Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গরুর গোশতের দাম আকাশছোঁয়া

| প্রকাশের সময় : ৪ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : গরুর গোশতের দাম বাড়ানোর জন্য কৌশলে ব্যবসায়ীরা অন্য সমস্যার অজুহাত দেখিয়ে গেল মাসে ধর্মঘট শুরু করে। তখন তারা বলেছিল, গোশতের দাম বাড়ানো তাদের মূল উদ্দেশ্য নয় বরং সমস্যা সমাধানের জন্য তারা আন্দোলন করছে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের কথা ও বাস্তবে বাজারের চিত্র ঠিক তার উল্টো। ধর্মঘটের আগে গরুর গোশত বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৪৪০ টাকা, এখন প্রায় কেজিতে ৫০ থেকে ৭০ টাকা দাম বাড়িয়ে আকাশ ছোঁয়ার উপক্রম করে ফেলেছে মুনাফা লোভী ব্যবসায়ীরা। ক্রেতারা বলছে, গোশতে কেজি প্রতি ৫০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল। এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের কথায়ও তার সত্যতা মিলেছে। ব্যবসায়ীরা বলছে, তাদের যে কোন ভাবেই হোক ভালো থাকা দরকার। তাই আন্দোলনের বিষয় নিয়ে আর তাদের মাথা ব্যথা নেই।
জানা যায়, দুই বছর আগেও গরুর গোশত ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হতো। এই দুই বছরের ব্যবধানে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো দফায় দফায় দাম বাড়িয়ে এখন তা ৫০০ থেকে ৫৩০ টাকায় বিক্রি করছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ধর্মঘটের আগে গরুর গোশত ৪৫০ টাকায় বিক্রি হলেও গতকাল ৫০০ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। কোন কোন বাজারে ৫৩০ টাকা করেও বিত্রিæ হয়েছে গরুর গোশত। এদিকে ৪০০ টাকার মহিষের গোশত ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পলাশী বাজার, কাঁটাবন বাজারে। এছাড়াও বেশ কিছু বাজারে গোশতের দাম বেশি নেয়া হয়। অতিরিক্ত দামে গোশত বিক্রি করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। তবে ওই বাজারের গোশত ব্যবসায়ীরা বলছেন, সবাই যে দামে গোশত বিক্রি করছে, আমরাও একই দামে বিক্রি করছি। তবে কেন বেশি দামে বিক্রি করছে এই বিষয়ে কোন ব্যবসায়ীই কিছু বলতে রাজি হয়নি।
এ ব্যাপারে এক গোশত ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, আমাদের মধ্যে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা মিলে এই ধর্মঘটের ডাক দেয়। যদিও এই ধর্মঘটের কিছু বিষয় আন্দোলনের সাথে ঠিক ছিল। তবে গোশতের দাম বাড়নোই মূল উদ্দেশ্য ছিল বলে তিনি জানান।
গত মাসের ধর্মঘটের সময় ব্যবসায়ীরা দাবি করেছিল, গাবতলী হাটে ইজারাদারের অত্যাচার ও অতিরিক্ত খাজনা আদায় বন্ধ করতে হবে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) দুর্নীতিবাজদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। চামড়া শিল্প নগরীকে কার্যকর করতে হবে। সীমান্তে হুন্ডি ব্যবসায়ীদের কবল থেকে গরুর ব্যবসাকে মুক্ত করতে হবে।
এদিকে গত সপ্তাহের পরিবহন শ্রমিকদের কারণে রাজধানীর বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ কমে যায়। এ কারণে দাম বেড়েছে সবজি ও মাছের। তবে আবার সরবরাহ বেড়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বেশ কিছু সবজির দর কেজিতে গড়ে ১০ টাকা বেড়েছে। মাছের দামও কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। চাল, ডাল, আটা, ময়দা, চিনিসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আগের মতোই।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সবজি ব্যবসায়ী আবুল হোসেন বলেন, ধর্মঘটের কারণে উত্তরবঙ্গ থেকে মাঝে কয়েকদিন ট্রাক আসেনি বললেই চলে। এতে উত্তরের জেলাগুলো থেকে আসা সবজির সরবরাহ একেবারেই কমে যায়। এতে এসব সবজির দাম বেড়েছে।
এক ব্যবসায়ী বলেন, আগের সপ্তাহে লাউ ৩০-৩৫ টাকা দিয়ে কেনা যেত, গতকাল তিনি তা কিনেছেন ৪৫ টাকা দরে। এরপর বিক্রি করেছেন প্রতিটি ৫০ টাকা দরে। একইভাবে বগুড়া থেকে আসা লতির দাম ১০ টাকা বেড়ে কেজিপ্রতি ৬০ টাকা, বাঁধাকপির দাম ৫ টাকা বেড়ে প্রতিটি ২৫ টাকা, কাঁচকলা হালিতে ৫ টাকা বেড়ে এখন ২৫ টাকায় উঠেছে বলে দাবি করেন তিনি। গতকাল পলশীবাজারে প্রতি কেজি বরবটি ৮০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা ও আলু ১৬-১৮ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা যায়।
এদিকে আলু কেজিপ্রতি ২০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। করলা ৭৮-৮২ টাকা, শসা ৪২ টাকা, টমেটো ৪৫ টাকা, ঢেঁড়স ৮৫ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, বাঁধাকপি আকারভেদে প্রতি পিস ৩০-৩৫ টাকা, শালগম ৩০ টাকা, মূলা ২০ টাকা, শিম ৬০ টাকা, কাঁচামরিচ ৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লালশাক, ডাটা, পুঁইশাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়। পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৩ ও ২৬ টাকায়। আদা ৭৫-৮০ টাকা, মসুর ডাল ১২৭ টাকা, মুগ ডাল ১১৫ টাকা, ছোলা ৮০ টাকা, সয়াবিন তেল (বোতলজাত) ১০৬ টাকা, খোলা তেল ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগি ১৬৫ টাকা, দেশি মুরগি আকারভেদে ২৫০-৪০০ টাকা, পাকিস্তানি মুরগি ২৫০-৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ