রংপুর জেলা সংবাদদাতা : চাঁদা দাবি ও শনিবারের সংঘর্ষের ঘটনায় ছাত্রলীগ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি মেহেদী হাসান শিশির ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসানসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে। শনিবার সংঘর্ষের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশপাশের এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। বিশেষ করে মামলা দায়েরের পর থেকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মাঝে আরও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এবং উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। যে কোন মুহূর্তে গুপ্ত হামলার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে, সংঘর্ষের পর শনিবার রাতেই শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সব কার্যক্রম স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।  
গতকাল রোববার সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পার্কের মোড় এলাকার সব দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল অনেক কম। ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কোনো নেতাকর্মীকে দেখা যায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. এ কে এম নূর উন নবী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি করা হবে। তদন্ত করে দেখা হবে এর পেছনে কারা ইন্ধন জুগিয়েছে। যদি তারা শিক্ষার্থী হয়, তাহলে একাডেমিক নিয়ম অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে যাদের নাম উঠে আসবে তারা যদি শিক্ষার্থী না হয়, তাহলে আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবস্থা নিতে বলব। তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতির ছাত্রত্ব নেই। আর সাধারণ সম্পাদকেরও পড়ালেখা শেষ হয়ে গেছে। তাই তাদের বিরুদ্ধে আমরা একাডেমিকভাবে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারব না।  
উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান শিশিরের নেতৃত্বে ১৫ থেকে ২০ জন ছাত্রলীগকর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের সামনে পার্কের মোড় এলাকায় একটি ফাস্টফুডের দোকানে গিয়ে চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দেয়ায় শনিবার বেলা ১১টার দিকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা দোকানটি ভাঙচুর করে। এ সময় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে ছাত্রলীগ কর্মীদের ধাওয়া করলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে এবং এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে বিকেলে পার্কের মোড়ে ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদ সভা চলাকালে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দল বেঁধে হামলা চালায়। এতে আবারও সংঘর্ষ শুরু হয় এবং বিকেলে ৫টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত দফায় দফায় চলে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। এতে পুলিশের এক উপ-পরিদর্শক, এক ফটোসাংবাদিকসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়।  প্রায় তিন ঘণ্টা পর অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ঘটনার পর রাতেই পার্কের মোড় ব্যবসায়ী সমিতির আহŸায়ক মাসুদ রানা ও লিফা ফাস্টফুডের মালিক মাজেদুল ইসলাম লাভলু বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় দুটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি শিশির ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসানসহ ছাত্রলীগের ১৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতারের খবর জানা যায়নি।