পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রফিকুল ইসলাম সেলিম ঃ মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানির মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা বাড়ছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে রাজস্ব আদায়ে। দেশের সিংহভাগ রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ৮ মাসে রাজস্ব ঘাটতি ১২শ’ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থ বছর শেষে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থ-বছরে ৩৯ হাজার ৬২২ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। সোমবার পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে ২৪ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এক হাজার ২২৪ কোটি টাকা কম। ওইদিন পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
তবে গত অর্থ-বছরের এ সময়ের তুলনায় রাজস্ব আদায় ৪ হাজার ১৭ কোটি টাকা বেড়েছে। গত অর্থ বছরের তুলনায় ১৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ রাজস্ব আদায় বেশি হলেও চলতি বছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে তা ৪ দশমিক ৮২ শতাংশ কম। বিগত দুই বছর রাজপথে আন্দোলনসহ নানা কারণে অস্থিতিশীল পরিবেশের মধ্যেও রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে কাস্টম হাউস। এবার রাজপথে অস্থিরতা নেই এরপরও রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে।
রাজস্ব আদায়ে পিছিয়ে থাকার পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে শুল্ক ফাঁকির প্রবণতা। কারণ সা¤প্রতিক সময়ে এ প্রবণতা বেড়েছে। মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি করা কিছু চালান ধরা পড়লেও আরও অনেক চালান নিরাপদে খালাস হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। দেশি-বিদেশি জালিয়াত চক্রের সাথে কাস্টম হাউসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশ থাকার বিষয়টিও আলোচিত।
চলতি সপ্তাহে অস্তিত্বহীন একটি প্রতিষ্ঠানের নামে মিথ্যা ঘোষণায় ১২টি কন্টেইনারে আমদানি নিষিদ্ধ পণ্যসহ ১৩৪ কোটি টাকার পণ্য ধরা পড়ে। চট্টগ্রাম বন্দরকে ব্যবহার করে সংঘবদ্ধ একটি চক্র এ ধরনের জালিয়াতিতে জড়িত রয়েছে বলে ধারাণা করছে শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের। তাদের ধারণা, দেশি-বিদেশি চোরকারবারি সিন্ডিকেট ইতোমধ্যে এ ধরনের আরও অনেক চালান নিরাপদে খালাস করে নিয়ে গেছে। আর এর প্রভাব পড়ছে সার্বিক রাজস্ব আদায়ে।
ঢাকার কথিত এক আমদানিকারক খোরশেদ আলমের নামে আনা ৪০ ফুটের ১২টি কন্টেইনারে ১৬ হাজার ১৭০ বোতল মদ, ৩ কোটি ৮৪ লাখ শলাকা সিগারেট, ৪ হাজার ৭৪টি এলইডি টেলিভিশন ও ২৮১টি আমদানি নিষিদ্ধ ফটোকপি মেশিন পাওয়া যায়। জানা যায়, বিভিন্ন সময়ে এ প্রতিষ্ঠানের নামে ৭২টির মতো কন্টেইনার এসেছে। ধারণা করা হচ্ছে অন্য কন্টেইনারগুলোতেও মিথ্যা ঘোষণায় আনা পণ্য ছিল। এর আগেও মিথ্যা ঘোষণায় আনা বেশ কয়েকটি ছোট বড় চালান আটক করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বিপুল পরিমাণ পণ্য আমদানি করা হচ্ছে। সব আমদানি পণ্যের উপর নজরদারি করার মতো ব্যবস্থা তাদের নেই। শুধুমাত্র সুস্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট কিছু চালানের উপর নজরদারি করে তারা। সন্দেহ হলে এসব চালান যাচাই-বাছাই করা হয়। এ কারণে এ ধরনের মিথ্যা ঘোষণায় আনা পণ্যের চালান নিরাপদে খালাস করার এখনও যথেষ্ট সুযোগ রয়ে গেছে।
পোল্ট্রি খাতের মূলধনী যন্ত্রপাতির নামে ১২ কন্টেইনারের ওই চালানটি নির্দিষ্ট একটি সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে নজরদারি করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। জালিয়াতচক্র ওই চালানটি প্রথমে দ্রæত খালাস করে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে। এর মধ্যে কিছু কন্টেইনার বন্দরে নামানো হয়। তারা পরিস্থিতি টের পেয়ে আরও কিছু কন্টেইনার পুনরায় বিদেশে ফেরত পাঠানোর আবেদন করে। আমদানিকারকদের এ ধরনের আচরণে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের সন্দেহ আরও পাকাপোক্ত হয়। আর অবশেষে সন্দেহভাজন ১২টি কন্টেইনার খুলে তাতে ১৩৪ কোটি টাকার পণ্য ধরা পড়ে। যা এ যাবতকালের রাজস্ব ফাঁকির ঘটনা।
শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের মহাপরিচালক মইনুল খান বলেন, এ বিশাল চালানটি যারা নিয়ে এসেছে তারা চোরাচালানি চক্রের সাথে জড়িত। এরা অতীতে হয়তো এ ধরনের চালান এনেছে। তদন্তের মাধ্যমে এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে। শুল্ক গোয়েন্দা নিজেই বিষয়টি তদন্ত করবে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরকে ব্যবহার করে অপরাধের অভয়ারণ্যে পরিণত করার যে কোনো অপচেষ্টা কঠোরভাবে প্রতিরোধ করবে শুল্ক গোয়েন্দা। একই সাথে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে জোরালো ভূমিকা পালন করবে।
দু’টি তদন্ত কমিটি
মিথ্যা ঘোষণায় চট্টগ্রাম বন্দরে আনা ১২ কন্টেইনারে সিগারেট, মদ, ফটোকপিয়ার ও এলইডি টিভি পাওয়ার ঘটনা তদন্তে দু’টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। গতকাল (মঙ্গলবার) এ কমিটির গঠনের কথা জানান শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান। কমিটির প্রধান করা হয়েছে অধিদপ্তরের ঢাকা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ জাকির হোসেনকে।
কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন ঢাকা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সাইফুর রহমান ও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক তারেক মাহমুদ। মইনুল খান বলেন, আটক করা ১২ কন্টেইনারের সাথে আমদানিকারকের কোনো সম্পর্ক আছে কিনা, এর সাথে কাস্টমস-বন্দর-সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টসের কর্মকর্তাদের কারও সংযোগ আছে কিনা খতিয়ে দেখবে। এছাড়া আটক করা কন্টেইনারের আমদানিকারক পূর্বে আমদানি করা কন্টেইনারগুলোর সাথে এ ঘটনার যোগসূত্র আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখবে বলে জানান তিনি। এদিকে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের পক্ষ থেকে যুগ্ম কমিশনার (জেটি) মো. গিয়াস কামালকে প্রধান করে আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।