Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফুলবাড়ীতে আমের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা

গাছে গাছে ভরে গেছে মুকুল

| প্রকাশের সময় : ৯ মার্চ, ২০১৭, ১২:১০ এএম

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) উপজেলা সংবাদদাতা : শীতের জীর্ণতাকে বিদায় জানিয়ে, ফুলে ফুলে সেজেছে ঋতুরাজ বসন্ত, কোকিলের কুহু কুহু ডাক, রঙ্গিন-বন আর ফাগুনের বাহারি ফুলে প্রকৃতি যেমন সেজেছে বর্ণিল সাজে তেমনি দক্ষিণা হাওয়া আর বাতাসে আমের মুকুলের মৌ মৌ গন্ধে ভরে গেছে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার আমবাগানগুলো। গাছে গাছে আমের মুকুলের ভরপুর ঘ্রাণ আর প্রকৃতির স্বভাবসুলভ বৈচিত্রে বাগানগুলোর ৬০ শতাংশ গাছেই মুকুল এসেছে। মৌমাছিরা দল বেঁধে গুনগুন শব্দে বসতে শুরু করেছে আমের মুকুলে।
গাছের শাখা-প্রশাখায় ফোটা ফুলগুলো যেন ফাগুনের রূপে মাতাল হয়ে উৎসবের জানান দিচ্ছে। ঋতু বৈচিত্রের দেশে আমের অন্যতম শহর দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর সবুজ প্রকৃতির আমেজ অনেকটা এমনই আবেগের। বসন্তের ফাগুন আর আমের মুকুল যেন একই সুতোয় গাঁথা। তাইতো বছরের এই নির্দিষ্ট সময়জুড়ে চাষী তো বটেই, কমবেশি সকল শ্রেণী পেশার মানুষেরই দৃষ্টি থাকে সবুজ পাতায় মোড়ানো আম গাছের মগডালে। বাগান মালিক, কৃষিবিদ ও আমচাষিরা আশা করছেন বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ উপজেলায় আমের বাম্পার ফলন হবে। উপজেলার সব এলাকাতেই কম বেশী আমের বাগান রয়েছে, লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছর বাগানের সংখ্যাও বাড়ছে।
তবে নতুন আমবাগানগুলো প্রায় বনেদী জাতের। এখানে নিয়মিত জাত আম্রপালী, ন্যাংরা, গোপালভোগ, হাড়ীভাংগা, ক্ষিরসাপাতি, ফজলি, মোহনা, রাজভোগসহ বিভিন্ন জাতের আম চাষের উপযুক্ত হওয়ায় চাষিরা নিজ উদ্যোগে প্রথমে বিভিন্ন স্থান থেকে চারা সংগ্রহ করে আমের বাগান সৃজন করলেও বর্তমানে বাগান মালিকরা নিজেরাই চারা উৎপাদন করে তাদের ভাগ্য উন্নয়নের প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে সুফলও পেয়েছেন অনেকে।
উপজেলার বেতদিঘী ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের বাগান মালিক সামিউল ইসলাম ও মাদিলা হাট গ্রামের আবুল কালাম জানান অপেক্ষাকৃত উঁচু এবং ধান চাষের উপযোগী নয় এমন জমিতেই আম বাগান করা হয়। এ বছরের আবহাওয়া আমের মুকুলের জন্য অনুকূলে আছে অনেকটাই। এরই মধ্যে অনেক গাছে ব্যাপক হারে মুকুল এসেছে। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে এবারও বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। বাগান মালিকরা জানান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শে গাছে মুকুল আসার ১৬ থেকে ২১ দিন আগে তারা পুরো গাছে সাইমেথ্রিন ও কারারীল গ্রুপের কীটনাশক দিয়ে ভালোভাবে স্প্রে করে ধুয়ে দিয়েছেন। এতে গাছে বাস করা হপার বা শোষক জাতীয় পোকাসহ অন্যান্য পোকার আক্রমণ রক্ষা পাওয়া যাবে। যদি সঠিক সময়ে হপার বা শোষক পোকা দমন করা না যায় তাহলে আমের ফলন কমে যেতে পারে বলে জানান এই আম চাষিরা।
এদিকে উপজেলার আলাদীপুর, শিবনগর, বাসুদেবপুর এলাকায় আমবাগান বেশী। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, আম চাষিরা তাদের বাগানের ধরা মুকুল যাতে নষ্ট না হয় এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন। আম বাগানের মালিক মহেশপুর গ্রামের আতিয়ার রহমান জানায় কোন প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এ বছর আমের বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একই কথা বলেন, আমচাষি আব্দুল আলীম। তিনি বলেন, যে জমিতে অন্য কোন ফসল হয়না সেখানে আমবাগান করলে অধিক মুনাফা পাওয়া যায়।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, আমের মুকুল আসার আগে ও পরে যেমন আবহাওয়ার প্রয়োজন, এখানে তা বিরাজমান। ডিসেম্বরের শেষ থেকে মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আমের মুকুল আসার আদর্শ সময়। এ সময়ে মুকুলের প্রধান শত্রু কুয়াশা, এখন পর্যন্ত কুয়াশা কম এবং আকাশে উজ্জ্বল রোদ থাকায় আমের মুকুল সম্পূর্ণ প্রস্ফুটিত হওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ।
সংশ্লিষ্টরা একটু সতর্ক হলেই শতভাগ ফলন পাওয়া সম্ভব। তাই আম বাগানের সঠিক পরিচর্যা করতে আমচাষিদের সব রকম পরামর্শ দেয়া হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এ অঞ্চলে আম ও লিচুর বাম্পার ফলন হবে বলে উপজেলা কৃষি বিভাগ আশা করছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ