Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুসল্লিদের ইবাদত-বন্দেগিতে ফুরফুরা পবিত্র পুণ্যভ‚মিতে পরিণত

১২৬তম ঈসালে ছাওয়াব মাহফিলের দ্বিতীয় দিন

| প্রকাশের সময় : ৭ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কলকাতা থেকে আবু হেনা মুক্তি : গতকাল কলকাতার ফুরফুরা দরবার শরীফে চার দিনব্যাপী ১২৬তম  ঈসালে ছাওয়াবের দ্বিতীয় দিনে কয়েক লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান সেখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামায়াতের সাথে আদায় করেন। দিনব্যাপী সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে ইবাদাত-বন্দিগি ও জিকর-আজকার। গাড়ি পার্কিং, ভক্তদের জনস্রোত, অথবা রোদ্দুর কোনোটাই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি মুসল্লিদের সামনে।
নামাজ আদায় করার জন্য হুগলী জেলা, কলকাতাসহ আশেপাশের জেলা এমনকি দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসে নানা বয়সী মানুষ। দীর্ঘপথ হেঁটে আসেন অনেকে। তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না ৮-৯ কি:মি: সুদীর্ঘ এলাকা। জোহর নামাজ শুরু আগ পর্যন্ত পুরো ফুরফুরার ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। নামাজের কাতার ছাপিয়ে যায় নদী তীর, সড়ক, মহাসড়ক, শিয়াখালা বাজার পর্যন্ত। এমনকি যানবাহনের ওপরও। বহু মুসল্লিকে জায়গা না পেয়ে রাস্তায় খবরের কাগজ-পলিথিন বিছিয়ে নামাজ আদায় করতে দেখা যায়। ঈসালে ছাওয়াবের দ্বিতীয় দিনে সোমবার সকাল থেকেই শিয়াখালা এবং তালতলা বাজার ও আশপাশের এলাকার কয়েকলাখ ধর্মপ্রাণ মানুষ নামাজ ও জিকির-আজকারে অংশ নিতে হেঁটে ফুরফুরা ময়দানে আসতে শুরু করেন। ফজর থেকেই ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের  জিকর-আজগার ইবাদত-বন্দেগিতে ফুরফুরা এক পবিত্র পুণ্যভ‚মিতে পরিণত হয়।
আল্লমা পীরজাদা হযরত মাও: জাবিহুল্লাহ সিদ্দিকী (মাদ্দা:) বলেন, দুনিয়া ততদিন টিকে থাকবে যতদিন ইসলাম ও দ্বীন দুনিয়ায় থাকবে। আল্লাহ তায়ালা দুনিয়া সৃষ্টি করেছে মানবজাতির জন্য। আর মানবজাতি সৃষ্টি করেছেন আল্লাহর ইবাদাতের জন্য। তাই দুনিয়ার ধন-দৌলতের লোভে পড়ে আল্লাহ ও তার দ্বীনকে ভুলে গেলে চলবে না। আমরা যতদিন পৃথিবীতে থাকব ততদিন আল্লাহর ইবাদাত ও তার প্রতিষ্ঠিত দ্বীনের পথে চলব। আর এই দ্বীনের পথে চলতে কোনো বাধা-বিপত্তি আসলে তা আমাদের সকলের একসাথে প্রতিহত করতে হবে। ইসলামের হেফজতকারি আল্লাহ তায়ালা স্বংয় নিজে। সকল ঈমানদার ব্যক্তির সাথে আল্লাহর হেফজাতে রয়েছেন। যত বড় শক্তিশালী হোক না কেন কোনো ব্যক্তির পক্ষে ইসলামের ক্ষতি করা বা ধ্বংস করা সম্ভব নয়। তিনি  আমাদের সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদাতের জন্য। যারা আখিরাতের কথা চিন্তা করে তারা কখনই অন্যায়ের পথে যেতে পারে না। তিনি পিতা মাতার কর্তব্যের প্রতি প্রতিগুরুত্বারোপ করেন।
হুজুর আরো বলেন, দাদা হুজুর হযরত আবু বক্কর সিদ্দীকী (রহ:) এর নসিয়ত অনুযায়ী তার ভালোবাসার টানে আজ আমরা দূর-দূরান্ত থেকে এসে একসাথে সম্মিলিত হয়ছি এবং একসাথে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করেছি একমাত্র আল্লাহকে খুশি করার জন্য তার ইবাদাতের জন্য। আল্লাহ্ তায়ালা ইবাদাতার সর্বোত্তম পন্থা সালাত আদায় করা। তাই কখনই আমরা সালাত আদায় করতে ভুলব না। সালাত বেহেশতের চাবি। আর সকল মুসলমানের আখিরাতে বড় চাওয়া বেহেশত। তাই বলে শুধু সালাত আদায় করলেই হবে না কুরআনের আলোকে চলতে হবে এবং জীবনযাপন করতে হবে। দাদা হুজুরের মত একজন মোজাদ্দেদ জামানের আদর্শ অনুযায়ী আমাদের ভবিষ্যত জীবন পরিচালিত করতে হবে। সুদ-ঘুষকে বর্জন করে মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে। মানুষের সেবাই বড় ধর্ম। যে কারণে দাদা হুজুর মানবকল্যাণে অনেক সেবামুখী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। হযরত মরহুম বাকী বিল্লাহ সিদ্দিকীও সায়াদাতীয়া জে কে ইসলামী মিশন ও জমিয়াতে জাকিরিন নামক সেবা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। যার মাধ্যমে মানুষ ইহকাল ও পরকালের জন্য উপকৃত হচ্ছে।
আল্লামা পীরজাদা হযরত মাও: জাবিহুল্লাহ সিদ্দিকী (মাদ্দা:) আরো বলেন, পরকালের চিরস্থায়ী সুখ-শান্তির জন্য আমাদের প্রত্যেককে দুনিয়াতে জীবিত থাকা অবস্থায় কালিমার দাওয়াতের কাজে কঠিন মেহনত করতে হবে। ঈমান-আমলের মেহনত ছাড়া কেউ হাশরের ময়দানে কামিয়াব হতে পারবে না।
হুজুর আরো বলেন, ঐতিহাসিক এ মাহফিলে সঠিক নিয়তে একমাত্র আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্য আসতে হবে। কোনো মাজারকে সিজদাহ নয়। সিজদাহ করতে হবে একমাত্র আল্লাহ রব্বুল আলামিনকে। দুনিয়া অতি ক্ষণস্থায়ী। আর আখিরাত অনন্তকাল। আখিরাতের জন্য এখান থেকে সঠিক সওদা করতে হবে। হুজুর বলেন, বুখারী শরীফের প্রথম হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, নিয়তের উপর সকল কাজের ফলাফল নির্ভর করে। তাই রোগ ভালো হবে, অর্থবিত্ত বৃদ্ধি পাবে বা নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া ইত্যাদির নিয়তে কেউ এসে থাকলে ভুল করেছেন। কারণ এখানে শুধু দুনিয়া নয়, বরং আখেরাতের ওষুধ বাতানো হয়। আল্লাহকে রাজি খুশি করে কিভাবে কবরে যাওয়া যাবে সেই পথ খুঁজে পেতে ৪ দিনের এই মাহফিলে ওলামায়ে কেরামের বয়ান মনোযোগ সহকারে শোনার জন্য তিনি সকল মুসল্লির প্রতি আহŸান জানান।
দিনব্যাপী আলোচনা ও বয়ান হয়। মাগরিব থেকে এশা পর্যন্ত জিকির-আজকার হয় এবং মুসলিম উম্মহার শান্তি কামনা করে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। ঈসালে ছাওয়াবে ভারতবর্ষে বিভিন্ন ভাষাভাষী ও ধর্মবর্ণের লোক উপস্থিত হন।
বিভিন্ন ভাষায় বয়ান অনুবাদ:
ফুরফুরার ঈসালে ছাওয়াব বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের ১৫-২০ জন বিশিষ্ট আলেম বয়ান পেশ করবেন। মূল বয়ান বাংলাতে হলেও উর্দু, ইংরেজি, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসি ভাষায় তাৎক্ষণিক অনুবাদ হচ্ছে। বিদেশি মেহমানদের জন্য মূল বয়ান মঞ্চের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব পাশের হোগলা-পাটিতে বসেন। বিভিন্ন ভাষাভাষী মুসল্লিরা আলাদা আলাদা বসেন এবং তাদের মধ্যে একজন করে মুরব্বি মূল বয়ানকে তাৎক্ষণিক অনুবাদ করে শোনান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ