Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমানোর পরামর্শ আইএমএফের

| প্রকাশের সময় : ১০ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম


অর্থনৈতিক রিপোর্টার : সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমাতে বাংলাদেশ সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সঞ্চয়পত্র বিক্রির কারণে লাভের পরিবর্তে সরকারের ব্যয় আরও বাড়ে বলে দাবি করেছে সংস্থাটি।
গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন বক্তব্য তুলে ধরেন বাংলাদেশ সফররত আইএমএফের এশিয়া-প্যাসিফিক বিভাগের প্রধান ব্রায়ান অ্যাটকিন।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বিভিন্ন দিক পর্যবেক্ষণে ব্রায়ান অ্যাটকিনের নেতৃত্বে আইএমএফ-এর ৩ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি গত ২৬ ফেব্রæয়ারি ঢাকায় আসে।  
১১ দিনের এই সফরে প্রতিনিধি দলটি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমানসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। সেই সফরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরতেই এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ব্রায়ান অ্যাটকিন বলেন, বাংলাদেশ সরকার সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ঋণ নিচ্ছে, এতে উল্টো সরকারের ব্যয় বাড়ছে। এর বদলে শেয়ার মার্কেট থেকে বা বন্ড মার্কেট চালু করে সেখান থেকে সরকারকে ঋণ নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বন্ড মার্কেট এখনও জনপ্রিয় নয়। এই মার্কেটকে বিনিয়োগবান্ধব করে সরকার বন্ড ছাড়লে জনগণ বন্ড কিনতে উৎসাহিত হবে। সেই টাকা থেকে সরকার ঋণ নিতে পারে। এতে সরকারের পাশাপাশি জনগণও উপকৃত হবে।
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বাড়ছে এটা উদ্বেগের ব্যাপার। এটা কমানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। খেলাপি ঋণ বন্ধে সরকারি ব্যাংকগুলোতে নজরদারি ও তদারকির পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকগুলোকেও পর্যবেক্ষণের আওতায় আনার পরামর্শ দেন তিনি।
সরকার আগামী ১ জুলাই ভ্যাট আইন কার্যকর করতে যাচ্ছে। এজন্য তিনি সরকারকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, এ উদ্যোগের ফলে ব্যবসায়-বাণিজ্যে স্বচ্ছতা আরও বাড়বে, একইসঙ্গে-এর মাধ্যমে সরকারের রাজস্বও বাড়বে।
এর পাশাপাশি দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ উন্নয়নে এবং বিনিয়োগ বাড়াতে অবকাঠামোগত উন্নয়নে নজর দেয়ার জন্য সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে প্রতিনিধি দলটির অপর দুই সদস্যসহ বাংলাদেশে আইএমএফের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেলা কায়েন্দেরাও উপস্থিত ছিলেন।
আকর্ষণীয় লভ্যাংশের কারণে বাংলাদেশে মূলত মধ্য ও স্বল্প আয়ের মানুষরাই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে থাকেন। কিন্তু, সঞ্চয়পত্রের উচ্চ সুদ হার নিয়ে বরাবরই আপত্তি জানিয়ে আসছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গত ২৯ জানুয়ারি সংসদে তিনি বলেন, ‘সঞ্চয়পত্রের উচ্চ সুদ হার আমাদের অর্থনীতিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে।’
জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের সর্বশেষ তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ৫ হাজার ৪২০ কোটি ৫৯ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। তার আগের মাস ডিসেম্বরে বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা।
গত নভেম্বর মাসে ৪ হাজার ৪০২ কোটি, অক্টোবরে ৪ হাজার ২৬৬ কোটি ৬১ লাখ, সেপ্টেম্বরে ৩ হাজার ৮৫৪ কোটি ৫০ লাখ, অগাস্টে ৪ হাজার ২৯৭ কোটি ২১ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। জুলাই ও জুন মাসে বিক্রির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৩ হাজার ৪৯৮ কোটি ৩৭ লাখ ও ৩ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা।
সে হিসাবে চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের সাত মাসের (জুলাই-জানুয়ারি) হিসেবে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৮৯৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা। যা বাজেটে ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪৫ শতাংশ বেশি। যদিও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ১৯ হাজার ৬১০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার  লক্ষ্য রয়েছে সরকারের।
বর্তমানে ব্যাংকগুলোতে আমানতে সুদ হার নেমেছে গড়ে সাড়ে ৬ শতাংশেরও নিচে। শুধু তাই নয়, প্রতিদিনই কমছে আমানতে সুদ হার। এ ছাড়া সঞ্চয়পত্রের বিপরীতে অতিরিক্ত সুদ দিতে গিয়ে সরকারকেও চাপে থাকতে হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংক আমানতের সুদহার বর্তমানে সাড়ে ৬ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশ। কিন্তু সঞ্চয়পত্রের সুদহার এখনো ১১ শতাংশের ওপরে রয়েছে। এ অবস্থায় অনেকে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছে। বর্তমানে পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১.৫২ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১.৬৭ শতাংশ। তিন বছর মেয়াদি ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক মেয়াদি হিসাবের মুনাফার হার ১১.২৮ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১.২৮ শতাংশ এবং তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১.০৪ শতাংশ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ