পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মৃদু তাপদাহের সম্ভাবনা
শফিউল আলম : শুরু হয়েছে বজ্রপাত, বজ্রঝড় ও আগাম কালবৈশাখীর ঘনঘটার মাস। চলতি মার্চ (ফাল্গুন-চৈত্র) মাসে গড় তাপমাত্রা থাকতে পারে স্বাভাবিকেরও বেশি। এ মাসে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলে ১ থেকে ২ দিন পর্যন্ত মাঝারি থেকে প্রবল আকারে আগাম কালবৈশাখী ঝড়, বজ্রপাত-বজ্রঝড় সংঘটিত হতে পারে। তাছাড়া দেশের অন্যত্র ৩ থেকে ৪ দিন পর্যন্ত হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কালবৈশাখী ঝড়, বজ্রপাত-বজ্রঝড়ের আশংকা রয়েছে।
দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস প্রদানের লক্ষ্যে গত ২ মার্চ (বৃহস্পতিবার) আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির নিয়মিত বৈঠকে চলতি মার্চ মাসের উপরোক্ত পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের এই বৈঠকে প্রাপ্ত আবহাওয়া-জলবায়ুর তথ্য-উপাত্ত, ঊর্ধ্বাকাশের আবহাওয়া বিন্যাস, বায়ুমÐলের বিভিন্নস্তরের বিশ্লেষিত আবহাওয়া মানচিত্র, জলবায়ুর রিগ্রেশন ও এনালগ মডেল, বৈশ্বিক আবহাওয়া-জলবায়ুর সর্বশেষ গতি-প্রকৃতি, আবহাওয়ামÐলে এল-নিনো কিংবা লানিনা অবস্থা ইত্যাদির বিশ্লেষণ করা হয়।
চলতি মার্চ মাসের পূর্বাভাসে আরও জানা গেছে, এ মাসে দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের (৩৪ থেকে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) চেয়ে ১ থেকে ২ ডিগ্রি সে. বেশি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। মাসের শেষের দিকে দেশের পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের উপর দিয়ে একটি মৃদু ধরনের তাপপ্রবাহ (৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সে.) বয়ে যেতে পারে। এ মাসে সামগ্রিকভাবে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এর আগে গত জানুয়ারি ও ফেব্রæয়ারি পর পর দু’মাসে সারাদেশে সার্বিকভাবে স্বাভাবিক অপেক্ষা কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ মাসে দেশের প্রধান নদ-নদীসমূহে পানির প্রবাহ স্বাভাবিক থাকবে। কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস মতে, মার্চ মাসে দেশের দৈনিক গড় বাষ্পীভবন ৪ থেকে ৫ মিলিমিটার এবং গড় সূর্য কিরণকাল ৭ ঘণ্টা থেকে সোয়া ৮ ঘণ্টাকাল স্থায়ী থাকতে পারে।
বিশেষজ্ঞ কমিটির উক্ত বৈঠকে বিগত ফেব্রæয়ারি মাসের আবহাওয়া পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়। এতে জানা গেছে, ফেব্রæয়ারি মাসে সারাদেশে সার্বিকভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে কম হারে বৃষ্টিপাত হয়েছে। পশ্চিমা লঘুচাপের সাথে পূবালী বাতাসের সংযোগে বিগত ২০ থেকে ২৩ ফেব্রæয়ারি সিলেট, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুয়েক জায়গায় হালকা অথবা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফেব্রæয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে রংপুর বিভাগে ও শ্রীমঙ্গল অঞ্চলের উপর দিয়ে হালকা ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। এ সময় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় বিগত ৩ ফেব্রæয়ারি শ্রীমঙ্গলে ৮ ডিগ্রি সে.। গত মাসে গড় সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে যথাক্রমে ১.৬ এবং ০.৫ ডিগ্রি সে. বেশি ছিল। বৃষ্টিপাত ও বৃষ্টিপাতের দিন সংখ্যা ব্যতীত তাপমাত্রা, কুয়াশা, কৃষি আবহাওয়া এবং দেশের নদ-নদীর অবস্থা ফেব্রæয়ারি মাসের পূর্বাভাসের সাথে সংগতিপূর্ণ ছিল বলে জানায় আবহাওয়া দপ্তর।
এদিকে গতকাল (শুক্রবার) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ঈশ্বরদি ও চুয়াডাঙ্গায় ৩৪.৫ এবং সর্বনিম্ন শ্রীমঙ্গলে ১৫.১ ডিগ্রি সে.। এ সময় ঢাকায় সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৩৩.২ ও ২১.২ ডিগ্রি সে., চট্টগ্রামে ৩১.৩ ও ২০.৮ ডিগ্রি সে.।
আজকের (শনিবার) আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় হালকা বৃষ্টি কিংবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ সারাদেশে আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। আগামী ৭২ ঘণ্টায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চলে বিরূপ আবহাওয়ায়
গম-বোরো ফসলে ঝুঁকি বাড়ছে
বরিশাল ব্যুরো : দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে বসন্তের প্রথমভাগেই গ্রীষ্মের তাপ ক্রমশ বাড়ছে। ইতোমধ্যে তাপমাত্রার পারদ ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের কাছে ঘোরাফেরা করছে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা মাত্র ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে ৫.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়ে গতকাল সকালে ২১.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসে দাঁড়ায়। যা ছিল পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টার তুলনায় ৪.৬ ডিগ্রী বেশী। চলতি মাসে দক্ষিণাঞ্চলসহ সারা দেশেই তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিক অপেক্ষা ১-২ ডিগ্রী সেলসিয়াস অর্থাৎ ৩৪-৩৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসে বৃদ্ধির কথা বলেছে আবহাওয়া বিভাগের চলতি মাসের দীর্ঘ মেয়াদী বুলেটিনে। এমনকি মাসের শেষ দিকে দেশের পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ৩৬-৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাবার আশংকার কথাও বলা হয়েছে। তবে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী থাকার মধ্যেই শেষ রাত থেকে মাঝারী থেকে হালকা কুয়াশার চাদরে ঢেকে যাচ্ছে মেঘনা অববাহিকাসহ দক্ষিণাঞ্চল।
এবার মাঘের ভরা শীত মওসুম জুড়ে বসন্তের আমেজের পরে এখন গ্রীষ্মের আবহ জনজীবনের পাশাপাশি কৃষি ব্যবস্থার জন্যও ঝুঁকি বৃদ্ধি করছে। ১ মাঘ বরিশালে তাপমাত্রা ৭.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসে হ্রাস পেলেও পরদিন থেকে পুরো শীত মওসুম জুড়েই তাপমাত্রা ছিল স্বাভাবিকের ওপরে। আর গত ১ ফাল্গুন বসন্ত মওসুম শুরু হলেও আবহাওয়ায় গ্রীষ্মের আমেজ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গত ২৬ ফেব্রæয়ারী থেকেই তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রীর ওপরে উঠতে থাকে। পটুয়াখালীতে বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। বরিশালে ছিল ১ ডিগ্রী কম ৩৩.৪। কিন্তু সর্বনিম্ন তাপমাত্রা গতকাল সকালে বরিশালে রেকর্ড করা হয় ২১.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস। যা ভোলাতে ছিল আরো দশমিক ২ বেশী, ২১.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। গত জানুয়ারী ও ফেব্রæয়ারীর মত চলতি মার্চেও বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ২ থেকে ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস ওপরে রয়েছে। পাশাপাশি বৃষ্টিরও কোন দেখা নেই। যা বিভিন্ন রবি ফসলসহ সার্বিক কৃষি ব্যবস্থার জন্য কিছুটা ঝুঁকি বৃদ্ধি করছে। দক্ষিণাঞ্চলে গত ডিসেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পরিমাণ স্বাভাবিকের অনেক নিচে থাকায় ভরা সেচ মওসুমে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমশ নামছে। ফলে গম ও বোরো ধানে সেচ ব্যবস্থায় ক্রমশ ঝুঁকি বাড়ছে। চলতি মওসুমে দেশে প্রায় ৪৮ লাখ হেক্টরে বোরো আবাদের লক্ষ্য স্থির করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। যা থেকে প্রায় ১ কোটি ৯০ লাখ টন চাল পাবার কথা। এমনকি এবারের শীত মওসুমে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী থাকায় শীত প্রধান অঞ্চলের দানাদার ফসল গমের উৎপাদন নিয়েও যথেষ্ট শঙ্কিত মাঠ পর্যায়ের কৃষিবিদসহ সাধারণ কৃষকগণও।
আবহাওয়া বিভাগের মতে, পশ্চিমা লঘুচাপ হিমালয় পাদদেশীয় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করার পাশাপাশি মওসুমী লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর ও পূর্ব-উত্তর অংশে বজ্র বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানিয়ে দিন ও রাতের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকার কথাও বলেছে আবহাওয়া বিভাগ। দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকার কথাও বলা হয়েছে।
গতমাসে বরিশাল অঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে ৮১.৬% কম বৃষ্টি হয়েছে। তবে চলতি মাসেও বরিশালে ৪৫-৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের সম্ভবনার কথা বলা হয়েছে আবহাওয়া বিভাগের দীর্ঘ মেয়াদী বুলেটিনে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।