পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মো: শামসুল আলম খান : দু’টি ঘটনার সময়ের ব্যবধান মাত্র ৩ বছর ১১ দিন। ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে জঙ্গি হামলা চালিয়ে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছিল মৃত্যুদÐপ্রাপ্ত সালাহউদ্দিন ওরফে সালেহীনসহ ৩ শীর্ষ জঙ্গি নেতা। একইভাবে গাজীপুরের টঙ্গীতে প্রিজন ভ্যানে ককটেল ছুড়ে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা ছিল নিষিদ্ধ হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের (হুজিবি) প্রধান মুফতি আব্দুল হান্নানকে।
ওই সময় জঙ্গিরা গুলি ছুড়ে এক পুলিশ সদস্যকে হত্যা করলেও এবার শুধুমাত্র ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েই পাততাড়ি গুটিয়েছে। স্পট থেকেই ধরা পড়েছে হামলার নেতৃত্ব দানকারী যুবক বয়সী মাদ্রাসা পড়–য়া ছাত্র মোস্তফা কামাল। জঙ্গিরা সেবার ছিনতাই মিশনে সফল হলেও এবার পুলিশ সাহসিকতার সঙ্গে তাদের টার্গেট রুখে দিয়েছে। ফিল্মি স্টাইলে এ দুই উপজেলাতেই জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনার সময় কাকতালীয়ভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ তালুকদার।
মঙ্গলবার সকালে ইনকিলাবের সঙ্গে আলাপচারিতায় টঙ্গী থানার বর্তমান এ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দু’টি ঘটনারই অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। ত্রিশালে পুলিশ প্রটেকশন না থাকলেও টঙ্গীতে পর্যাপ্ত প্রটেকশন ও পুলিশ অধিক মাত্রায় সতর্ক থাকায় বড় ধরনের নাশকতা থেকে রক্ষা পেয়েছে বলেও মনে করেন তিনি। জানা যায়, ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রæয়ারি গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে কোনো রকম পুলিশি প্রকেটশন ছাড়াই ময়মনসিংহের আদালতে আনার পথে ত্রিশালের সাইনবোর্ড এলাকায় হামলা চালিয়ে জঙ্গিরা ছিনিয়ে নিয়ে যায় জেএমবির মৃত্যুদÐপ্রাপ্ত সালাহউদ্দিন ওরফে সালেহীন, রাকিব হাসান ও যাবজ্জীবন দÐপ্রাপ্ত বোমারু মিজানকে।
সে সময়ে ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছিলেন ফিরোজ তালুকদার। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ত্রিশাল আর টঙ্গীর জঙ্গি ছিনতাইয়ের স্টাইলে কোনো মিল নেই। ত্রিশালের ছিনতাই পরিকল্পনা ছিল ঠাÐা মাথার। সেই সময়ে পুলিশকে না জানিয়েই আদালতে জঙ্গিদের হাজির করানো হচ্ছিল। আর এবার টঙ্গীতে পুলিশ ছিল সতর্ক।
গাজীপুরের টঙ্গীতে জঙ্গিরা প্রথমে চারটি ককটেল চার্জ করে। এ সময় পুলিশ সদস্যরা অস্ত্র তাক করতেই তারা দৌড়ে পালিয়ে যায়। মোস্তফা কামাল নামে একজনকে হাতেনাতে ধরা সম্ভব হয়েছে বলে উল্লেখ করেন ফিরোজ তালুকদার। তার ভাষ্যে, ‘ককটেল মারতেই আমরা গাড়ি ¯েøা করেছি। অ্যাকশনে গিয়েছি। এ কারণেই ওরা আর অগ্রসর হতে পারেনি।’
তিনি জানান, ত্রিশালে জঙ্গিরা প্রথমে ট্রাক দিয়ে প্রিজন ভ্যান থামিয়েছিল। আর এবার তারা প্রথমেই সরাসরি ককটেল মেরেছে। সেবার গুলি করে এক পুলিশ সদস্যকে খুন করলেও এবার সেই সুযোগ পায়নি।
তবে একটি ক্ষেত্রে দু’টি ঘটনারই মিল খুঁজে পেয়েছেন জানিয়ে ফিরোজ তালুকদার বলেন, ত্রিশালের ঘটনায় একাধিক জঙ্গি বিভিন্ন গ্রæপে ভাগ হয়ে মিশন পরিচালনা করেছিল। টঙ্গীতেও তাদের দু’টি টিম কাজ করেছে। একটি টিম ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে চেয়েছিল এবং আরেকটি টিম পুলিশের ওপর হামলা করে জঙ্গিদের ছিনিয়ে নিতে চেয়েছিল।
জঙ্গি কামালের অন্তর্ধান রহস্য : চার ভাই-বোনের মধ্যে তৃতীয় মোস্তফা কামাল। ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার পূর্ব পাগলী গ্রামের নি¤œবিত্ত পরিবারের একমাত্র মাদ্রাসা পড়–য়া কামাল। নরসিংদীর শেখের চরের জামিয়া এমদাদিয়া মাদ্রাসায় পড়ার সুবাদে বাড়িতে যাতায়াত কমিয়ে দেয়।
পড়াশোনার খরচ বাবদও প্রতি মাসে পরিবার থেকে ১ হাজার কী ১ হাজার ৫শ’ টাকা বিকাশের মাধ্যমে নিত। গত ১৪ ফেব্রæয়ারি মাদ্রাসা থেকে ছুটি নিয়ে যাতায়াত ভাড়া বাবদ বাড়ি থেকে আবারো ৫শ’ টাকা বিকাশের মাধ্যমে দিতে বলে। বড় ভাই সেই টাকা পাঠিয়ে দিলেও বাড়ি ফেরেনি কামাল।
শুধু বলেছিল বন্ধুর বাড়ি বেড়িয়ে ক’দিন বাদেই বাড়ি ফিরবে। কিন্তু এরপর তার আর কোনো হদিস ছিল না। মূলত মাদ্রাসা থেকে ছুটি নিয়ে বাড়ি ফেরার কথা বলেই জঙ্গি মিশনের জন্য লাপাত্তা বনে গিয়েছিল কামাল।
২০ দিন পর প্রকাশ্যে এসেছেন গাজীপুরের টঙ্গীতে প্রিজন ভ্যানে ককটেল ছুড়ে নিষিদ্ধ হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের (হুজিবি) প্রধান মুফতি আব্দুল হান্নান ও তার সহযোগীদের ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টার নেতৃত্ব দানকারী এ জঙ্গি।
কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। পুলিশ ও জনতার সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই ধরা পড়তে হয়েছে তাকে। আর এ ঘটনায় হতবাক তার পরিবারের সদস্যরা।
মঙ্গলবার ময়মনসিংহ জেলা ও টঙ্গী থানা পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য।
ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, প্রায় চার বছর আগে তারাকান্দার বড় মসজিদ মাদ্রাসা থেকে হাফেজ হয় মোস্তফা কামাল। পরে আরো দু’বছর ময়মনসিংহের বড় মসজিদের মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। প্রায় পৌনে দুই বছর আগে নরসিংদীর শেখের চরের জামিয়া এমদাদিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হয়। তার বাবা মোফাজ্জল হোসেন পেশায় কৃষক।
ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ নুরুল ইসলাম জানান, প্রতি মাসের ৪ থেকে ৫ তারিখের দিকে বাড়ি থেকে ১ হাজার থেকে ১৫শ’ টাকা করে নিত মোস্তফা কামাল। গত কোরবানির ঈদের পর একবার সে বাড়ি এসেছিল।
জঙ্গি কামালের বাবা ও দুই ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদ : জঙ্গি মোস্তফা কামালের বাবা মোফাজ্জল হোসেন (৬০) ও তার দুই ভাই আব্দুল মোতালেব (২৪) ও শরীফুল ইসলামকে (১৮) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে এনেছে জেলা পুলিশ।
মঙ্গলবার দুপুরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জেলা পুলিশ সুপারের (এসপি) কার্যালয়ে ডেকে আনা হয়। এর আগে সোমবার রাতেই কামালের মা আছিয়া খাতুনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তারাকান্দা থানা পুলিশ।
ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ নুরুল ইসলাম স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, সোমবার রাতেই মোস্তফা কামালের বাড়ি রেইড করা হয়। বিস্ফোরক ও জঙ্গিবাদ সম্পৃক্ত বই খোঁজা হয়। কামালের সঙ্গে পরিবারের সম্পৃক্ততা রয়েছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হয়। কিন্তু প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে পরিবারের সদস্যরা ইনোসেন্ট। তবে তাদের আটক করা হয়নি বলে জানান তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।