Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আস্থা অর্জনে ইসির উদ্যোগ

সাবেক নির্বাচন কমিশনার, সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক দলের সাথে বৈঠকের সিদ্ধান্ত

| প্রকাশের সময় : ১১ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পঞ্চায়েত হাবিব : জনগণের আস্থা ফেরাতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছে কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী নির্বাচনগুলো অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও সর্বজনগ্রাহ্য করতে এরই মধ্যে প্রাথমিকভাবে একটি কর্মপদ্ধতি বা নির্বাচনী ছক তৈরির কাজ শেষ করেছে। এর মধ্যে প্রথমে সাবেক নির্বাচন কমিশনারদের সাথে মতবিনিময়ের বিষয়টি রয়েছে। বিগত সময়ে যারা নির্বাচন কমিশনে দায়িত্ব পালন করেছেন, তারা তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে বিভিন্ন পরামর্শ দেবেন। কাজ করতে গিয়ে কি কি সমস্যায় পড়েছেন, ভবিষ্যতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে করণীয় কি এসব বিষয়ে সাবেকদের পরামর্শ গ্রহণ করবে নতুন কমিশন। এরপর পর্যায়ক্রমে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করবে ইসি। আসন্ন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচন এবং গাইবান্ধা-১ ও সুনামগঞ্জ-২ সংসদীয় আসনের উপ-নির্বাচনকে অবাধ সুষ্ঠু করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে এ নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে এসব নির্বাচন সম্পন্ন করে তাদের প্রতি জনগণ ও ভোটারদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে চায় ইসি।  
কয়েকদিন আগে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রথমবারের মতো দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বেশ কিছুটা অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। এ নির্বাচনে যেসব সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে, সেগুলো শুধরে নিয়ে আসন্ন নির্বাচন যাতে আরো অবাধ এবং সুষ্ঠু করতে পারে সে বিষয়ে ইসি পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। নিরপেক্ষতা প্রমাণ করে ভোটারদের আস্থা অর্জন করতে এ নির্বাচনে বাড়তি নজর দিতে হচ্ছে নতুন ইসিকে। এ জন্য নির্বাচনী এলাকা সফর শুরু করেছে নির্বাচন কমিশনরাগণ।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদত হোসেন চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, জনগণ ও ভোটারের আস্থা ফেরাতে অনেক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে প্রথমে সাবেক কমিশনারদের সাথে বৈঠক করা হবে। তার পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে, তার পরে সুশিল সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করা হবে। তিনি বলেন, আগের কমিশন কি করছে আর করে নাই তা আমাদের দেখার বিষয় নয়। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে এবং জনগণের আস্থা ফেরাতে যা যা করা প্রয়োজন তাই করব। এর অংশ হিসেবে আমরা সরকারি সফর শুরু করেছি। আমরা সকল এলাকায় যাবো, তারপর কিছু পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে নির্বাচনী পরিবেশ রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। পাশাপাশি কুমিল্লা সিটির জন্য সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত রাখারও নির্দেশনা দিয়েছে কমিশন। একই সঙ্গে প্রতিটি নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর কি পরিমাণ সদস্য মোতায়েন হবে, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনাও প্রদান করা হয়েছে বলে ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।  
নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সম্মেলন কক্ষে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বৈঠক শেষে সিইসি কে এম নুরুল হুদা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আসন্ন দু’টি উপ-নির্বাচন এবং কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রতি ভোটার ও জনগণের আস্থার ক্ষেত্র তৈরি হবে। এসব নির্বাচনে প্রয়োজন হলে তাৎক্ষণিকভাবে সেনাবাহিনী নামানো হবে জানিয়ে সিইসি বলেন, আপাতত সেনাবাহিনী মোতায়েনের কোনো সিদ্ধান্ত নেই। তবে তারা সব সময় প্রস্তুত থাকবেন। প্রয়োজন হলে তাদেরকে তাৎক্ষণিক নামানো হবে।  
সিইসি বলেন, আমাদের দেশে একসঙ্গে ৩০০ আসনের নির্বাচনও সুষ্ঠু হওয়ার নজির রয়েছে। তাই মাত্র দুই-তিনটি নির্বাচনে আশঙ্কার কিছু নেই। ভোটাররা যাতে নির্বঘেœ ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেন এবং নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে পারেন এবং বাড়িতে গিয়ে নিরাপদে থাকতে পারেন সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ভোটে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচনী দায়িত্ব পালনরত কেউ অনিয়ম করলে আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও সতর্ক করে দেন তিনি।
এর আগে নির্বাচন কমিশনের সম্মেলন কক্ষে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করেন সিইসি। বৈঠকে চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারের প্রতিনিধি, মহাপুলিশ পরিদর্শক, স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্থানীয় সরকার পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়/জননিরাপত্তা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, র‌্যাব, কোস্ট গার্ড, আনসার ও ভিডিপি, ডিজিএফআই, এনএসআই ও পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিতি ছিলেন।
বৈঠকের বিষয়ে সিইসি জানান, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী থেকে ইসিকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করবে বলে বৈঠকে জানানো হয়েছে। বৈঠকে অংশ নেয়া কর্মকর্তারা বলেছেন, এই নির্বাচন কমিশনের উপরে  যেনো আস্থার ক্ষেত্র তৈরি হয় সেভাবে কাজ করবেন তারা। বৈঠকে জঙ্গি হামলা বা নাশকতার বিষয়ে কোনো কথা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কথা হয়েছে। বিশেষ করে এ বিষয়ে আমরা সুন্দরগঞ্জ নিয়ে বেশি সতর্ক থাকব।
আগামী ৩০ মার্চ অনুষ্ঠেয় কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েনের পরিকল্পনা করেছে  নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ছাড়া  আরো ৯  প্লাটুন বিজিবি রিজার্ভ রাখা হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ি কুমিল্লায় ১৭ দিন মোট ২৭ জন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবেন। আর নির্বাচনের আগে ও পরে চারদিন  ৯ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাচনী এলাকায় থাকবেন।  এ ছাড়া সাধারণ ভোটকেন্দ্রে মোট ২২ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ফোর্স মোতায়েন থাকবে। গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে থাকবে ২৪ জন আইন-শৃঙ্খলার ফোর্স। প্রতিটি সাধারণ ভোটকেন্দ্রে সাত জন পুলিশ, আনসার অস্ত্রসহ তিন জন, লাঠিসহ আনসার ১২ জন মোতায়েন করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে সাত জন পুলিশ, আনসার অস্ত্রসহ পাঁচ জন, লাঠিসহ আনসার ১২ জন দায়িত্ব পালন করবে। এ ছাড়া র‌্যাবও দায়িত্বে থাকবে।  



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ