Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১, ২৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সিরিয়ায় নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় পুনরায় তুরস্কের উদ্যোগ

| প্রকাশের সময় : ১০ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ভয়েস অব আমেরিকা : তুরস্ক উত্তর সিরিয়ায় নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ধারণাটি আবার উত্থাপন করেছে। তারা চায় এ মাসের শেষদিকে জেনেভায় জাতিসংঘ নেতৃত্বাধীন শান্তি আলোচনার পরবর্তী দফায় বিষয়টি আলোচ্য সূচিতে থাকুক। তুর্কি কর্মকর্তাদের মতে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান এ সপ্তাহে মস্কো সফরকালে তার রুশ প্রতিপক্ষ ভøাদিমির পুতিনের সাথে আলোচনায় নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কথা বলবেন। আঙ্কারা দীর্ঘদিন ধরে উত্তর সিরিয়ায় একটি নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে বলে আসছে। কিন্তু ওবামা প্রশাসন বার বার তা নাকচ করে দেয়। বিশেষ করে ২০১৩ ও ২০১৫তে তারা বলে যে কথিত নিরাপদ এলাকা বলবত করতে গেলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আমেরিকানবাহিনীকে স্থলে মোতায়েন করতে হবে যা যুক্তরাষ্ট্রকে সিরিয়া সংঘাতে আরো গভীরভাবে জড়িয়ে ফেলবে। ট্রাম্পের সমর্থন ঃ তুর্কি কর্মকর্তারা বলছেন, নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় তাদের আগের প্রচেষ্টার ব্যাপারে এখন অধিকতর আশাবাদী, কারণ এ ধারণার প্রতি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থন আছে বলে মনে হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণাকালে সঠিক মূল্য হিসেবে বড় এক টুকরো ভূখÐ দখল ও এক বিরাট সুন্দর নিরাপদ এলাকা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেন। ২৫ জানুয়ারি তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ৬ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধে গৃহহীন মানুষের জন্য অবশ্যই সিরিয়ায় নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করবে।
কোথায় কোথায় নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট তা বলেননি। তিনি পেন্টাগন ও পররাষ্ট্র দফতরকে পরিকল্পনা প্রণয়নের নির্দেশ দেন যদিও সাম্প্রতিক নির্বাহী আদেশে সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।
তুর্কি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানয়ারিতে ট্রাম্পের নিরাপদ এলাকা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবের প্রশংসা করে বলেন, তুরস্ক প্রথম থেকেই নিরাপদ এলাকা প্রতিষ্ঠার কথা বলে আসছে। তুরস্ক আবার সিরীয় কুর্দি নিয়ন্ত্রিত এলাকায় যুক্তরাষ্ট্র কোনো নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করে কিনা তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
আসাদের জন্য বাস্তবসম্মত
পরিকল্পনা নয় মোটেই
মস্কো ও দামেস্ক নিরাপদ এলাকা ধারণার ব্যাপারে আগ্রহী নয়। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ সম্প্রতি এক সাক্ষাতকারে ইয়াহু নিউজকে বলেন, সিরীয়দের জন্য নিরাপদ এলাকা তখনি হতে পারে যখন স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা থাকবে, যেখানে সন্ত্রাসী থাকবে না, যেখানে প্রতিবেশী দেশগুলো ও পাশ্চাত্য সমর্থিত আগমন ঘটবে না ও তাদের প্রতি সমর্থন থাকবে না, নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার চেয়ে তা অনেক বেশী সম্ভাবনাপূর্ণ, অনেক বেশী বাস্তব ও কম ব্যয়সম্পন্ন। নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা বাস্তবসম্মত ধারণা নয়।
তুর্কি কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভয়েস অব আমেরিকাকে বলেন, অতীতে নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য সমর্থন নিশ্চিত করতে তাদের ব্যাপক চেষ্টার পর থেকে বাস্তব পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তন ঘটেছে।
তারা বলেন, সিরিয়া যুদ্ধে রাশিয়া হস্তক্ষেপ করেছে, আসাদকে নিরাপদ মনে হচ্ছে, কুর্দি নিয়ন্ত্রিত সিরিয়ার উত্তরপূর্বে মার্কিন স্পেশাল ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে, ইসলামিক স্টেট সন্ত্রাসী গ্রæপের বিরুদ্ধে যুদ্ধে দুর্বল ও সাময়িক সহযোগিতা চলমান। এ অবস্থায় নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করার সময় এসেছে।
উদ্বাস্তু আগমন রোধ
ইতোপূর্বে নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য তুরস্কের চেষ্টাকে আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার অংশ হিসেবে দেখা হয়েছে। এ সব প্রস্তাবিত নিরাপদ অঞ্চল সিরিয়ার বিদ্রোহীদের নিরাপদ এলাকা হিসেবে কাজ করত বলে দামেস্ক ও ওয়াশিংটন আশংকা করেছিল। এখন তুর্কিরা নিরাপদ অঞ্চলকে আর আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার অংশ হিসেবে প্রদর্শন করছে না। তারা তাদের নীতিগত লক্ষ্য হিসেবে এটাকে পরিত্যাগ করেছে, বরং বলছে যে তা পাশ্চাত্যে উদ্বাস্তু স্রোতকে রোধ করবে।
তুর্কি ও পাশ্চাত্য কর্মকর্তাদের মতে, এ সপ্তাহে দক্ষিণ তুরস্কে অনুষ্ঠিত মার্কিন, তুর্কি ও রুশ শীর্ষ কমান্ডারদের বৈঠকে নিরাপদ অঞ্চলের প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। গত মাসে তুর্কি সামরিক কর্মকর্তাদের সাথে মার্কিন জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ জেনারেল জোসেফ ডানফোর্ডের বৈঠকে তুরস্ক তার কাছে এ ব্যাপারে তদ্বির করে।
তুর্কি পরিকল্পনানুযায়ী সিরিয়ার আলেপ্পোর উত্তরপশ্চিমে আফরিন এবং আলেপ্পোর উত্তর পূর্বে আইন আল-আরবের মধ্যে একটি আনুষ্ঠানিক বাফার জোন প্রতিষ্ঠিত হবে। তুরস্কের প্রস্তাবিত এ নিরাপদ অঞ্চলের এক বিরাট অংশই হচ্ছে উত্তর সিরিয়ায় তার অপারেশন ইউফ্রেটিস সমর্থিত তুর্কি ও সিরীয় বিদ্রোহীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। গত আগস্টে তুরস্ক এ অভিযান চালায় যার লক্ষ্য হচ্ছে কুর্দি মিলিশিয়া ও জিহাদিদের তুর্কি সীমান্ত থেকে যতটা সম্ভব দূরে রাখা।
কুর্দিদের মিনি স্টেট
প্রতিষ্ঠায় বাধা প্রদান
সিরিয়ার কুর্দিদের কথা যে তুরস্ক উত্তর সিরিয়ায় যে নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কথা বলছে তা তারা যেভাবে প্রদর্শন করছে আসলে ততটা নির্দোষ নয়। তারা বলেন, এ প্রস্তাবের লক্ষ্য তারা এবং কুর্দি নিয়ন্ত্রিত এলাকা নিরাপদ অঞ্চলের আওতাধীন করতে বাধা দেয়াই তুরস্কের উদ্দেশ যা কিনা কুর্দি মিনি স্টেটে পরিণত হতে পারে।
কুর্দি ও অন্যান্য সমালোচকরা বলেন, আঙ্কারার নিরাপদ অঞ্চলের প্রস্তাব হচ্ছে উত্তর সিরিয়ায় কার্যত নিজস্ব মিনি স্টেট প্রতিষ্ঠার তুর্কি চেষ্টা যা মস্কো ও ওয়াশিংটনের অনুমোদন পেলে কার্যকর হতে পারে এবং মার্কিন সামরিক শক্তি তার সুরক্ষা দেবে।
ওয়াশিনটনে অলাভজনক গবেষণা সংস্থা আরব সেন্টার-এর নীতি বিশ্লেষক জো ম্যাকারন বলেন, তুরস্ক সিরিয়ার সাথে তার সীমান্ত বরাবর আফরিন ও জারাবøুসের মাঝে কার্যত নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য বর্তমানে যে চেষ্টা শুরু করেছে তা সিরীয় কুর্দি বাহিনীর প্রতিনিধিত্বকারী পিপলস প্রটিকশন ইউনিটের (ওয়াইপিজি) সাথে জনতাত্তি¡ক লড়াইয়ের অংশ।
গত সপ্তাহে ওয়াশিনটন ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গেøাবাল পলিসি ইনস্টিটিউটে এক সম্মেলনে বক্তৃতাকালে বিশ্লেষক ও ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণায় পরামর্শদাতা ওয়ালিদ ফারেস বলেন, নিরাপদ অঞ্চলের প্রস্তাবে বহু গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ রয়েছে। একটি হচ্ছে কোথায় কোথায় তা প্রতিষ্ঠিত হবে? দ্বিতীয় কারা সেগুলো ব্যবস্থাপনা করবে? তিন এ সব অঞ্চলে কে অর্থায়ন করবে? এবং সর্বশেষ হচ্ছে এ বিষয়ে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ঐকমত্য।
শাসক পরিবর্তনের
প্ল্যাটফরম
সম্মেলনের বিশ্লেষকদের মতে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল : কতদিন এ নিরাপদ অঞ্চল কার্যকর থাকবে এবং শেষ পর্যন্ত কি তারা সিরিয়া ভেঙে গেলে জাতিগোষ্ঠিগতভাবে বিভক্ত অংশ হবে?
ওয়াশিনটনের একটি রিসার্চ গ্রæপ আমেরিকান ফরেন পলিসি কাউন্সিলের আইলান বেরমান বলেন, সিরিয়ায় নিরাপদ অঞ্চল বিষয়ে আলোচনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিগুলোর মধ্যে রাশিয়ার অবস্থান হবে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন,  ক্রেমলিন নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবকে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনার সূচক হিসেবে দেখছে। তিনি বলেন, রুশ সরকার এ নিশ্চয়তা চায় যে নিরাপদ অঞ্চলগুলো স্থিতিশীলতা বয়ে আনবে এবং সিরিয়ায় শাসক পরিবর্তনে তারা প্ল্যাটফরম হিসেবে ব্যবহৃত হবে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ