Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পোল্ট্রিতেও স্বয়ংসম্পূর্ণ এখন বগুড়া

বিদেশে রফতানি সময়ের ব্যাপার মাত্র

| প্রকাশের সময় : ৯ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে : চাল, আলু, মরিচের পর বগুড়া এবার পোল্ট্রি সেক্টরেও স্বয়ংসম্পূর্ণ অবস্থানে পৌঁছে গেছে বলে জানিয়েছেন বগুড়ার প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা এবং পোল্ট্রি ও হ্যাচারী সেক্টরের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, বগুড়া জেলায় এখন কমপক্ষে ৬ হাজার পোল্ট্রি খামার চালু রয়েছে আর বেসরকারি খাতের এই খামারগুলোতে গোশত, ডিম ও বাচ্চা উৎপাদন ও তা বিপণনের ধাপে ধাপে আনুমানিক ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়ে ওই মানুষের জীবন জীবিকা নির্বাহ হচ্ছে। পোল্ট্রি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাভাবিকভাবে ব্যাংক ঋণসহ সরকার প্রদত্ত অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পেলে এই খাতে বর্তমানের তুলনায় তিনগুন সাফল্য লাভ হবে সময়ের ব্যাপার মাত্র।
বগুড়ার প্রাণিসম্পদ বিভাগের সূত্রে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, গত ২০ বছরে বগুড়ার পোল্ট্রি সেক্টরে কয়েক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের বিপরীতে প্রায় ২৫/৩০ হাজার পোল্ট্রি খামার গড়ে উঠলেও বর্তমানে ছোট-মাঝারী ও বড় আকারের মিলিয়ে টিকে আছে কমবেশি ৬ হাজার পোল্ট্রি ফার্ম। সবচে বেশি রয়েছে ছোট (৫০০ থেকে ১ হাজার মুরগি) এরপর মাঝারী (১ থেকে ৩ হাজার) মিলিয়ে অর্ধেক এবং ৩ থেকে তদুর্ধ মুরগির খামার রয়েছে বাকি অর্ধেক।
এই খামারগুলো থেকে উৎপাদিত গোশত হিসেবে ব্যবহ্যত ব্রয়লার মুরগি এখন জেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ পার্শবর্তী জেলাগুলোতেও নিয়মিত সরবরাহ হচ্ছে। একই ভাবের লেয়ার মুরগির উৎপাদিত লাখ লাখ ডিম ও স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে চলে যাচ্ছে রাজধানীসহ সারাদেশেই। দীর্ঘদিন ধরেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক হ্যাচারীর অভাবে রাতারাতি গড়ে ওঠা হাজার হাজার পোল্ট্রি ফার্ম শুধু বাচ্চার অভাবেই বন্ধ হয়ে গেছে খামার। বগুড়ার হ্যাচারীগুলো তাকিয়ে থাকতো একমাত্র সরকারি খামারের ম্যানেজারের দিকে। কিন্তু লাখ লাখ বাচ্চার মাসিক চাহিদার বিপরীতে সরকারি খামারের বাচ্চা উৎপাদন ক্ষমতা মাত্র কয়েক হাজার। এই খামারে উৎপাদিত বাচ্চা পেত কেবলই ম্যানেজারের মর্জি মাফিক কেউ কেউ যারা সরকারি দলের রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্টরাই, জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। ভুক্তভোগীরা আরো বলেন, ফলে বহুজাতিক কোম্পানী পরিচালিত হ্যাচারী আর ভারত থেকে বৈধ-অবৈধ উভয় পথেই আনা মুরগির বাচ্চার উপর নির্ভর করতে হতো খামার মালিকদের। ভারত আনা বাচ্চার সাথে আসতো ‘বার্ড ফ্লু’র জীবাণু। যা’ পোল্ট্রি খাতের জন্য ছিল অবধারিত এক মহাবিপদ!
কিন্তু একাধারে ব্রয়লার, লেয়ার, ডিম ও মুরগির বাচ্চা উৎপাদনের সাথে যুক্ত ‘ভাই ভাই পোল্ট্রি’ খামারের মালিক মাত্র ৩৫ বছর বয়সী সফল খামারী মোকলেছুর রহমান মুক্তার ইনকিলাবকে বলেন, ‘নিজের প্রযোজনেই হ্যাচারী দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে হ্যাচারী প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে বার বার প্রতারিত হয়েছি, শিকার হয়েছি শক্ত ষড়যন্ত্র বড় বাধার, তবে দমে যাইনি। এখন আমার খামার থেকে উৎপাদিত বাচ্চা চলে যাচ্ছে ময়মনসিং, জামারপুর ও টাঙ্গাইল জেলার খামোরে।’
তিনি আরো জানান, ‘৪৫ জন কর্মি সার্বক্ষণিকভাবে তার খামার পরিচালনায় যুক্ত আছে, যাদের সর্বনিম্ন বেতন মাসে ৮ হাজার টাকা, সাথে ডিউটিকালীন খাওয়া-দাওয়াসহ অন্যান্য সুবিধা।’
জাপানে প্রবাস জীবন কাটিয়ে আসা পোল্ট্রি উদ্যোক্তা ও অ্যাসোসিয়েশন নেতা মঈন জানান, বগুড়ায় এখন ৫৫টি মুরগি ও ৬টি হাঁসের বাচ্চা উৎপাদনকারী হ্যাচারী রয়েছে। যেগুলোতে উৎপাদিত বাচ্চা এখন বগুড়ার বাইরের জেলাগুলোর হ্যাচারীতে নিয়মিত যাচ্ছে। বগুড়া পোল্ট্রি অ্যাসেসিয়েশন এর সাধারণ সম্পাদক নুরুন আমিন লিডার বলেন, ‘সহজে ব্যাংক ঋণসহ সরকার প্রদত্ত সুবিধাসমূহ সহজে পাওয়া গেলে বগুড়ার পোল্ট্রি মালিকরা শুধু উৎপাদনকে দ্বিগুন বা তিন গুনই করবে না, বরং স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে পোল্ট্রি কাতে উৎপাদিত ডিম ও গোশত প্যাকেটজাত করে তা বিদেশে রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আমদানির নিশ্চিত ব্যবস্থা করবে।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পোল্ট্রি

২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ