Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সীতাকুন্ডে নির্বিচারে জলাশয় ভরাট

| প্রকাশের সময় : ১০ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুন্ড থেকে : সীতাকুন্ডে প্রকাশ্যেই একের পর এক পুকুর-জলাশয় ভরাট হচ্ছে। গত ৫ বছর ধরে এভাবে জলাশয় ভরাটের হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। এসময়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অর্ধশতাধিক পুকুর, ডোবা ও দিঘী ভরাট হয়ে গেছে। পরিবেশ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অনেকটা প্রকাশ্যে এইসব জলাশয় ভরাট চললেও এ নিয়ে কোন ভূমিকাই রাখছে না সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। ফলে জলাশয় ভরাট লাগামহীন হয়ে পড়েছে। আর এতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে প্রকৃতিতে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সীতাকুন্ডের সর্বত্র জলাশয় ভরাট রীতিমত মহোৎসবে পরিণত হয়েছে। উপজেলার সলিমপুর, বানুর বাজার, মাদামবিবিরহাট, ফৌজদারহাট, কুমিরাসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় একই সাথে পুকুর ভরাট চলছে। প্রশাসনের একেবারে নাগের ডগায় দিন দুপুরে এই পুকুর ভরাটের মহোৎসব চললেও রহস্যজনক কারণে কোন ভূমিকাই রাখছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ রয়েছে ভূমিদস্যু চক্র যথাযথ কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করেই জলাশয় ভরাট শুরু করায় কর্তৃপক্ষ দেখেও দেখছে না।
সরেজমিনে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, দিন-রাত ট্রাকে ট্রাকে মাটি এনে এসব পুকুর ভরাট হচ্ছে। বেশিরভাগ কেটে পুকুর ভরাট করতে পাহাড় কেটে মাটি আনা হচ্ছে। অর্থাৎ অবৈধভাবে পাহাড় কাটা এবং জলাশয় ভরাট দুটোই করছে দুষ্কৃতিরা। পরিদর্শনকালে সলিমপুর পাক্কা রাস্তার মাথা এলাকার ন্যাশনাল কটন মিল এলাকায় গিয়ে দেখা যায় এখানে মহাসড়কের সাথে লাগোয়া একটি জলাশয় ইতিমধ্যে প্রায় অর্ধেক ভরাট করে ফেলা হয়েছে। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, জনৈক বাবুলের মালিকানাধীন এ পুকুরটি ভরাট হচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরে। অতি ধীরে কৌশলে মাটি ফেলতে ফেলতে পুকুরের অধিকাংশই ভরাট করা হয়েছে। অবশিষ্ট অংশও ভরাটের কাজ চলছে। এলাকাবাসী জানায়, স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতাকর্মী এই পুকুরটি ভরাটে সরাসরি সম্পৃক্ত রয়েছে। তারাই পাহাড় কাটা মাটি এনে জলাশয়টি ভরাট করছে। একইভাবে ভরাট করা হচ্ছে মাদামবিবিরহাট নেভী গেটস্থ ব্যাংক কলোনীর ফৌজদারী পুকুর। স্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান সীমা গ্রæপ নতুন করে আরো একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্মাণের উদ্দেশে এলাকাবাসীর কয়েকশ’ বছরের প্রাচীন জলাশয়টি ভরাট করে বেকায়দায় ফেলেছে হাজার হাজার মানুষকে। এই এলাকার একব্যক্তি মোঃ রবিউল হোসেনের ধারণা শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সবাইকে ম্যানেজ করেই ফৌজদারী পুকুর ভরাট চালিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে এত বড় একটি পুকুর ভরাট হলেও জলাশয় ভরাট বন্ধে ব্যবস্থা নিতে এগিয়ে আসেনি পরিবেশ অধিদপ্তর অথবা প্রশাসনের অন্য কোন দপ্তর। জানা যায়, এ ক্ষেত্রেও পাহাড় কাটা মাটি ব্যবহার করে পুকুরটি ভরাট করা হচ্ছে। আর এ মাটি সাপ্লাইয়ের দায়িত্বে রয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতাকর্মী।
ভরাট হচ্ছে মাদামবিবিরহাট চেয়ারম্যানঘাটা এলাকায় সংলগ্ন এলাকার মধু সাহা পুকুর। শীতলপুর কাসেমজুট মিল এলাকায় একটি পুকুর, কুমিরা রয়েল গেইট সংলগ্ন পশ্চিম পার্শ্বস্ত একটি বিশাল জলাশয়, বানুর বাজার এলাকায় বাইতুল আমান জামে মসজিদ সংলগ্ন চৌধুরী বাড়ি পুকুর। বানুর বাজারের পাশে ৫ একর আয়তনের বায়তুল আমান জামে মসজিদ পুকুরটি এ এলাকার বহু মানুষ যুগ যুগ ধরে ব্যবহার করে আসছে। এই পুকুরের পানি ব্যবহার করে এলাকার নারী-পুরুষ, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, মসজিদের মুসল্লী থেকে সবাই। এই পুকুরটি অতি ধীরে ভরাট করতে করতে এখন ছোট জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। এলাকার মানুষ এখন জরুরী প্রয়োজনে পানি পাচ্ছে না। বানুর বাজার বাইতুল আমান জামে মসজিদ সেংলগ্ন পুকুরের একাংশের অংশীদার সীতাকুন্ড উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, প্রভাবশালীরা প্রকাশ্যে পুকুর ভরাট করলেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এ বিষয়ে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার মিলছে না। বর্তমানে এ এলাকায় পানি শূন্যতা প্রকট হয়ে উঠেছে। পরিদর্শনকালে কুমিরার রয়েল সিমেন্ট গেইট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রয়েল সিমেন্ট কারখানার উল্টো দিকে পশ্চিমে বিশাল একটি জলাশয় ভরাট হচ্ছে প্রকাশ্যে। ট্রাকে ট্রাকে পাহাড়ের মাটি এনে ভরাট করা হচ্ছে জলাশয়টি। এ এলাকার বাসিন্দা মোঃ আমজাদ হোসেন বলেন, অনেক দিন ধরেই এ জলাশয় ভরাটের কাজ চলছে। তিনি বলেন, এ এলাকার নেতাকর্মীদের ম্যানেজ করে একব্যক্তি জলাশয়টি ভরাট করছে। এদিকে একই সাথে উপজেলাজুড়ে এভাবে পুকুর ভরাটের মহোৎসব নতুন নয়। স্থানীয়রা জানান, গত ৫ বছরেই এ উপজেলা থেকে অর্ধশত জলাশয় এভাবে হারিয়ে গেছে। এতে স্থানীয় প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর দারুণ বিরূপ প্রভাব পড়ছে। অনেক স্থানে পানির অভাবে শুকনো মৌসুমে চাষাবাদ পর্যন্ত ব্যাহত হচ্ছে। ব্যবহারের পানিও পাওয়া যাচ্ছে না এমন জায়গাও বহু। কিন্তু এসব ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জোরালো কোন পদক্ষেপ নেই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুহুল আমীন বলেন, বিনা অনুমতিতে ব্যক্তিগত পুকুর বা জলাশয় ভরাটেরও কোন নিয়ম নেই। কেউ ব্যক্তিগত পুকুর ভরাট করতে চাইলেও ফায়ার সার্ভিস, পরিবেশ অধিদপ্তর, উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদের অনুমতি নিতে হবে। প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইনে তা স্পষ্ট উল্লেখ করা আছে। কিন্তু কেউ গোপনে পুকুর ভরাট করলে কিছু করার থাকে না। এতে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়। যেহেতু এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় স্থানীয় পরিবেশের তাই এলাকাবাসী সোচ্চার হলেই এ ধরনের জলাশয় ভরাট অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ