Inqilab Logo

শুক্রবার ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৯ ভাদ্র ১৪৩১, ০৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

মর্টগেজ ছাড়াই দুই ব্যাংকের ঋণ বিতরণে ১১৪.৯৫ কোটি টাকা ক্ষতি

| প্রকাশের সময় : ১১ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

৬০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির সুপারিশ
স্টাফ রিপোর্টার : বেসিক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ঋণ মঞ্জুরীতে মর্টগেজ ছাড়া এবং অন্যান্য শর্ত পালন না করে ঋণ বিতরণ করায় সরকারের ১১৪.৯৫ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। তা আগামী ৬০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির সুপারিশ করেছে সরকারী হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
কমিটির বৈঠকে মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের রিপোর্টভুক্ত অডিট আপত্তির মধ্য থেকে ত্রি-পক্ষীয় সভা এবং বিএসআর জবাবের ভিত্তিতে ৯১টি নিরীক্ষা আপত্তিতে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
সরকারী হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি’র ৬৬তম বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের আওতাধীন (বেসিক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক) এর ২০০৯-২০১০ অর্থ বছরের হিসাব সম্পর্কিত বাংলাদেশের মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের বার্ষিক অডিট রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা হয় এবং আপত্তিগুলো কমিটি কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশনার আলোকে নিষ্পত্তির সুপারিশ করা হয়।
কমিটি সূত্রে জানা গেছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের আওতাধীন বেসিক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। এ দুই ব্যাংকের ২০০৯-২০১০ অর্থ বছরের হিসাব সম্পর্কিত বাংলাদেশের মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের বার্ষিক অডিট রিপোর্ট, ২০০৯-২০১০-এর অডিট আপত্তি/মন্তব্যের অনুচ্ছেদ নং-১ এ বর্ণিত ঋণ মঞ্জুরীর শর্ত মোতাবেক ১০.৫১ কোটি টাকার জামানত রেজিস্টার্ড মর্টগেজ ছাড়া এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শর্ত পালন না করে ঋণ বিতরণ করায় ব্যাংকের ৪২ কোটি ৮৬ লাখ ৬৩ হাজার ৪৩৩ টাকা আর্থিক ক্ষতি করা হয়েছে। অডিট আপত্তির প্রেক্ষিতে অনাদায়ী টাকা আদায় করে জমার প্রমাণক মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের নিকট ৬০ কার্য দিবসের মধ্যে দাখিল করার শর্তে আপত্তিটি নিষ্পত্তির করতে বলা হয়।
অ্যাসাইনমেন্ট মোতাবেক বিল না পাওয়া ও পর্যাপ্ত জামানত ছাড়া অনুমোদিত স্বল্প মেয়াদী ঋণ আদায় না করতে পারায় ব্যাংকের ক্ষতি ১ কোটি ৩৮ লাখ ৬২ হাজার ৭১০ টাকা আদায় হওয়ায় আপত্তিটি নিষ্পত্তির সুপারিশ করে। অনুমোদিত ঋণসীমার অতিরিক্ত ঋণ বিতরণ, বর্তমানে ব্যবসায়িক স্থবিরতায় ঋণ আদায়ের জন্য বিশেষ সুযোগ দিলেও তা কার্যকরি না করায় এলটিআর ও সিসি ঋণ বাবদ ব্যাংকের ক্ষতি ১ কোটি ৪০ লাখ ৪৭ হাজার ১৮৭ টাকা ট্রেজারির মাধ্যমে ৩০ দিনের মধ্যে জমার শর্তে আপত্তিটি নিষ্পত্তির সুপারিশ করে। জামানত ঘাটতি এবং ঋণের টাকা আদায়ে প্রয়োজনীয় ডাউন পেমেন্ট ব্যতীত পুনঃতফসিল সুবিধা দেয়া সত্তে¡ও টাকা আদায়ে ব্যর্থতায় শ্রেণীবিন্যাসিত ঋণের জন্য ব্যাংকের ক্ষতি ১৬ কোটি ৯৬ লাখ ৯০ হাজার ৬৯৮ টাকা। অমান্য করে কোন প্রকার জামানত ব্যাতীত পার্টির সংগে যোগসাজশ করে অনিয়মিতভাবে চলতি হিসাবে টাকা না থাকা সত্তে¡ও সাময়িক জমাতিরিক্ত (টিওডি) সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে ব্যাংকের ১ কোটি ৯২ লাখ ৪৯ হাজার ৯৭৯ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। মেসার্স বাংলাদেশ স্যু ম্যানুফ্যাকচারিং কোং লিঃ-এর অনুকূলে প্রদত্ত এসটিএল ও সিসি (হাইঃ) ঋণের মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় ব্যাংকের ক্ষতি ১ কোটি ২০ লাখ ০৮ হাজার ১২ টাকা। এ জন্য শাখা ব্যবস্থাপক ক্ষমতা বহির্ভূতভাবে টিওডি এবং এসটিএল লোন সৃষ্টি করে গ্রাহককে আর্থিক সুবিধা প্রদান করায় ব্যাংকের ক্ষতি ১৩ কোটি ৬০ লাখ ৪৪ হাজার ৮২৯ টাকা। মেসার্স নিদ্রা ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিঃ-কে অনিয়মিতভাবে সিসি (হাইপো) ঋণের লিমিট অতিরিক্ত ঋণ বিতরণ এবং টার্মলোনের কিস্তি খেলাপী হওয়ায় ও ঋণের দায় আদায়ে ব্যর্থ হওয়ায় ব্যাংকের ক্ষতি ৩ কোটি ১১ লাখ ৪৬ হাজার ২১০ টাকা। চলতি হিসাবে জমার অতিরিক্ত উত্তোলন সুবিধা প্রদান এবং এসওডি ও সিসি (হাইপো) ঋণসীমার অনিয়মিতভাবে তিনগুণ অতিরিক্ত উত্তোলন সুবিধা প্রদান করায় ব্যাংকের ক্ষতি ১ কোটি ২৩ লাখ ৩৬ হাজার ৬৭৩ টাকা। মেসার্স ইন্টারলিঙ্ক সেন্টার লিমিটেড ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইন্টারলিঙ্ক পিলসি লিঃ-এর চলতি হিসাবে টাকা না থাকা সত্তে¡ও অর্থ প্রদান এবং ব্যবসা সংক্রান্ত কাজে সিসি (হাইপে) ও এসটিএল ঋণ বিতরণ না করায় ব্যাংকের ক্ষতি ২ কোটি ২২ লাখ ৯১ হাজার ৭৮২ টাকা। অবৈধভাবে লেনদেন করে জামানতবিহীন টিওডি লোন সৃষ্টি করায় ব্যাংকের ক্ষতি ৮৩ লাখ ৩০ হাজার ১৭০  টাকা। এর বিপরীতে দেয় ঋণের কাজের মেয়াদ পার হবার দীর্ঘদিন পরও ঋণ আদায় না হওয়ায় ব্যাংকের ক্ষতি ১৩ কোটি ৪৮ লাখ ১৮ হাজার ৬৫৩ টাকা।
মেয়াদ শেষলগ্নে ঋণ অনুমোদন, ঋণের মেয়াদ শেষ হলেও ঋণ আদায় না করা এবং মঞ্জুরী অনুযায়ী জামানত সম্পন্ন করতে না পারায় বিনিয়োগকৃত ১৬ লাখ ৬৪ হাজার ১৭৮ টাকা আদায় অনিশ্চিত। দারিদ্র্য দূরীকরণ ঋণ কর্মসূচীর আওতায় ভুয়া ঋণ প্রদানের মাধ্যমে আত্মসাৎ ৫৬ লাখ ৯২ হাজার ৭৩৮ টাকা। কর্মকর্তা/কর্মচারীদের যোগসাজশে ভুয়া আরপিএস হিসাবের বিপরীতে কোন লোন সেফ ফাইল সৃষ্টি ছাড়াই ভুয়া আরপিএস/ কৃষি লোন প্রদানের মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করায় বর্তমানে অনাদায়ী ১৯ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫৬ টাকা। আগামী ৯০ দিনের মধ্যে দাখিল করার শর্তে আপত্তিটি নিষ্পত্তির সুপারিশ করতে বলা  হয়।
ঋণ প্রদানের পূর্বে সংশ্লিষ্ট ব্যবসার কোন ভবিষ্যৎ না থাকা সত্তে¡ও যথাযথ যাচাই বাছাই ব্যতিরেকে সিসি ঋণ প্রদান করায় মেয়াদ উত্তীর্ণ অবস্থায় অনাদায়ী ৩৬ লাখ ৮৫ হাজার ৯৭৭ টাকা।  প্রকল্পের যথার্থতা যথাযথভাবে যাচাই বাছাই না করে প্রকল্প ঋণ প্রদান করার ফলে এবং প্রকল্পটির অস্তিত্ব বর্তমানে না থাকা সত্তে¡ও নামামাত্র টাকা আদায়ের ফলে ব্যাংকের অনাদায়ী ১ কোটি ১০ লাখ ৫২ হাজার টাকা। কমিটি ৯০ দিনের মধ্যে দাখিল করার শর্তে আপত্তিটি নিষ্পত্তির সুপারিশ করে। কমিটি বৈঠকে মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের রিপোর্টভুক্ত অডিট আপত্তির মধ্য থেকে ত্রি-পক্ষীয় সভা এবং বিএসআর জবাবের ভিত্তিতে ৯১টি নিরীক্ষা আপত্তিতে সর্বমোট জড়িত অর্থের পরিমাণ ১১৪.৯৫ কোটি টাকা এবং ২০০৭১.৩৫ মার্কিন ডলার নিষ্পত্তির সুপারিশ করে।  
কমিটির সভাপতি ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, কমিটির সদস্য এ, কে, এম মাঈদুল ইসলাম, মোঃ মোসলেম উদ্দিন, পঞ্চানন বিশ্বাস, মোঃ শামসুল হক টুকু, রেবেকা মমিন এবং ওয়াসিকা আয়েশা খান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ