরবরাহ প্রকল্প থেকে ১৪ কোটি লিটার, মোহরা পানি শোধনাগার ৯ কোটি লিটার ও গভীর নলক‚প থেকে ৯ কোটি লিটার পানি পাওয়া যাচ্ছে। ওয়াসার আবাসিক গ্রাহক রয়েছে ৬১ হাজার ৭১৭টি আর বাণিজ্যিক গ্রাহকের সংখ্যা ৭ হাজার ৩৮৭।
দীঘদিন পানি সঙ্কটের কারণে নগরীতে ব্যাপক হারে গভীর নলক‚প বসানো হয়। এতে করে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়াসহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। এই আশঙ্কা দূর করতে চলমান পানি সরবরাহ প্রকল্পসমূহের কাজ সমাপ্ত হলে সবগুলো গভীর নলক‚প বন্ধ করে দেয়া হবে বলেও ওয়াসার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ফলে ভূগর্ভস্থ মাটির স্তরের ভারসাম্য বজায় থাকবে। পুরনো পিভিসি বি-ক্লাস পাইপ লাইন বদলে বিশ্বমানের পাইপ লাইন নির্মাণে চীনের সাথে চুক্তি করেছে ওয়াসা। কাজ শেষ হলে প্রকল্পের পুরো সুবিধা পাবেন নগরবাসী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।