Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

৬০টি বন্ধ স্টেশন চালু হচ্ছে

| প্রকাশের সময় : ৬ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

১৬ মার্চ উদ্বোধন করবেন রেলমন্ত্রী : বাড়বে ট্রেনের গতি
নূরুল ইসলাম : জনবল সঙ্কটে বন্ধ হয়ে যাওয়া রেল স্টেশনগুলো আবার চালু হচ্ছে। আগামী ১৬ মার্চ একসাথে ৬০টি বন্ধ স্টেশন এক সাথে চালু হচ্ছে। ওইদিন বেলা ১১টায় ঘোড়াশাল স্টেশনে বন্ধ হওয়া স্টেশনগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করবেন রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক। এ প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রী বলেন,  বন্ধ হয়ে যাওয়া স্টেশনগুলো ক্রমান্বয়ে চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। স্টেশনগুলো চালু হলে ট্রেনের গতি যেমন বাড়বে, তেমিন বাড়বে যাত্রীসেবার মানও। রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মো. হাবিবুর রহমান বলেন, বন্ধ স্টেশনগুলোতে ট্রেন চলাচল অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ। বন্ধ স্টেশনে ট্রেন নির্ধারিত গতিবেগে চলতে পারে না। ট্রেন পরিচালনায় নানা অসুবিধা হয়। স্টেশনগুলো  চালু হলে সেই অসুবিধাগুলো দূর হবে, ট্রেনের গতিবেগ বাড়বে।  
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ট্রেনের সাথে রেল স্টেশনও বন্ধ করার হিড়িক পড়ে। জোট সরকারের আমলে পূর্বাঞ্চলের ৪৪টি এবং পশ্চিমাঞ্চলের ১৬টি স্টেশন বন্ধ করে দেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে পূর্বাঞ্চলে বন্ধ হয়ে যায় আরো ১২টি স্টেশন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর অবসরে যাওয়া কিছু স্টেশন মাস্টারকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া ২০টি স্টেশন চালু করে। এরপরও পশ্চিমাঞ্চলে রেলেওয়ের লালমনিরহাট বিভাগে ৫৯টির মধ্যে ১৬টি ও পাকশী বিভাগে ১১৪টির মধ্যে ৩৪টি স্টেশন বন্ধ রয়েছে। রেলভবনের একজন কর্মকর্তা জানান, রেলমন্ত্রীর ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপে বন্ধ থাকা স্টেশনগুলো চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়।  রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক বন্ধ স্টেশনগুলো চালু করার মাধ্যমে রেলের সেবার মান বাড়ানোর নির্দেশ দেন। মন্ত্রীর সেই উদ্যোগই বাস্তবে রুপ নিচ্ছে। এতে করে ট্রেনের গতিবেগ বাড়ার সাথে সাথে যাত্রী সেবার মানও বাড়বে। রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মো. হাবিবুর রহমান জানান, বন্ধ থাকা স্টেশনগুলোর মধ্যে থেকে প্রথম পর্যায়ে এক সাথে ৬০টি স্টেশন চালু করা হচ্ছে। যে স্টেশনগুলো চালু হচ্ছে সেগুলো হলোÑ টঙ্গী-ভৈরব সেকশনের ঘোড়াশাল, আমীরগঞ্জ ও শ্রীনিধি, টঙ্গী-ময়মনসিংহ সেকশনের ভাওয়াল গাজীপুর, ইজ্জতপুর, সাতখামাইর, ধলা, উমেদনগর, ময়মনসিংহ-জামালপুর সেকশনের পিয়ারপুর, জামালপুর-বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব সেকশনের কেন্দুয়া বাজার, ভুয়াপুর,। ময়মনসিংহ-ভৈরববাজার সেকশনের বিস্্কা, সোহাগী, নান্দাইল রোড ও কালিকাপ্রসাদ। শ্যামগঞ্জ-মোহনগঞ্জ সেকশনের ঠাঁকুরকোনা ও বারহাট্টা। আখাউরা-শায়েস্তাগঞ্জ সেকশনের শাহাজীবাজার ও মুকুন্দপুর। শায়েস্তাগঞ্জ-সিলেট সেকশনের সাতগাঁও ও বরমচাল। চট্টগ্রাম-লাকসাম সেকশনের মুহুরীগঞ্জ, ফাজিলপুর, শর্শদী ও নাওটী। লাকসাম-আখাউরা সেকশনের ময়নামতি, লাকসাম-নোয়াখালীর দৌলতগঞ্জ, খিলা, নাথেরপেটুয়া ও বজরা। লাকসাম-চাঁদপুর সেকশনের শাহাতলী, চট্টগ্রাম-নাজিরহাটের সরকারহাট ও ঝাউতলা। খুলনা-দর্শনা সেকশনের ফুলতলা, রুপদিয়া, মেহেরুল্লানগর, সফদারপুর ও আনসারবাড়ীয়া। দর্শনা-ঈশ্বরদী সেকশনের মিরপুর ও পাকশী। ঈশ্বরদী-সান্তাহার সেকশনের আজিমনগর, মাধনগর ও রানীনগর। সান্তাহার-পার্বতীপুর সেকশনের হিলি, ভবানীপুর ও ডোমার। আবদুলপুর-চাঁপাই সেকশনের কাঁকনহাট, আমনুরা-রহনপুরের নাচোল, যশোর- বেনাপোল সেকশনের বেনাপোল,   পোড়াদহ-গোয়ালন্দঘাট সেকশনের কুমারখালী, খোকসা, পাংশা ও পাঁচুরিয়া জংশন। পাঁচুরিয়াÑফরিদপুর সেকশনের আমিরাবাদ ও ফরিদপুর, খালুখালী-ভাটিয়াপাড়া সেকশনের মধুখালী জংশন, সান্তাহার-বোনারপাড়া সেকশনের আলতাফনগর, ভেলুরপাড়া ও মহিমাগঞ্জ এবং বোনারপাড়া-লালমনি সেকশনের অন্নদানগর স্টেশন।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, বন্ধ থাকা স্টেশন পার হওয়ার সময় মাত্র ১৬ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলে। এতে ট্রেনের পরিচালন সময় বেড়েছে। আবার বন্ধ স্টেশনগুলোতে নিরাপদ নয়। সেখানে রেল লাইনের পয়েন্টগুলোতে যে কোনো নাশকতারও আশঙ্কা থাকে। প্রকৌশল বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে ১৪টি স্টেশন বন্ধ রয়েছে। এই বন্ধ স্টেশনগুলো পার হতে প্রতিটি ট্রেনের গড়ে প্রায় এক ঘণ্টা সময় বেশি লাগে। ওই কর্মকর্তার মতে, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে ট্রেনের গতি বাড়াতে না পারার অন্যতম কারণ অনেক স্টেশন বন্ধ থাকা। বন্ধ স্টেশন অতিক্রম করার সময় ট্রেনের গতি কমিয়ে আনা হয়। বন্ধ থাকা প্রতিটি স্টেশন পার হতে পাঁচ মিনিট করে সময় অপচয় হয়। আরেক কর্মকর্তা বলেন, স্টেশন বন্ধ থাকার কারণে ট্রেনের পরিচালন সময় যেমন বেড়েছে, তেমনি সরকারের রাজস্ব আদায়ও কমেছে। এ ছাড়া বন্ধ থাকা স্টেশনের যন্ত্রপাতি ও সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বন্ধ থাকা স্টেশনে জনবলের অভাবে নিয়মিত টিকিট বিক্রি করা যায় না। এতে রেলের রাজস্ব আদায়ে প্রভাব পড়ছে।
জানা গেছে,  ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের পুরো অংশ ইন্টারলক পদ্ধতির। প্রতিটি স্টেশনে বিদ্যমান দু’টি লাইনের (আপ ও ডাউন) সঙ্গে আরো একাধিক লাইন থাকে। স্টেশন মাস্টার আপ বা ডাউন লাইন দিয়ে আসা একটি  ট্রেনকে ১, ২ বা ৩ নম্বর লাইন দিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেন। আর স্টেশন বন্ধ থাকলে এই তিনটির মধ্যে কেবল একটি লাইন দিয়েই ট্রেন চলাচল করে। তখন লোকো মাস্টার (ট্রেনচালক) দূর থেকে ফেসিং পয়েন্ট (আপ বা ডাউন লাইনের সঙ্গে একাধিক লাইনের সংযোগ) পর্যবেক্ষণ করে গতি কমিয়ে স্টেশন পার হন, যাতে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে। অর্থাৎ যে স্টেশনগুলো বন্ধ, সেখানে এক লাইন থেকে আরেক লাইনে যাওয়ার সুযোগ নেই। এ জন্য ট্রেনের সর্বোচ্চ গতিবেগ ১৬ কিলোমিটার বেঁধে দেয়া আছে। চালু হওয়ার পর একই স্টেশনে সর্বোচ্চ গতিতে চলতে পারবে ট্রেন।



 

Show all comments
  • Imteaz Hassan ৬ মার্চ, ২০১৭, ২:৫৬ এএম says : 0
    very good news for us
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ