Inqilab Logo

শুক্রবার ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৯ ভাদ্র ১৪৩১, ০৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

১২ কন্টেইনারে ১৩৪ কোটি টাকার পণ্য

| প্রকাশের সময় : ৭ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মিথ্যা ঘোষণায় আনা হলো টিভি মদ সিগারেট ফটোকপি মেশিন
চট্টগ্রাম ব্যুরো : মুরগির খাবারের কারখানার মূলধনী যন্ত্রপাতির নামে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানিকৃত ১২টি কন্টেইনারে ১৩৪ কোটি টাকার পণ্য পাওয়া গেছে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে এলইডি টিভি, মদ, সিগারেট ও ফটোকপি মেশিন। গতকাল (সোমবার) বাকি ছয়টি কন্টেইনারেও পাওয়া গেছে এলইডি টিভি, বিদেশি সিগারেট ও মদ। এর মধ্যে কয়েকটি কন্টেইনারে ২৮১টি ফটোকপি মেশিনও পাওয়া যায়।
সন্দেহভাজন ১২টি কন্টেইনারের ছয়টি গতকাল খোলা হয়। এর আগে রোববার প্রথম চালানের ছয়টি কন্টেইনারে এলইডি টিভি, বিদেশি সিগারেট ও মদ পাওয়া যায়। ঢাকার খিলক্ষেত এলাকার হেনান আনহুই অ্যাগ্রো এলসি ও কেরানিগঞ্জের অ্যাগ্রো বিডি লিমিটেড’র নামে চালান দুটি আমদানি করা হয়।
মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে আনা দুই চালানের ১২টি কন্টেইনারে প্রায় ১৩৪ কোটি টাকা মূল্যের সিগারেট-টেলিভিশন-ফটোকপিয়ার ও মদের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে গতকাল রাতে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। দুই দিনে পর্যায়ক্রমে সবগুলো কন্টেইনার খুলে এসব পণ্য যাচাই শেষে তালিকা করে এ তথ্য জানিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। দু’টি চালানের সবগুলো কন্টেইনারে আছে তিন কোটি ৮৪ লাখ শলাকা, বিদেশি ব্র্যান্ডের সিগারেট, চার হাজার ৭৪টি বিভিন্ন মাপের এলইডি টেলিভিশন, ২৮১টি ফটোকপি মেশিন এবং ১৬ হাজার ১৭০ বোতল মদ। শুল্কসহ এসব পণ্যের বাজারমূল্য প্রায় ১৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সিগারেট ও মদের শুল্ক প্রায় ছয়শ’ শতাংশ।
আটক পণ্যের মধ্যে ৯০ ইঞ্চি মাপের আধুনিক মডেলের টেলিভিশন এবং সম্পূর্ণ আমদানি নিষিদ্ধ পুরনো ফটোকপি মেশিনও আছে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এবং চট্টগ্রাম কাস্টমসের শীর্ষ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে দুইদিন ধরে ১২টি কন্টেইনার খুলে পণ্যের তালিকা করা হয়।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান বলেন, এ দুই চালানে আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য থাকার তথ্যের ভিত্তিতে সেগুলো ইনভেন্টি করা হয়। এতে প্রায় ১৩৪ কোটি টাকা মূল্যের পণ্য পাওয়া গেছে। চোরাচালান চক্রটি পণ্যচালান খালাসের জন্য সব চেষ্টাই করেছে। আমাদের কঠোর নজরদারির কারণে সফল হতে পারেনি।
আটক পণ্যের মধ্যে বিদেশি ব্যানসন অ্যান্ড হেজেজ, ইজি, মন্ড, জো বাক এবং ইজেক্স ব্র্যান্ডের মোট তিন কোটি ৮৪ লাখ শলাকা সিগারেট পাওয়া গেছে। শুল্কসহ এই সিগারেটের বাজারমূল্য প্রায় ৭৪ কোটি টাকা। সিগারেটের ক্ষেত্রে শুল্ক প্রায় ৫৯৬ শতাংশ। স্যামসং, সনি, শার্প ও প্যানাসনিক ব্র্যান্ডের ৩২, ৪০, ৪৮, ৪৯, ৫৫, ৬৫ এবং ৯০ ইঞ্চি মাপের চার হাজার ৭৪টি টেলিভিশন আটক করা হয়। শুল্কসহ এগুলোর মূল্য প্রায় ৪৫ কোটি টাকা। টেলিভিশনের ক্ষেত্রে শুল্ককর ৯০ শতাংশ।
কন্টেইনারগুলোর মধ্যে মোট ১৬ হাজার ১৭০ বোতল মদ পাওয়া গেছে। এতে মোট মদের পরিমাণ ১৬ হাজার ১৬৮ লিটার। এরমধ্যে শিভাস রিগ্যাল ব্র্যান্ডের এক হাজার ১৮৮ বোতল, হান্ড্রেন্ড পাইপারস তিন হাজার ৬০০ বোতল, ব্যাক লেভেল এক হাজার দুইশ বোতল, টাকিলা সিলভার ছয়শ বোতল, এবসলুট ভদকা দুই হাজার ৩৫২ বোতল, পাসপোর্ট তিন হাজার ৬২৪ বোতল এবং রয়াল সেল্যুট ছয় বোতল। এসব মদের শুল্কসহ মূল্য ১৭ কোটি টাকা। মদের শুল্ক কর ছয়শ’ শতাংশ। মিলেছে আমদানি নিষিদ্ধ পুরনো তোসিবা ও স্যামসং ব্র্যান্ডের ২৮১টি ফটোকপি মেশিন। যার বাজারমূল্য দুই কোটি ৭১ লাখ টাকা।
ক্যাপিটাল মেশিনারিজ ঘোষণায় চীন থেকে দুটি চালানে ১২ কন্টেইনার পণ্য আমদানি করেন খোরশেদ আলম। পণ্য খালাসের দায়িত্বে ছিল সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠান রাবেয়া এন্ড সন্স। চালান আটকের পর থেকে আমদানিকারক ও সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠানের মালিক পলাতক রয়েছেন।
শুল্ক গোয়েন্দা তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে আমদানিকৃত এ চালানটি এ যাবতকালের সর্ববৃহৎ চালান। এর সাথে শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট জড়িত রয়েছে। প্রাণিখাদ্য তৈরির মূলধনী যন্ত্র আমদানির আড়ালে সিগারেট, মদ ও টেলিভিশন এনে তা দ্রæত ছাড়িয়ে নেয়ার কৌশল নিয়েছিল তারা। তবে গোয়েন্দা তৎপরতার কারণে এ জালিয়াতচক্রের তৎপরতা ভন্ডুল হয়ে গেছে। এর নেপথ্যে কারা তাদের চিহ্নিত করতে তদন্ত শুরু হয়েছে বলেও জানান তদন্ত কর্মকর্তারা।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কের পরিমাণ মাত্র এক শতাংশ। আর এ কারণে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির আড়ালে এসব দামি পণ্য আনা হয়েছে। সিগারেট আমদানিতে শুল্কায়ন মূল্যের ওপর ৫৯৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ শুল্ককর দিতে হয়। অর্থাৎ, সিগারেটের দাম এক টাকা হলে শুল্ককর দিতে হবে ৫৯৬ দশমিক ৯৭ পয়সা। আবার আমদানি নীতির শর্ত অনুযায়ী, সিগারেটের প্যাকেটে বাংলায় ‘ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর’ লেখা থাকতে হবে।
কন্টেইনারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৩২ থেকে ৯০ ইঞ্চি এইচডি ও এলইডি টেলিভিশন পাওয়া গেছে কয়েক হাজার। টেলিভিশনের শুল্ককর ৯০ শতাংশ। এছাড়া নামিদামি ব্র্যান্ডের মদ পাওয়া গেছে কয়েক হাজার বোতল। আমদানি মূল্যের ওপর মদের মোট শুল্ককর দিতে হয় ৬০০ শতাংশ।
জানা যায়, শিল্পকারখানার যন্ত্রপাতি আমদানির পর সাধারণত কায়িক পরীক্ষা হয় না। আবার কাস্টমস কর্তৃপক্ষও তা দ্রæত খালাসের প্রক্রিয়া শেষ করে। এ সুযোগ নিয়ে যন্ত্রপাতি আমদানির নামে এলসি খোলেন ঢাকার খিলক্ষেত এলাকার ‘হিনান আনহুই এগ্রো এলসি’ প্রতিষ্ঠানের মালিক খোরশেদ আলম। চীন থেকে একটি চালানে ছয় কন্টেইনার পণ্য আমদানি করেন তিনি। চীন থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে এমভি ভাসি সান জাহাজে কন্টেইনারে এসব পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে আসে।



 

Show all comments
  • MD Elias ৭ মার্চ, ২০১৭, ৩:২৪ এএম says : 0
    ader biruddhe bebostha nea houk
    Total Reply(0) Reply
  • এস, আনোয়ার ৭ মার্চ, ২০১৭, ৫:০৬ পিএম says : 0
    আটক-জব্দতো সব সময় করা হয় বলে শুনি কিন্তু পরে জব্দকৃত মালগুলি কি করা হয় বা কোথায় যায় তাতো আর শুনি না।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ