পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মোবায়েদুর রহমান
(পূর্ব প্রকাশের পর)
কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর আমলে, যে ভাবেই হোক, বামপন্থীরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ভাগ বসিয়েছেন। বামপন্থীরা, বিশেষ করে মস্কোপন্থীরা, যখন উপলব্ধি করেন যে বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক এবং ধর্মীয় বাতাবরণে তারা কিছুই করতে পারবে না তখন তারা তাদের স্ট্র্যাটেজি পরিবর্তন করেন। যদিও ওই স্ট্র্যাটেজি নির্ধারণে সুবিধাবাদিতা এবং ব্যক্তিগত লাভালাভ কিছুটা কাজ করেছে। কিন্তু তাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ এবং আওয়ামী লীগের আদর্শের ভেতর বামপন্থী চিন্তাধারা ঢুকিয়ে দেয়া। আমরা আগেই বলেছি যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ধর্ম নিরপেক্ষতার প্রবক্তা হলেও ব্যক্তি জীবনে তিনি ছিলেন ইসলামী আদর্শে বিশ্বাসী। তাই দেখা যায়, ১৯৭০ সালের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের ম্যানুফেস্টোতে লেখা ছিল যে, কুরআন ও সুন্নাহ বিরোধী কোনো আইন করা হবে না। সে জন্যই ১৯৭০ সালের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করার আগে সাবেক রেসকোর্স ময়দান এবং বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত এক বিশাল জনসভায় মস্কোপন্থী মোজাফফর ন্যাপ এবং মনিসিংহের কমিউনিস্ট পার্টিকে তিনি বলেছিলেন, আপনারা দলের সাইনবোর্ড খুলে ফেলে আওয়ামী লীগে জয়েন করুন। বরিশালের মহিউদ্দিন সেই কাজটিই করেছিলেন। সরাসরি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন।
মস্কোপন্থীদের অনুপ্রবেশ
বাংলাদেশের মস্কোপন্থী কমিউনিস্টদের একজন বড় নেতা ছিলেন মতিয়া চৌধুরী। রাশিয়া এবং চীনের মধ্যে যখন আদর্শিক ও কৌশলগত বিরোধ শুরু হয়, তখন বাংলাদেশের বামপন্থীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাপের যে অংশটি ভাগ হয় তারা পরিচিত হন পিকিংপন্থী হিসেবে। উল্লেখ্য, গণচীনের রাজধানী বেইজিংয়ের সাবেক নাম ছিল পিকিং। আর মনিসিং ও মোজাফফর আহমেদের নেতৃত্বে ন্যাপ ও কমিউনিস্ট পার্টির যে অংশটি ভাগ হয় তারা পরিচিত হয় মস্কোপন্থী হিসেবে। মস্কোপন্থী ও পিকিংপন্থীদের এই বিভক্তির অনিবার্য ধাক্কা লাগে তাদের ছাত্রফন্ট্রেও। তখন বামপন্থীদের ছাত্র সংগঠনটির নাম ছিল ছাত্র ইউনিয়ন। ছাত্র ইউনিয়নও দুইভাগে ভাগ হয়। একটি অংশের নেতৃত্ব দেন রাশেদ খান মেনন। তার অংশটি পিকিংপন্থী হিসেবে পরিচিত হয়। অপর অংশের নেতৃত্ব দেন মতিয়া চৌধুরী। তার অংশটি মস্কোপন্থী হিসেবে পরিচিত হয়। মেননের নেতা ছিলেন মরহুম কাজী জাফর আহমেদ।
এটি একদিকে যেমন বিস্ময়কর অন্যদিকে তেমনি দুর্ভাগ্যজনক যে, বামপন্থীরা, বিশেষ করে মস্কোপন্থীরা, শেখ হাসিনার আমলে আওয়ামী লীগে বিপুল সংখ্যায় ঢুকে পড়ে এবং দল ও মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ পদ লাভ করেন। সর্বাগ্রে জয়েন করেন মস্কোপন্থী ছাত্র ইউনিয়নের প্রধান মতিয়া চৌধুরী। তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা যখন সর্বপ্রথম মন্ত্রিসভা গঠন করেন, তখন তাকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। সেই থেকে তিনি ২০০৯ এবং ২০১৪ সাল, মোট তিনটি মেয়াদের মন্ত্রিসভাতেই তিনি কৃষিমন্ত্রী রয়েছেন। মস্কোপন্থী ছাত্র ইউনিয়নের আরেকজন সভাপতি হলেন নূহ্ আলম লেনিন। তিনিও আওয়ামী লীগে ঢুকে পড়েন এবং গত মেয়াদে দলের প্রেসিডিয়াম মেম্বারও ছিলেন। মস্কোপন্থী ছাত্র ইউনিয়নের আরেকজন সাবেক সভাপতি হলেন নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার দ্বিতীয় মেয়াদে শিক্ষামন্ত্রী হয়েছেন। তৃতীয় মেয়াদেও তিনিই শিক্ষামন্ত্রী আছেন।
বামপন্থী জাসদের অনুপ্রবেশ
জাসদের জন্মবৃত্তান্ত নিয়ে এখানে আলোচনা করলে এই রাজনৈতিক ভাষ্যের কলেবর অনেক বৃদ্ধি পাবে। তাই সংক্ষেপ করছি। জাসদের জন্মবৃত্তান্ত মোটামুটি সকলেই জানেন। সেই জাসদও কয়েক ভাগে বিভক্ত। একটি অংশের নেতৃত্ব করছেন হাসানুল হক ইনু। তিনি দলটির সশস্ত্র শাখার নেতা ছিলেন। বলা হয় যে, ভারতীয় রাষ্ট্রদূত সমর সেনকে জিম্মি করার যে প্রচেষ্টা হয় তার নেতৃত্বে ছিলেন হাসানুল হক ইনু। মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার নামে এরা মুসলিম ও ইসলামবিদ্বেষী বলে পরিচিত। শেখ হাসিনার বিগত মন্ত্রিসভায় ২০১২ সালে তিনি তথ্যমন্ত্রী হন এবং আজও সেই পদে তিনি বহাল আছেন। আরেক জন প্রাক্তন জাসদ নেতা হলেন শাহজাহান খান। তিনিও আওয়ামী লীগে ভিড়ে গেছেন। ২০০৯ সাল থেকেই তিনি নৌমন্ত্রী পদে বহাল আছেন।
পিকিংপন্থীদের প্রবেশ
মস্কোপন্থীদের তুলনায় আওয়ামী লীগে পিকিংপন্থীরা তেমন একটি অনুপ্রবেশ করতে পারেনি। তবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোট গঠিত হলে পিকিংপন্থীরা সেখানে ঢুকে পড়েন। মস্কোপন্থীদের তুলনায় পিকিংপন্থীদের সংখ্যা কম। তবুও সাবেক পিকিংপন্থী ছাত্র ইউনিয়নের নেতা রাশেদ খান মেনন ২০১৩ সাল থেকে বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রয়েছেন এবং আজও সেই পদে বহাল আছেন। তার ডেপুটি ফজলে হোসেন বাদশাহও আওয়ামী লীগের সুবাদে এমপি হয়েছেন।
ওপরের এই আলোচনায় দেখা যায় তিনটি প্ল্যাটফর্ম থেকে বামপন্থীরা কাজ করে। সেই তিনটি ফ্রন্ট অর্থাৎ মস্কোপন্থী কমিউনিস্ট পার্টি, জাসদ এবং পিকিংপন্থী মেননরা সদলবলে বা আংশিকভাবে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করেছে।
রাষ্ট্রযন্ত্রে মুসলিম বিরোধিতার অনুপ্রবেশ
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসে। প্রথম দুই-তিন বছর ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা বললেও দলটি এবং সরকার মুসলমানদের অনুভ‚তিতে আঘাত লাগতে পারে, এমন কোনো কাজ করেনি। কিন্তু ২০১১ সাল থেকেই সরকার এমন কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে যার ফলে অনেকেই আশঙ্কা করেন যে, ধর্ম নিরপেক্ষতার নামে দেশে ইসলাম বৈরী কাজকর্ম শুরু হয়েছে কি না। এই ধারণা সর্বপ্রথম দেয় আওয়ামী লীগের অংগ সংগঠন আওয়ামী ওলামা লীগ।
২০১১ সাল থেকে সরকার কয়েকটি ক্ষেত্রে এমন কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে যেগুলি বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ অর্থাৎ মুসলমানদের চিন্তা ধারার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এর মধ্যে একটি ছিল নারীনীতি এবং অপর একটি ছিল শিক্ষানীতি। সরকারের এই দু’টি নীতির বিরুদ্ধে আলেমসমাজ রাস্তায় নামেন। সাধারণ মুসলমানরা আলেমসমাজের সক্রিয় বিরোধিতাকে নীরবে সমর্থন করেন। আরো কিছু পদক্ষেপে গ্রহণ করা হয়, যেগুলির কোনো প্রয়োজন ছিল না। এগুলো সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের বিরক্তি উৎপাদন করে। কুরবানির ঈদ উপলক্ষে পশুর হাট রাজধানীর বাইরে নেয়ার কথা উঠবে কেন? আওয়ামী লীগেরই অঙ্গ সংগঠন আওয়ামী ওলামা লীগ বিগত ৪-৫ বছর বিভিন্ন ইস্যুতে এসব কথা বলে আসছে। ঈদের দিন হিন্দুদের রথযাত্রা করে মুসলিমদের অনুভ‚তিতে অযথা আঘাত করা হয়েছে। এক শ্রেণির বøগার ধর্মদ্রোহী বিশেষ করে ইসলাম ও মুসলিমবিরোধী বøগ লিখে যাচ্ছে। এসব বøগ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভ‚তিতে প্রবলভাবে আঘাত করেছে। ফলে তারা তীব্রভাবে তার প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু দেখা গেছে যে, এসব নাস্তিক বøগারদের বিরুদ্ধে সরকার যতটা না কঠোর হয়েছে তার চেয়ে বেশি কঠোর হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে, যারা নাস্তিকদের ধর্মদ্রোহী বøগের কঠোর প্রতিবাদ করেছেন।
পাঠ্যক্রমে হিন্দু ধর্মের রচনা সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং মুসলমানদের মহিমা কীর্তনকারী কিছু রচনা বাদ দেয়া হয়েছে। আওয়ামী ওলামা লীগের মতে মন্ত্রিসভায় বামপন্থী মন্ত্রীদের প্রভাবে শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটিতে ডক্টর জাফর ইকবাল, অধ্যাপক নিতাই চন্দ্র সূত্র, কাজী খলিফুজ্জামান আহম্মদ, মরহুম কবীর চৌধুরী প্রমুখকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। তাদেরই ব্রেইন চাইল্ড হলো মুসলিম বৈরি শিক্ষানীতি এবং নারীনীতি। এই ধরনের উত্তপ্ত পরিবেশে আগুনে ঘি ঢেলেছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবুল আলম হানিফ। মহানবী হযরত মুহাম্মদ(স:) মদীনা সনদে ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা বলেছেন বলে হানিফ অর্বাচীনের মত উক্তি করেন, যার বিরুদ্ধে শুধুমাত্র আলেম সমাজই নয়, সর্বস্তরের মানুষ প্রতিবাদে ফেটে পড়েন।
আওয়ামী লীগের অংগ সংগঠন আওয়ামী ওলামা লীগ বেশ কয়েকবার বিবৃতি দিয়ে বলেছেন যে, সরকার মাত্রাতিরিক্ত ভাবে সংখ্যালঘুদেরকে তোষণ করছেন। বিভিন্ন বিবৃতি দিয়ে তারা দেখিয়েছেন যে, সরকারি চাকরি-বাকরি এবং অন্যন্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সংখ্যানুপাতের দি¦গুনের চেয়েও বেশি আনুক‚ল্য পাচ্ছেন তারা। ওলামা লীগ যেসব কথা বলেছে এবং আরও অনেকে সেই সব কথার যে প্রতিধ্বনি করেছেন তার সপক্ষে যেসব তথ্য উপাত্ত এবং পরিসংখ্যান তুলে ধরেছেন সেগুলো আমরা এখানে উল্লেখ করছি না। কারণ লেখাটি অনেক দীর্ঘ হয়ে যাবে। তবে যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে ওইসব উপাত্ত তুলে ধরা হবে।
(পরের কিস্তির জন্য অপেক্ষা করুন)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।