Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বগুড়ায় শজিমেক হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ধর্মঘট মানববন্ধন

চিকিৎসা চালু রাখতে কর্তৃপক্ষের বিশেষ ব্যবস্থা

| প্রকাশের সময় : ৫ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বগুড়া অফিস : বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক রোগীর স্বজনকে মারধরে চার ইন্টার্ন চিকিৎসকের শাস্তির  পর তিন দিনেও কাজে ফেরেননি  শিক্ষানবিস চিকিৎসকরা।
তাদের শাস্তি বাতিলসহ সাত দফা দাবিতে শনিবার বেলা ১১টায় তারা হাসপাতালের মূল ফটকে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। অন্য দিকে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা সচল রাখতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জরুরি সভা করেছে শনিবার সকাল ৯টায় পরিচালকের কার্যালয়ে। বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক ঘোষণায় চারজনের শাস্তির ঘোষণা আসার পর ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতি শুরু করেন। শুক্রবার কর্তৃপক্ষ তাদের কাজে যোগ দিতে বললেও শোনেননি তারা।
শনিবার সকাল ১১টা থেকে দুপুরে ১২টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা  হাসপাতালের মূল ফটকে বিভিন্ন প্ল্যাকার নিয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কাজে যোগদান না করে মানববন্ধন করেন। মানববন্ধন থেকে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মুখপাত্র ও শাস্তিপ্রাপ্ত ইন্টার্ন চিকিৎসক কুতুবউদ্দিন বলেন, অবিলম্বে শজিমেক হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের স্থগিতাদেশ এবং বদলির নির্দেশসহ সাত দফা দাবি মেনে নিতে হবে। তাদের সাত দফা দাবিতে বলা হয়, সকল চিকিৎসকের নিরাপত্তা বিধান, রোগীর লোক যারা ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, হাসপাতালের নিরাপত্তা নিশ্চিত, অতিরিক্ত আনসার মোতায়েন, হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়িতে একজন সাব-ইন্সপেক্টর নিয়োগ, মেডিক্যালে কোনো ঘটনা ঘটলে কর্তৃপক্ষকে নিজ উদ্যোগে মামলা করতে হবে এবং ব্যর্থ হলে কর্তৃপক্ষকে দায়ভার নিয়ে পদত্যাগ করতে হবে। কুতুব উদ্দিন বলেন, আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে দেয়া শাস্তি প্রত্যাহার করতে হবে। আমাদের দাবি মেনে না নিলে ধর্মঘট চলছে, চলবেই। আমরা ১৩০ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক। আমরাই হাসপাতালের প্রাণ। আমাদের বাদ দিয়ে কিছু করা যাবে না। দাবি আদায়ে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।  
শজিমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মাসুদ আহসান বলেন, আমরা ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সাথে সমঝোতার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা কাজে যোগ দেননি।  গতকাল শনিবার সকাল ৯টায় আমার কার্যালয়ে হাসপাতালের বিভাগীয় প্রধান এবং রেজিস্ট্রারদের নিয়ে পরিচালনা কমিটির সভা করা হয়। সভায় চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে যা যা প্রয়োজন সব ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। চিকিৎসা সেবার কোনো ঘাটতি হচ্ছে কি না এ জন্য আট সদস্যবিশিষ্ট পৃথক  দু’টি মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। ওই মনিটরিং টিম হাসপাতাল ঘুরে চিকিৎসাব্যবস্থা দেখবে। যদি কোথাও চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হয় তাৎক্ষণিকভাবে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরো বলেন, হাসপাতালে দুইশ’ জনের মতো চিকিৎসক রয়েছেন। চিকিৎসার কোনো সমস্যা হবে না।
সরেজমিন হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি বিভাগসহ অন্যান্য বিভাগে যথারীতি চিকিৎসা চলছে। তবে মানববন্ধন মূল ফটকের রাস্তায় করার কারণে সেখান দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে পারেনি এক ঘণ্টা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক চিকিৎসক জানিয়েছেন, চিকিৎসাব্যবস্থা যথাযথ এবং সঠিকভাবে চলছে। কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তবে বাইরে ক্লিনিকে যে সময় দেয়া হচ্ছিল তা কমিয়ে আনা হয়েছে বর্তমান হাসপাতালের অবস্থার প্রেক্ষিতে।
উল্লেখ্য, সিরাজগঞ্জ সদর থেকে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা আলাউদ্দিন সরকার নামে এক রোগীর ছেলে রউফ সরকার গত ১৯ ফেব্রæয়ারি ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মারধরের শিকার হন।
এ ঘটনা তদন্তের পর চার শিক্ষানবিস চিকিৎসকের ইন্টার্নশিপ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সাজার মেয়াদ  শেষে তাদের চারটি ভিন্ন মেডিক্যালে ইন্টার্নশিপ শেষ করার নির্দেশ দেয়া হয়।
সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আল মামুনকে খুলনা মেডিক্যাল, নূরজাহান বিনতে ইসলাম নাজকে দিনাজপুর মেডিক্যাল, মো: আশিকুজ্জামান আসিফকে ফরিদপুর মেডিক্যাল এবং কুতুবউদ্দিনকে যশোর মেডিক্রাল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্নশিপ শেষ করতে হবে।
ভবিষ্যতে এই ধরনের কাজ করলে তাদের পেশাগত সনদ বাতিল করা হবে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
এই ঘোষণার পর ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতিতে গেলে সরকারি নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসকরা হাসপাতালটিতে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সিলেটে কর্মবিরতি
সিলেট অফিস জানায়, বগুড়ায় চার ইন্টার্ন চিকিৎসককে শাস্তির প্রতিবাদে দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে সিলেটেও কর্মবিরতি পালন করছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, রাগীব-রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, নর্থইস্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও সিলেট উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্নরা এ কর্মবিরতি পালন করছেন। গতকাল শনিবার সকাল থেকে তাদের কর্মবিরতির কারণে দুর্ভোগ আর ভোগান্তি পোহাচ্ছেন অসুস্থ মানুষজন।
রামেকে কর্মবিরতি
রাজশাহী ব্যুরো
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালন করছেন। গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এফ এম রফিকুল ইসলাম জানান, ইন্টার্ন চিকিৎসকরা সকাল  থেকেই অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালন করছেন। আমরা  চেষ্টা করছি সেবার মান ঠিক রাখার।
দিনাজপুরে ধর্মঘট শুরু
দিনাজপুর অফিস : রোগীর সাথে অপ্রীতিকর ঘটনার জেরে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৪ ইন্টার্ন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে নেয়া বদলির আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে ৭২ ঘণ্টার কর্মবিরতি শুরু করেছে দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ (দিমেক) হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকসহ শিক্ষার্থীরা। সকাল থেকে কাজে যোগ দেননি প্রায় দেড়শ’ ইন্টার্ন (শিক্ষানবিস) চিকিৎসক। ফলে রোগীর চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন নিয়মিত চিকিৎসকরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ