পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কলকাতা থেকে আবু হেনা মুক্তি ঃ লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান ফুরফুরা দরবার শরীফে দিনব্যাপী জামায়াতের সাথে ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। ভারতের একাধিক টিভি চ্যানেলে গতকালের মাহফিলে ১৫-২০ লাখ লোকের জমায়েতের খবর প্রচার করেছে। গতকাল দিনব্যাপী সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে ইবাদতবন্দীগী ও জিকির আজগর। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ফুরফুরা দরবার শরীফের মাহফিলে গত বছরের তুলনায় এবার মানুষের বেশি সমাগম ঘটেছে। আজ বুধবার বাদ ফজর আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে ঈসালে সাওয়াবের সমাপ্তি হবে।
আল্লামা পীরজাদা হযরত মাও: জবিহুল্লাহ সিদ্দিকী (মাদ্দা:) বলেন, ভারতীয় উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম ইসলামী চিন্তাবিদ, সমাজ সংস্কারক এবং ইসলাম প্রচারের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ছিলেন দাদা হুজুর মোজাদ্দেদে জামান হযরত আবু বক্কর সিদ্দিকী (রহ:)। দাদা হুজুর কোটি কোটি মুসলমানের বড় আদরের পীর সাহেব ছিলেন। তিনি আজ নেই। কিন্তু তিনি যে বিপুল আদর্শ দীর্ঘ জীবনের গৌরব ইতিহাস রেখে গেছেন, যুগের মানুষ তা কোনোদিন ভুলতে পারবে না। ফুরফুরার মাটি দিয়ে খালেকুল মখলুক যে কি অনবদ্য রতœ সৃষ্টি করেছিলেন, আমরা হয়তো পূর্বে তা উপলব্ধি করতে পারিনি। ধর্মের সাথে কর্মের যে কি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, দাদা হুজুর মোজাদ্দেদে জামান হযরত আবু বক্কর সিদ্দিকী (রহ.) সুদীর্ঘ জীবনব্যাপী সাধনা হতে আমরা তার পরিচয় পেয়েছি। তিনি তার জীবনের বেশি সময় ব্যয় করেছে ইসলামের পথে। ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলাম প্রচারে তার ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দাদা হুজুর মোজাদ্দেদে জামান হযরত আবু বক্কর সিদ্দিকী (রহ.) আমাদের জীবনের আদর্শ। তিনি ছিলেন ইসলামের পথের দিক-নির্দেশক। তার আদর্শ মেনেই আমরা ইসলামের পথে চলব।
বয়ানে হুজুর আরো বলেন, যখন অন্ধকারের ঘনঘটা সর্বপ্রকার পাপের বিভীষিকা নিয়ে পৃথিবীতে নেমে এসেছিল, যখন শয়তানের তাÐবলীলায় পৃথিবীর প্রত্যেকটি কোণ, অলি-গলি, আনাচ-কানাচ পর্যন্ত কলুষিত হয়ে পড়েছিল। তখন আরবে প্রেরণ করা হয়েছিল সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল, আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে। তিনি ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করতে দিনের পর দিন মানুষকে দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছেন। কাফেরদের অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেও তিনি ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। যে ইসলাম পৃথিবীর সর্বোত্তম ধর্ম হিসেবে পরিচিত হয়েছে। তিনি আমাদের সকলের জীবনের আদর্শ পুরুষ। তার জীবন-যাপন থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার রয়েছে।
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আমলে কপটচারীদের উদ্দেশ্য তাছাড়া আর কিছুই ছিল না যে, তারা বাহ্যিকভাবে মুসলমানদের সহযোগিতার মাঝে শামিল থাকত। এ জন্য তারা ইসলামের প্রাত্যহিক ইবাদত অর্থাৎ নামাজকে সাদামাটাভাবে অত্যন্ত বেপরোয়া ও তাচ্ছিল্যের সাথে আদায় করত। যেন মানুষ এই বাহ্যিক নুমায়েশ প্রত্যক্ষ করে তাদের মুসলমান মনে করে। এজন্য তাদের কাজে লিল্লাহিয়াত এবং খুলুস ও আন্তরিকতা পয়দা হতে পারে না।
দিনব্যাপী আলোচনা ও বয়ান হয়। মাগরিব থেকে এশা পর্যন্ত জিকির আজগর হয় এবং মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা করে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। ঈসালে ছাওয়াবে ভারতবর্ষে বিভিন্ন ভাষাভাষি ও ধর্ম-বর্ণের লোক উপস্থিত হন।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এবং বিশেষ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ঈসালে সাওয়াবের জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এ ব্যাপারে হুগলি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সমন্বয়ে ৫টি উপ-কমিটি গঠন করে। এসব কমিটি ঈসালে সাওয়াব চলাকালে সার্বক্ষণিকভাবে বিভিন্ন সেবাদান কার্যক্রম বাস্তবায়নে নিয়োজিত ছিল। এছাড়া, বর্জ্য নিষ্কাশন, বিøচিং পাউডার ও মশার ঔষধ সরবরাহ করে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করছে জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় পঞ্চায়েত। তারা ঈসালে সাওয়াবের জন্য পর্যাপ্ত পানি সংযোগ ও ব্যবস্থাপনা জোরদার করেছেন। হুগলি জেলা প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দিক-নিদের্শনায় বিভিন্ন কার্যাদি তদারকি করে। ঈসালে সাওয়াবে আগত মুসল্লিদের স্বাস্থ্য সেবা দিতে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কাজ করছে। এবার প্রায় ৫০টি স্বেচ্ছাসেবী, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করছে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, চিকিৎসা নিতে আসা মুসল্লিদের অধিকাংশই জ্বর, ঠাÐা, পেটের পীড়াজনিত রোগে আক্রান্ত।
উল্লেখ্য, ১৮৯১ সালে দাদা হুজুর এই ঈসালে সাওয়াবের প্রবর্তন করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।