Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সীতাকুন্ডে ক্রমাগত লোকসানে অধিকাংশ পোল্ট্রি ফার্ম বন্ধ

| প্রকাশের সময় : ৭ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুন্ড থেকে : সীতাকুন্ডে পোল্ট্রি শিল্পে ঘোর দুর্দিন চলছে। বিগত কয়েক বছর ধরে দফায় দফায় মুরগির বাচ্চা ও খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে ব্যাপক লোকসানের শিকার হয়েছেন খামারিরা। এ লোকসান কাটিয়ে ওঠার আগেই আবারো নতুন করে মূল্য বৃদ্ধির কবলে পড়তে হচ্ছে তাদেরকে। এভাবে বারবার লোকসানের স্বীকার হয়ে অধিকাংশ খামারিই তাদের ফার্ম বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে উপজেলার ৩৮০টি মুরগির ফার্মের অধিকাংশই এখন বন্ধ।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সীতাকুন্ডে মোট পোল্ট্রি মুরগির ফার্মের সংখ্যা ৩৮০টি। এর মধ্যে ২শ’টির মতো ফার্ম এখন বন্ধ রয়েছে। বারবার খাদ্যে ও পোল্ট্রি মুরগির বাচ্চার দাম বৃদ্ধিতে মালিকরা লোকসানের শিকার হওয়ায় খামারগুলো তারা বন্ধ করে দিয়েছেন।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে খামারিদের সাথে কথা বললে পোল্ট্রি শিল্পের দুর্দিনের চিত্র উঠে আসে। সীতাকুন্ড পৌরসদরের ৫নং ওয়ার্ড দক্ষিণ মহাদেবপুর ভূঁইয়াপাড়া গ্রামের খামারি মোঃ বেলাল হোসেন বর্তমানে হ্যাচারিতে বয়লার মুরগি বাচ্চা ও খাদ্যর মূল্য দিনদিন বেড়েই চলেছে। তিনি বলেন, আমরা হ্যাচারি থেকে একদিনের বাচ্চা ও পোল্ট্রি ফিড বা খাদ্য কিনে তা বাচ্চা মুরগিগুলোকে খাইয়ে বড় করি। বাচ্চা ও খাদ্যের দাম কম থাকলে খরচ কম পড়ে। তখন সেগুলো বিক্রি করতে লাভবান হওয়া যায়। একসময় আমরা অল্প মূল্যে বাচ্চা ও খাদ্য পেতাম। তখন লাভও হতো ভালো। কিন্তু বর্তমানে উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। বারবার দাম বাড়তে থাকায় বারবার লোকসানের শিকার হচ্ছি আমরা। বেশিরভাগ খামারিই লাখ লাখ টাকা লোকসান দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর অবস্থা নেই। অনেকেই লোকসান আরো বাড়ার আগে খামার বন্ধ করে দিয়েছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতেই এ পোল্ট্রি শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। তিনি বলেন, ২০০৭ সালে বার্ডফ্লু-এর প্রাদুর্ভাব হওয়ার পর থেকেই এ শিল্পে চরম দুঃসময় বিরাজ করছে।
ক্রমাগত লোকসানে পোল্ট্রি মুরগির ব্যবসা ছেড়ে দেয়া এক যুবক পৌর সদরের ৩নং ওয়ার্ডের সারাংপাড়া গ্রামের এস.কে পোল্ট্রি ফিডস্-এর খামারি মোঃ খোরশেদ আলম বলেন, অনেক আশা নিয়ে পোল্ট্রি খামার করেছিলাম। প্রথমদিকে লাভও ছিলো ভালো। পরে খাদ্য ও বাচ্চার দাম উঠানামা করতে করতে ব্যাপক লোকসানের স্বীকার হয়ে আমি ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছি। বেশ কয়েক লাখ টাকা লোকসান হয়েছে আমার। যদি খামার বন্ধ না করতাম দিনদিন লোকসান আরো অনেক বেড়ে যেত। তিনি বলেন, সিন্ডিকেট করে কিছু খামারি নিজেদের ইচ্ছেমত বাচ্চা ও খাদ্যের দাম বৃদ্ধি করে নিজে আঙুল ফুলে কলাগাছ হলেও আমাদের মতো ব্যবসায়ীদের চরম লোকসানের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। আমাদের দেশে এ ধরনের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কোনো প্রশাসনিক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ হয় না বলেই সিন্ডিকেড ব্যবসাগুলোকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। সীতাকুন্ড বাজারের মেসার্স সকিনা পোল্ট্রি ফিডস্ সেন্টারের মালিক খামারী মোঃ নাছির উদ্দিন বলেন, ১৯৯৬ সালে একটি পোল্ট্রি মুরগির শেড তৈরি করে ৫০০ বয়লার মুরগির বাচ্চা দিয়ে আমার পোল্ট্রি খামারের যাত্রা শুরু করেছিলাম। বর্তমানে আমার খামারে প্রায় ১৫ হাজার বয়লার ও ২৯ হাজার লেয়ার মুরগি রয়েছে। তিনি বলেন, খাদ্য ও বাচ্চার দাম বৃদ্ধির কারণে প্রায় সব ব্যবসায়ীই দারুণ লোকসানের স্বীকার হচ্ছে। আমার অনেক বন্ধু-বান্ধব খামার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। তবে অনেক কৌশল অবলম্বন করে আমি এখনো টিকে আছি।
তিনি বলেন, আমি সরাসরি নেত্রকোনা ও দেশের বিভিন্ন জেলার কৃষকদের জমি থেকে ভুট্টা ক্রয় করে চট্টগ্রাম এনে তা গুড়ো করে মুরগির খাদ্য তৈরি করে থাকি। এতে আমার খাদ্য ক্রয় বাবদ খরচ কম পড়ছে। ফলে কিছুটা পোষাতে পারছি। তিনি বলেন, আগে খাদ্যের দাম ছিল ১০ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ টাকা। আর মুরগির বাচ্চার দাম ছিল ১২/২০ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু এখন আর সেসব দিন নেই। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, মনে করুন হ্যাচারিতে ১ কেজি খাদ্য উৎপাদনে খরচ পড়ে ২৮ থেকে সর্বোচ্চ ৩০টাকা। কিন্তু তারা স্থানীয় ডিলারদের কাছে বিক্রি করছেন ৪০/৪১ টাকা। আর হ্যাচারিতে প্রতি পিস বাচ্চা উৎপাদনে খরচ পড়ে ২৫/৩০ টাকা। কিন্তু স্থানীয় ডিলারদের কাছে বিক্রি করছেন ৬৫ টাকা ৫০ পয়সা। আর ডিলারদের কাছ থেকে খামারিরা বাচ্চা ক্রয় করছেন ৭০ টাকা করে। এভাবে উৎপাদন থেকে স্থানীয় খামারির হাতে পৌঁছাতে গিয়ে প্রত্যেকটি খাদ্যে ও বাচ্চার দাম দেড় দুই গুন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এ উচ্চ মূল্যে ক্রয়ের পর বাচ্চা লালন পালন করে দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে বড় করতে করতে যে খরচ হয় সে দামে বিক্রি করা যাচ্ছে না। ফলে লোকসান তো হবেই। ১৩’শ ৫০ গ্রাম ওজনের একটি মুরগি উৎপাদনে খামারিদের খরচ পড়ে ১৮৫/১৯০ টাকা। অথচ তা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৫৭ টাকায়। এতে করে প্রতি পিস মুরগিতে লোকসান হচ্ছে ২৮ থেকে ৩০টাকা পর্যন্ত। এ কারণে সীতাকুÐের বেশিরভাগ ফার্ম এখন বন্ধ হয়ে গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসার ডাঃ এ.বি.এম সাইফুজ্জামান বলেন, সীতাকুন্ডে মোট ৩৮০টি পোল্ট্রি ফার্ম রয়েছে। এর মধ্যে একটি ফার্ম সরকারী। তিনি বলেন, কতগুলো পোল্ট্রি ফার্ম এখন খোলা আর কতগুলো বন্ধ তা সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়। কারণ, অনেক সময় বন্ধ ফার্মগুলো মালিকরা হটাৎ চালু করে বসেন আবার কখনো চালু ফার্মও নানান অসুবিধায় বন্ধ থাকে। তবে একথা ঠিক যে রোগ ব্যাধির কারণে শীত মৌসুমে অনেকেই ফার্ম বন্ধ রাখেন। মুরগি তোলেন না। তাই বন্ধের সংখ্যা এসময় বেশি থাকে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ