Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৪ মে ২০২৪, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভিবাসন কর্মীদের ভিসা সংগ্রহে পাচার ৫২৩৪ কোটি টাকা

| প্রকাশের সময় : ১০ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম


টিআইবি সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ
স্টাফ রিপোর্টার : ২০১৬ সালে অভিবাসন কর্মীদের ভিসা সংগ্রহ করতে হুন্ডির মাধ্যমে ৫ হাজার ২৩৪ কোটি টাকা অবৈধভাবে পাচার হয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে টিআইবির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। শ্রম অভিবাসন প্রক্রিয়ায় সুশাসন : সমস্যা ও উত্তরণের উপায় শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন পেশ
উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অভিবাসন প্রত্যাশীদের ৯০ শতাংশই কোনো না কোনোভাবে দুর্নীতির শিকার হচ্ছেন। গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করেন টিআইবির প্রোগ্রাম ম্যানেজার (গবেষণা ও পলিসি)  মনজুর-ই-খোদা ও সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাহজাদা এম আকরাম। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এম হাফিজ উদ্দিন খান, উপ-নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, এবং গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মো. রফিকুল হাসান প্রমুখ।
ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, একজন অভিবাসন প্রত্যাশীকে একই কাজ একাধিক স্থানে করতে হচ্ছে। আর তা হচ্ছে পাসপোর্টের সময় ছবি ও ফিংগারিং, একই কাজ ভিসা, মেডিকেল রিপোর্ট ও বহির্গমনের সময়ও করতে হয়। যেটা প্রয়োজন নাই। এ তথ্যগুলো সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য ভাÐার থেকে সংগ্রহ করতে পারে। যদি এই দফতরগুলোর মধ্যে সমন্বয় থাকে তাহলে জনগণকে ভোগান্তির মুখে পড়তে হয় না। গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সরকারের পক্ষ থেকে একজন অভিবাসন প্রত্যাশীকে সরকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ ব্যয় এক লাখ ৬৫ হাজার টাকা হলে একজন অভিবাসন প্রত্যাশীকে এজন্য ৫ লাখের ওপরে খরচ করতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে ব্যয়ের ৬৭ শতাংশ চলে যায় দালাল ও সংশ্লিষ্ট এজেন্সির কাছে। এজন্য টিআইবি একটি সুষ্ঠু নীতিমালা ও সরকারের পক্ষ থেকে সঠিক তদারকির দাবি জানান। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ১৯৭৬ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে শ্রম অভিবাসনের মধ্যে ৭৯ শতাংশ অভিবাসী মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপে এক শতাংশ, আফ্রিকায় ২ শতাংশ পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় ১৫ শতাংশ এবং অন্যান্য দেশে বাকি তিন শতাংশ অভিবাসন রয়েছে। এর মধ্যে বেশি খরচ হয় সউদী আরবগামী শ্রমিকদের। তাদের টিকিট কেনা বাবদ ২৪ দশমিক ২৪ শতাংশ, স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ৩ দশমিক ৭২ শতাংশ, ভিসা ফি ১ দশমিক ৮১ শতাংশ, বিএমইটি’র ৩ দশমিক ১২ শতাংশ এবং রিক্রটিং এজেন্সি বাবদ ৬৭ দশমিক ০৯ শতাংশ ব্যয় হচ্ছে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, বিভিন্ন দেশে সউদী আরবের ভিসা ক্রয় বাবদ যে টাকা খরচ হচ্ছে বাংলাদেশে তা ৭ থেকে ৮ গুণ বেশি। এক্ষেত্রে ফিলিপাইনে ফ্রি টিকেটসহ অতিরিক্ত তিন হাজার ৭৫০ রিয়াল কর্মীকে প্রদান করা হয়। নেপালে সউদী ভিসার ক্রয় মূল্য ৫০০-৮০০, ভারতে ১০০০-১৫০০, পাকিস্তানে ৩০০০-৫০০০ এবং বাংলাদেশে এ খরচ ৭০০০-১৫০০০ টাকা। গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ভিসা প্রক্রিয়াকরণে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ও ছাড়পত্র গ্রহণে নিয়ম বহির্ভূত অর্থ আদায় করা হয়। এক্ষেত্রে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় দলীয় ভিসা অনুমোদনের ক্ষেত্রে ১৩ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করেছে। ২০১৬ সালের ৬১ হাজার ১১২টি ভিসা দিয়েছে। বিএমইটি বহির্গমন ছাড়পত্র অনুমোদনের ক্ষেত্রে ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা করে নিয়েছে। সংস্থাটি ২০১৬ সালের ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৭৩১টি ছাড়পত্রের কাজ করেছে। পুলিশ ছাড়পত্রের ক্ষেত্রে অবস্থা একই। এক্ষেত্রে পুলিশকে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা করে দিতে হয়েছে। দেশভিত্তিক মালয়েশিয়ায় পেশাগত ভিসার অদক্ষ বা অর্ধদক্ষ কর্মীদের জন্য বহির্গমন ছাড়পত্রের ক্ষেত্রে ৫ হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছে। গত বছর সংস্থাটি ৪০ হাজার ১২৬টি ছাড়পত্র দিয়েছে। মুখ্য তথ্যদাতাদের সাক্ষাৎকার, নিবিড় সাক্ষাৎকার এবং দলগত আলোচনা ছাড়াও শ্রম অভিবাসন-সংশ্লিষ্ট নীতিমালা, আইন ও বিধি, প্রকাশিত-অপ্রকাশিত গবেষণা, প্রবন্ধ, সরকারি-বেসরকারি তথ্য ও দলিল এবং সংবাদপত্র ও অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ পর্যালোচনা পূর্বক ২০১৬ সালের মে থেকে জানুয়ারি-২০১৭ পর্যন্ত সময়কালে এ গবেষণার তথ্য সংগৃহীত করে প্রতিবেদন প্রণীত হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ