পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পরিকল্পিত উন্নয়নে ব্যাপক রাজস্ব আয় সম্ভব
আইয়ুব আলী : প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত প্রাচ্যের রানী চট্টগ্রাম। পাহাড়, সাগর, নদী, উপত্যকা, বন-বনানীসহ প্রকৃতির ছায়াসুনিবিড় এ জনপদের পুরোটাই যেনো পর্যটনের বিশাল ক্ষেত্র। দেশের পর্যটনের অফুরন্ত সম্ভারের উল্লেখযোগ্য অংশ দখল করে রয়েছে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চল। বহু বিদেশি পর্যটককে আকৃষ্ট করেছে এ অঞ্চল। অথচ পর্যটনের কাক্সিক্ষত উন্নয়নে চট্টগ্রাম উপেক্ষিত থেকে গেছে। বৃহত্তর চট্টগ্রামে যে ক’টি পর্যটন স্পট রয়েছে সেগুলোর উন্নয়নে সরকার বাস্তবমুখী পরিকল্পনার মাধ্যমে বছরে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় করতে পারে।
যেখানে থাইল্যান্ড, নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর শুধু পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ঘটিয়ে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে আসছে, সেখানে আমাদের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিয়ে এগুলোই বেসরকারি উদ্যোক্তার সৃষ্টি হবে, দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের মধ্যে উৎসাহ ও আগ্রহের সৃষ্টি হবে। বাংলাদেশের প্রধান পর্যটন এলাকার মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও তিন পার্বত্য জেলা অন্যতম।
চট্টগ্রামের পর্যটন স্পটগুলোর উন্নয়নে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণে সরকারের পদক্ষেপ জরুরি। এতে করে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা অতিমাত্রায় আকর্ষিত হবে। ফলে সরকারের অর্জিত হবে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। বর্তমান বিশ্বে পর্যটন শিল্প একটি লাভজনক ব্যবসা। এটাকে পাশ কাটিয়ে থাকার অবকাশ নেই। চট্টগ্রামে রয়েছে পর্যটনের অফুরন্ত সম্ভার। দেশের সকল বিনোদন কেন্দ্রের চেয়ে চট্টগ্রামে রয়েছে সবচেয়ে বেশি বিনোদন সুবিধা।
চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে ওঠা পর্যটন স্পটগুলোর মধ্যে ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত ও কক্সবাজারের রয়েছে বিপুল সুনাম। চট্টগ্রামের বিনোদন স্পটগুলোর মধ্যে ফয়’স লেক, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, কাপ্তাই লেক, চট্টগ্রাম শিশুপার্ক ও কর্ণফুলী শিশুপার্ক, জাতিতাত্তি¡ক যাদুঘর, সীতাকুÐ ইকোপার্ক, জিয়া যাদুঘর, নৌবাহিনী যাদুঘর, সীতাকুÐের চন্দ্রনাথ পাহাড়, ওয়ার সেমিট্রি, ডিসি হিল, লালদীঘির পার্ক, স্বাধীনতা পার্ক, পারকী বিচ, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা, রাঙ্গামাটি, সেন্টমার্টিন দ্বীপ, বান্দরবান, মহেশখালীর পার্ক ও বৃহত্তর কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। এসব পর্যটন স্পটের বাইরেও বর্তমানে নতুন নতুন পর্যটন স্পট গড়ে উঠেছে চট্টগ্রামে। চট্টগ্রামের আনোয়ারায় বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে হিলটপ পার্ক।
পতেঙ্গা : চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এই সমুদ্র সৈকত। কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত সৌন্দর্যে ঘেরা এ সৈকত বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে। প্রতিদিন এ সৈকতকে ঘিরে মানুষের আনাগোনা লক্ষ্য করা যায়। প্রাইভেট গাড়ি ছাড়া বাস, মেক্সি ও টেম্পো করে চট্টগ্রাম শহরের যে কোনো স্থান থেকে এই সৈকতে পৌঁছানো যায়। সপ্তাহের শুক্রবারে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে বিপুলসংখ্যক দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে।
চট্টগ্রাম শিশুপার্ক ও কর্ণফুলী শিশুপার্ক : চট্টগ্রামে শিশুদের বিনোদনের সুবিধার নিমিত্তে গড়ে উঠেছে প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এই বিনোদন কেন্দ্র। এ শিশু পার্কে রয়েছে শিশুদের জন্য বিনোদনের বিভিন্ন আইটেম। প্রায় ৪টি আইটেমে সাজানো এ বিনোদন কেন্দ্রে রয়েছে চুকচুক গাড়ি, ভয়েজার বোট, মেরি গোডাউন, রেসি গোডাউন, রেসিংকার, দোলনা ছাড়াও অন্যান্য বিনোদন সুবিধা। আধুনিক প্রযুক্তির ক্যাবলক রেসিংকার, ভয়েজার বোট, ক্যাবল ট্রেন, দোলনা এবং অন্যান্য সামগ্রী, বৃহত্তম এ পার্কে রয়েছে মিনি চাইনিজ, কুলিং কর্নার ছাড়াও অনেক রকমারী সামগ্রীর দোকান। ডিজনীল্যান্ডের আদলে গড়া এ কর্ণফুলী শিশুপার্কের গেইট সবাইকে আকর্ষণ করবে বেশি। এ দু’টি পার্কে এখন শিশুদের চেয়ে বুড়োদের ভিড় বেশি লক্ষ্য করা যায়।
ওয়ার সিমেট্রি : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিকে স্মরণে রাখার মানসে গড়ে উঠেছে চট্টগ্রাম ওয়ার সিমেট্রি। ৭৫৫ জন সৈনিকের সমাধির সার্বিক তত্ত¡াবধানে আছেন কমনওয়েলথ ওয়ার গ্রেইভস কমিশন। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকে এ ওয়ার সিমেট্রি। চট্টগ্রাম নগরীর আর্ট কলেজের পাশেই গড়ে উঠেছে নীরব প্রকৃতিঘেরা এ স্মৃতিসৌধ। কুমিল্লার ময়নামতিতে এ ধরনের আরও একটি ওয়ার সিমেট্রি রয়েছে।
জাতিতাত্তি¡ক যাদুঘর : এশিয়া মহাদেশের মধ্যে জাতিতত্তে¡র বিষয়কেন্দ্রিক যে ক’টি যাদুঘর রয়েছে তন্মধ্যে চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় অবস্থিত জাতিতাত্তি¡ক যাদুঘরটি সামগ্রিকভাবেই উল্লেখযোগ্য। যাদুঘরের প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে দেশ-বিদেশের একটি জাতি (বাংলাদেশী), বারোটি জনগোষ্ঠী এবং ছাব্বিশটি মৌলগোষ্ঠী ও আদিবাসীদের বৈচিত্র্যময় জীবন-বৈশিষ্ট্য। চট্টগ্রাম জাতিতাত্তি¡ক যাদুঘরের পরিচিতি দেশের বাইরে ব্যাপক প্রচার পেলেও অনেকেই জানেন না চট্টগ্রামে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এতো সুন্দর একটি যাদুঘর রয়েছে। প্রায় ৩ একর জায়গার ওপর এটির প্রথম পর্বের কাজ শুরু হয়েছিল গত শতকের শুরুর দিকে। এরপর ১৯৭৮ সালে জাতিতাত্তি¡ক যাদুঘরের স¤প্রসারণের পদক্ষেপ নেয়া হলে আরও ৪টি নতুন কক্ষ নির্মিত হয়। উত্তর-দক্ষিণে লম্বা একটি হলঘর এবং এর পশ্চিম ও পূর্বাংশের প্রতিটি দিকে পাশাপাশি দু’টি করে হলঘরমুখী মোট চারটি গ্যালারি।
১৯৮৫-৯৫ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাধীনে পূর্বাংশের গ্যালারি দুটির প্রতিটিতে আরও একটি করে মোট দুটি কক্ষ নির্মিত হয়। যাদুঘরের সামনে বিস্তৃত খোলা জায়গা রয়েছে। যাদুঘরটি শুরুতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় থাকলেও বর্তমানে এটি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন। এছাড়াও যাদুঘরে প্রদর্শিত হয়েছে, পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ সিন্ধু ও পাঞ্জাবের পাঠান, সিন্ধি, পাঞ্জাবি জনগোষ্ঠীর বিবিধ বৈশিষ্ট্য। ভারত, রাশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার কয়েকটি জনগোষ্ঠীর প্রদর্শনীও স্থান করে নিয়েছে যাদুঘরে। যা জাতিতাত্তি¡ক যাদুঘরটির সংগ্রহশালাকে করেছে সৌন্দর্যমন্ডিত ও সমৃদ্ধ।
জিয়া স্মৃতি যাদুঘর : চট্টগ্রামের জিয়া যাদুঘরটি ব্রিটিশ শাসন আমলে কুঠিরবাড়ি হিসাবে পরিচিত ছিল। এ যাদুঘরটিতে মোট ১২টি গ্যালারি উপস্থাপনের মাধ্যমে ৭৪৩টি নিদর্শন সংগ্রহ করা হয়েছে। সংগৃহীত নিদর্শনের মধ্যে বস্তুগত নিদর্শন রয়েছে। মোট দলিল রয়েছে ১২টি। যাদুঘরে গ্যালারি, পাঠাগার ছাড়াও একটি মিলনায়তন স্থাপন করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রামী চেতনাকে সংরক্ষণের লক্ষ্যে এসকল গ্যালারি স্থাপন করা হয়েছে। মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সংগ্রামী জীবন এবং কর্মজীবনের বিভিন্ন দিক ফুটে উঠেছে যাদুঘরের প্রদর্শনীর মাধ্যমে। দর্শনার্থীদের জন্য প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকে যাদুঘর।
ডিসি হিল পার্ক : চট্টগ্রামের আরেক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হলো ডিসি হিল পার্ক। বাংলা বর্ষবরণ উৎসবে এখানে মেলা বসে। এছাড়া ডিসি হিলে স্থায়ীভাবে একটি উন্মুক্ত মঞ্চও স্থাপন করা হয়েছে। মঞ্চের সামনে বিশাল দর্শক গ্যালারি। পাহাড়ের উঁচু-নীচু ছায়া সুনিবিড় পরিবেশে ডিসি হিল পার্কে প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী বেড়াতে আসেন। এখানকার নির্মল পরিবেশে আপনিও বেড়াতে আসতে পারেন। আকর্ষণীয় প্রকৃতির শোভাবর্ধিত চট্টগ্রাম হলেও এ শহরের পর্যটনের জন্য আশানুরূপ বিকাশ লাভ করেনি।
ফয়’স লেক ও চিড়িয়াখানা : চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে অবস্থিত পাহাড়ের পাদদেশে লেক সমৃদ্ধ এ বিনোদন কেন্দ্র ফয়’স লেক। পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে ওঠা এ লেক দর্শনার্থীদের একটু হলেও বিনোদন চাহিদা পূরণ করছে। ফয়’স লেকের সামনেই গড়ে উঠেছে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা।
সীতাকুÐ ইকোপার্ক : চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত সীতাকুÐ চন্দ্রনাথ মন্দির ও ইকোপার্ক। পাহাড় ও অরণ্যঘেরা এ অঞ্চল পাহাড়ের পাদদেশ থেকে অনেক উপরে অবস্থিত। সীতার পুণ্যভূমি খ্যাত এই চন্দ্রনাথ পাহাড়ে উঠতে হলে একটু বেগ পেতে হয়। বেশ উঁচুতে সিঁড়ি ভেঙে এই পাহাড়ে ওঠা বেশ কষ্টসাধ্য হলেও এর সৌন্দর্য দেখে সবাইকে মুগ্ধ করতে পারে এর প্রকৃতি। অন্যদিকে চন্দ্রনাথ মন্দিরের একটু আগেই এ ইকোপার্ক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।