Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সামুদ্রিক সহযোগিতা জোরদারের আহ্বান

শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রকাশের সময় : ৮ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:২৬ এএম, ৮ মার্চ, ২০১৭

শেখ হাসিনার সঙ্গে ইন্দোনেশিয়া ও শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টসহ ৫ নেতার সাক্ষাৎ
বিশেষ সংবাদদাতা : শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ ভারত মহাসাগরের জন্য সামুদ্রিক সহযোগিতা জোরদার করে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করতে ভারত মহাসাগর রিম অ্যাসোসিয়েশন (আইওআরএ) নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি এ অঞ্চলের জন্য দক্ষ নাবিক তৈরিতে বাংলাদেশে ভারত মহাসাগর কারিগরি ও বৃত্তিমূলক একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনেরও প্রস্তাব করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল মঙ্গলবার জাকার্তা কনভেনশন সেন্টারে ভারত মহাসাগর রিম অ্যাসোসিয়েশন সামিটে ‘একটি শান্তিপূর্ণ স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ ভারত মহাসাগরের জন্য রিম সামুদ্রিক সহযোগিতা জোরদারকরণ’ শীর্ষক বিতর্ক অধিবেশনে প্রদত্ত ভাষণে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্য হচ্ছে মহাসাগর ও সমুদ্রপথ উন্নয়নের মাধ্যমে রিম দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশকে রূপান্তরের প্রচেষ্টা চালানো। আসুন সামুদ্রিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করে শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল এবং সমৃদ্ধ ভারত মহাসাগরের জন্য নিজেদের উৎসর্গ করি। আসুন একসঙ্গে তরি ভাসাই।
শেখ হাসিনা আইওআরএ নেতাদের প্রতি সমুদ্রগামী নাবিকদের নিরাপত্তা এবং পেশাগত অধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তাদের দক্ষতা এবং নিবেদিত কার্যপ্রণালি কখনো কখনো অনাকাক্সিক্ষত পরীক্ষার সম্মুখীন হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী এ অঞ্চলের জন্য দক্ষ নাবিক পুল তৈরিতে বাংলাদেশে ভারত মহাসাগর কারিগরি ও বৃত্তিমূলক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেন।
বাংলাদেশকে বঙ্গোপসাগর এবং ভারত মহাসাগরের উপকূলবর্তী দেশ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে এর সমুদ্র সম্পদ টেকসইভাবে ব্যবহারের ওপরই ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তা এবং সামাজিক কল্যাণ নিহিত রয়েছে।
তিনি বলেন,  আমরা এসডিজি-১৪-কে আমাদের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সম্পৃক্ত করেছি এবং সমুদ্র অর্থনীতির দিকে আমাদের মনঃসংযোগকে নবায়ন করেছি। প্রধানমন্ত্রী এ সময় সমুদ্রসীমানা নিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ বিরোধ মীমাংসা আমাদের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে বলেও উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যদিও আমরা এ বিষয়টিতে সম্পূর্ণভাবেই অবগত যে সমুদ্র এলাকার সম্পদ আহরণের সামর্থ্যরে ওপরই আমাদের এই সাফল্য নির্ভর করছে। ভারত মহাসাগর রিম অ্যাসোসিয়েশন এবং সদস্যভুক্ত দেশগুলোকে আমরা আমাদের আকাক্সক্ষাকে বাস্তবে রূপ দেয়ার প্রকল্পের জন্য একটি প্রাকৃতিক বাসস্থান হিসেবেই আমরা দেখছি উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। ভারত মহাসাগরকে আমাদের নিরাপত্তা, যোগাযোগ, শান্তি এবং সমৃদ্ধির জন্য অন্যতম মাধ্যম হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা বিশ্বায়নের এই যুগে একটি লাইফলাইন, যার মাধ্যমে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক কনটেইনার জাহাজ, তিন ভাগের একভাগ বাল্ক কার্গো এবং তিন ভাগের দুই ভাগ তেলের চালান পরিবাহিত হয়।
তিনি বলেন, যদি বøু ইকোনমিকে আমাদের ভবিষ্যৎ অর্থনীতির কৌশল হিসেবে গ্রহণ করতে হয় তাহলে আমাদের সমুদ্রকে বন্ধুত্বের সেতুবন্ধ হিসেবে ব্যবহার করে এই অঞ্চলের উত্তেজনা প্রশমন এবং সমুদ্র পথ ব্যবহারের স্বাধীনতা ও আইওআরএ’র কৌশল অনুযায়ী সহযোগিতাকে জোরদার করতে হবে। বøু ইকোনমি এখন সব আইওআরএ সদস্য রাষ্ট্রেরই অভিন্ন স্বার্থ’, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের প্রশ্নে বাংলাদেশে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির উল্লেখ করে বলেন, ব্যাপক অর্থে আমাদের এই নীতির আওতায় নিরাপদ সমুদ্র এবং সামুদ্রিক নিরাপত্তাজনিত বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থা প্রতিহত করায় আইওআরএ’র যে ঘোষণা তা আইওআরএ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রকে আরো প্রসারিত করবে।
জ্বালানি নিরাপত্তার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ মনে করে টেকসই জ্বালানি অনুসন্ধানের জাতীয় প্রচেষ্টার বিষয়ে আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রভাব ইতিবাচক। বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই পার্শ¦বর্তী দেশগুলোর সঙ্গে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বাণিজ্য স¤প্রসারণের এবং সমুদ্র ও সামুদ্রিক শিল্পের ওপর ভিত্তি করে বায়ুমন্ডলীয় শক্তি ব্যবহার করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে। ভারত মহাসাগরের কূলবর্তী দেশগুলো আমাদের এই উদ্যোগে অংশগ্রহণের মাধ্যমে জ্বালানি নিরাপত্তার এই নবদিগন্ত উন্মোচনে শামিল হবেন বলেও প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
শান্তি ও উন্নয়নের জন্য যোগাযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ যোগাযোগকে অধিক গুরুত্ব প্রদান করেছে। তবে, আমরা শুধু অবকাঠামোগত যোগাযোগই নয় চিন্তা-চেতনা, উদ্ভাবন, ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি, সংস্কৃতি এবং পর্যটন ক্ষেত্রে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে মানসিক যোগাযোগও স্থাপন করতে চাই। বিশেষ করে মানবীয় যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ এবং সমৃদ্ধ সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় আমাদেও সর্বোত প্রচেষ্টা সত্তে¡ও আমরা এখনো জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবের কাছে জিম্মি এবং এর মানে হলো আমরা সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ভীতিকর অবস্থার দিকেই অগ্রসর হচ্ছি।
 শেখ হাসিনা বলেন, এটা অনুমিতই যে, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা এক মিটার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ তাঁর মহামূল্যবান কৃষিজমির এক-তৃতীয়াংশ হারাবে এবং প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ লোক বাস্তুচ্যুত হবে।
তিনি বলেন, আমরা জলবায়ুর বৈশ্বিক এই উষ্ণতা সৃষ্টির জন্য দায়ী না হলেও আমরাই সবচেয়ে খারাপ ভুক্তভোগী। জলবায়ুগত ন্যায় বিচার আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। কাজেই বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করেছি।
আজকের দিনটি বাংলাদেশের জন্য স্মরণীয় একটি দিন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালের এই দিনে বাঙালির জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন। বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণ বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণকে স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করে। আমি বঙ্গবন্ধুর অসামান্য অবদানকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি এবং বাংলার মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী সামিটের উদ্বোধনী পর্বে যোগ দেন। ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট ও আইওআরএ-এর বর্তমান চেয়ারম্যান জোকো উইদোদো আনুষ্ঠানিকভাবে এই শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। এ সময় ভারত মহাসাগরের তীরবর্তী ২১টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান এবং প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। আইওআরএ-এর ৭ ডায়লগ পার্টনারসহ উল্লেখযোগ্যসংখ্যক আমন্ত্রিত অতিথিও অনুষ্ঠানে যোগ দেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইন্দোনেশিয়ার ঐতিহ্যবাহী ‘গেনডাং পাপুয়া’ (ছোট ঢোল) বাজিয়ে স্থানীয় শিল্পীরা ঐতিহ্যবাহী নৃত্য পরিবেশন করেন।
পরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীসহ রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের উদ্দেশে তারা বাদ্যযন্ত্র পরিবেশন করেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীও পরে অতিথিদের উদ্দেশে কিছুক্ষণের জন্য বাদ্য বাজান।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব গেদলেইলেকিসা জুমা, ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট আবদ্রাববুহ মানসুর হাদি, শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট মৈত্রিপালা সিরিসেনা, মাদাগাসকারের প্রেসিডেন্ট হেরি রাজাওনারিয়ামপিয়ানিনা, মোজাম্বিকের প্রেসিডেন্ট ফিলিপ জাসিনটো নাইয়ুসি, ভারতের ভাইস-প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হামিদ আনসারী, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী সেরি নাজিব রাজাক, কমোরোসের ভাইস প্রেসিডেন্ট আজালি আসোয়ুমানি, সিসিলি’র ভাইস প্রেসিডেন্ট ভিনসেন্ট মেরিটন ও অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম ট্রানবুল এই শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন।
আইওআরএ’র ২০তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এই শীর্ষ সম্মেলনের স্বাগতিক দেশ ইন্দোনেশিয়া। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ভারত মহাসাগরের তীরবর্তী দেশসমূহ নিয়ে আইওআরএ’র এই জোট।
১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথম ইন্দোনেশিয়ায় তিনদিনব্যাপী শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ বছরের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘স্ট্রেনথিং মেরিটাইম কো-অপারেশন ফর এ পিসফুল, স্ট্যাবল এন্ড প্রসপরাস ইন্ডিয়ান ওশান।’ এর আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনস্থলে পৌঁছলে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো তাকে অভ্যর্থনা জানান। পরে প্রধানমন্ত্রী আইওআরএ শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে এক ফটোসেশনে যোগ দেন।
সম্মেলন আইওআরএ’র ২১টি সদস্য রাষ্ট্রের নেতৃবৃন্দ এবং ৭ ডায়লগ পার্টনার ছাড়াও অন্যান্য বিশেষ আমন্ত্রিত অতিথিদের মাঝে পারস্পরিক সহযোগিতা ও ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সংগঠনটির সদস্য রাষ্ট্রগুলো হলো- অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, কমোরোস, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, কেনিয়া, মাদাগাসকার, মালয়েশিয়া, মরিশাস, মোজাম্বিক, ওমান, সিসিলি, সিঙ্গাপুর, সোমালিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রিলংকা, তাঞ্জানিয়া, থাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইয়েমেন। এসোসিয়েশনের ডায়লগ পার্টনার যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, জার্মানি ও মিসর। সংগঠনটির ডায়লগ পার্টনার হচ্ছে চীন, মিসর, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র।
মিয়ানমারের শরণার্থীদের ফেরত পাঠাতে ইন্দোনেশিয়ার সহযোগিতা কামনা
শেখ হাসিনার সঙ্গে ইন্দোনেশিয়া ও শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টসহ ৫ নেতার সাক্ষাৎ
ইন্দোনেশিয়া সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো ও শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মৈথ্রিপালা সিরিসেনার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারত, জাপান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের তিন প্রতিমন্ত্রীও সাক্ষাৎ করেছেন। এসব বৈঠকে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় ছাড়াও সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ মোকাবেলার বিষয় আলোচনায় আসে। ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টের সাথে বৈঠকে মিয়ানমারের শরণার্থীদের ফেরত পাঠাতে দেশটির সহযোগিতা কামনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জোট ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনভুক্ত (আইওআরএ) দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের নিয়ে আয়োজিত লিডার সামিট উপলক্ষে ইন্দোনেশিয়া সফরে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ও সাক্ষাৎগুলোর পর পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম বিষয়ক ইউনিটের প্রধান (সচিব) রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খোরশেদ আলম ও ইন্দোনেশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মেজর জেনারেল আজমল কবির।
শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, আজ জাকার্তা কনভেনশন সেন্টারে আইওআরএ লিডার্স সামিটের সাইড লাইনে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিয়ানমারের শরণার্থী সমস্যাটি আলোচিত হয়। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে মিয়ানমারের শরণার্থীদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ভূমিকা নেয়ার জন্য ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টের প্রতি অনুরোধ জানান।  
তিনি বলেন, মিয়ানমারের শরণার্থীরা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা এবং এর সমাধান প্রয়োজন। ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্র সচিব স¤প্রতি বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের এই সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে এদুটি দেশ সফর করেছেন। শহীদুল হক বলেন, রেল, ওষুধশিল্প এবং জ্বালানি খাতে পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়েও দুই নেতার বৈঠকে আলোচনা হয়।
সিরিসেনার বৈঠক নিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার সম্পর্ক আরও কীভাবে জোরদার করা যায় এ ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। ব্যবসা বাণিজ্য বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করতে দুই নেতা সম্মত হয়েছেন জানিয়ে শহীদুল হক বলেন, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য উন্নয়নে এফটিএ’র (ফ্রি টেড অ্যাগ্রিমেন্ট/মুক্তবাণিজ্য চুক্তি) বিষয়টি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী অনুরোধ করেছেন সিরিসেনাকে। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে এফটিএ’র বিষয়টি খুবই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এটি সম্পন্ন করার জন্য দুই নেতাই সম্মত হয়েছেন।
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরের বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের সফরের কথা বেশ কিছুদিন ধরে চলছে। প্রধানমন্ত্রী সেটা আবারো উল্লেখ করেছেন। আমরা আশা করছি এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে আসতে পারেন।
পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাদা আলাদাভাবে সাক্ষাৎ করেন জাপান, ভারত, আমিরাতের একজন করে প্রতিমন্ত্রী।
পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক জানান, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতকালে জাপানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নবুয়ো কিশি সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের পদক্ষেপের প্রশংসা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রতিমন্ত্রী মাতিহা সালেম আল শামসি দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক সুদৃঢ় হতে থাকার বিষয়ে আলোচনা করেন। পররাষ্ট্র সচিব সাংবাদিকদের জানান, সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী আমিরাতের ভিসা পদ্ধতিকে সহজ করার সুপারিশ করেন। বিশেষ করে বিজনেস ভিসার বিষয়ে। এ বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদ সঙ্গীদের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে প্রধানমন্ত্রীকে বলেন আমিরাতের প্রতিমন্ত্রী। সবশেষে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ভি কে সিং।
শহীদুল হক জানান, সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফর নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা আশা করছি একটা সফল ভারত সফর হবে এপ্রিল মাসে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭ এপ্রিল ভারত যাচ্ছেন
রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রে যুক্ত হতে চায় ভারত

ক‚টনৈতিক সংবাদদাতা
চারদিনের সরকারি সফরে আগামী ৭ এপ্রিল শুক্রবার ভারতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরের কর্মসূচি ইতোমধ্যে চ‚ড়ান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে নয়াদিল্লির ক‚টনৈতিক সূত্র। আলোচিত এ সফরে শেখ হাসিনা নয়াদিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে অবস্থান করবেন। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ও ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে সাক্ষাত করবেন। সবশেষে ১০ এপ্রিল শেখ হাসিনা দেশে ফিরবেন।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে যেসব ভারতীয় সৈন্য প্রাণ দিয়েছেন; তাদের কয়েকটি পরিবারকে এবার আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা জানাবেন শেখ হাসিনা। এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের ব্যবসায়ীদের এক সম্মেলনে বক্তব্য রাখবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মানে রাষ্ট্রীয় ভোজের আয়োজন থাকবে। ভারত সফরকালে শেখ হাসিনা ব্যক্তিগত সফরে আজমির শরিফ যেতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রীর এবারের ভারত সফরে ৪০টি চুক্তি ও সমঝোতা নিয়ে কাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দু’টি সমঝোতা স্মারক হলো সামরিক সহযোগিতা বিষয়ে। এর একটি হলো দ্বিপক্ষীয় সামরিক সহযোগিতাবিষয়ক সার্বিক কাঠামো বিষয়ক। এর অধীনে বর্তমানে দুই দেশের সামরিক বাহিনীর যৌথ মহড়া পরিচালিত হবে। পাশাপাশি প্রশিক্ষণ বিনিময় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সামরিক বাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা করা হবে। পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা আছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের আণবিক শক্তি কমিশনের সঙ্গেও ভারতের সংশ্লিষ্ট কমিশনের আলাদা চুক্তি হবে। এ দুই চুক্তির মাধ্যমে মূলত রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্পে যুক্ত হতে চায় ভারত।



 

Show all comments
  • MD Elias ৮ মার্চ, ২০১৭, ১:২৬ এএম says : 0
    বাংলাদেশে ভারত মহাসাগর কারিগরি ও বৃত্তিমূলক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব খুব যুগোপযোগী মনে হচ্ছে....
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ