পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : ভারতে যদিও যৌতুক নেয়া বেআইনি, তবুও পণের দাবিতে গৃহবধূর ওপরে অত্যাচারের ঘটনা নিয়মিতই শোনা যায়। কিন্তু সে দেশেরই একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখন ঘটছে পুরো বিপরীত ঘটনা। পিছিয়ে থাকা রাজ্য বলে পরিচিত ঝাড়খন্ডের একটা অঞ্চলে বিয়ের সময়ে যৌতুক হিসাবে যে অর্থ নিয়েছিল পাত্রপক্ষ, এখন সেই টাকাই তারা ফিরিয়ে দিচ্ছে কনে পক্ষকে।
ঝাড়খন্ড রাজ্যের পালামৌতে এই প্রক্রিয়া বছরখানেক ধরে চলছে। এর মধ্যেই প্রায় আট’শ মুসলমান পরিবার ছেলের বিয়ের সময়ে নেয়া বরপণ ফিরিয়ে দিয়েছে পুত্রবধূর পরিবারকে। যার পরিমাণ প্রায় ছয় কোটি রুপি। মুসলমান পরিবারগুলোকে দেখে ওই অঞ্চলের অন্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যেও যৌতুক ফেরানো শুরু হয়েছে।
বরপণ নেয়ার চেনা পথের উল্টোদিকে প্রথম হাঁটতে শুরু করে ঝাড়খন্ড রাজ্যের পোখারিটোলা গ্রাম। ছেলের বিয়ের সময়ে যে পণ নিয়েছিল পোখারিটোলার মুসলমান পরিবারগুলো, সেই টাকা ফিরিয়ে দিতে শুরু করেছে তারা।
গ্রামের বাসিন্দা হাজি মুমতাজ আনসারিই এই বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে শুরু করেছিলেন। তিনি বলছিলেন, ‘অনেক লোক আমার কাছে এসে দুঃখ করত যে, মেয়ের বিয়ের পণ জোগাড় করতে গিয়ে কী অসুবিধায় পড়েছেন তারা’।
‘ধারদেনা তো বটেই, জমিও বিক্রি করতে হতো পণের টাকা জোগাড় করতে। সেইসব ঘটনা শুনেই আমার মনে হয় যেÑ অনেক হয়েছে, আর না! বন্ধ করতে হবে এই পণ নেয়া। তখনই মানুষকে বোঝাতে শুরু করি বিষয়টা’।
গত বছর এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এই পণ-বিরোধী অভিযানে একে একে মেয়ের পরিবারের হাতে টাকা তুলে দিয়েছে আট’শ পরিবার। অনেকে হয়তো টাকাটা এখনই ফেরত দিতে পারছে না, কিন্তু তারাও সবার সামনে অঙ্গীকার করছে টাকা ফেরত দিয়ে দেবে বলে।
মুমতাজ আনসারির কথায়, ‘মুসলমান পরিবারগুলোকে দেখে অন্য স¤প্রদায়ের মানুষও এগিয়ে আসছেন। তারাও টাকা ফিরিয়ে দিতে শুরু করেছেন’। পোখারিটোলার বাসিন্দা মুহম্মদ জাকির হোসেন তিন মেয়ের মধ্যে সবথেকে ছোটটির বিয়ে দিয়েছিলেন গ্রামেরই এক যুবকের সঙ্গে। পণ ফেরত দেয়ার এই অভিযান শুরু হওয়ার পরে মেয়ের শ্বশুরবাড়ি থেকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকা। জাকির হুসেন বলছিলেন, ‘বড় দুই মেয়ের আগেই বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। তাদের বিয়ের সময়ে নগদ অর্থ না দিলেও দুই চাকার যান কিনে দিতে হয়েছিল। সঙ্গে বাসন, খাট, আলমারি এসব তো ছিলই। সে আর ফেরত পাওয়া যায়নি’।
‘কিন্তু ছোট মেয়ের শ্বশুরবাড়ি থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকাÑ যেটা নগদে দেয়া হয়েছিল, সেটা ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। তারা বেশ সানন্দেই ফিরিয়ে দিয়েছেন টাকাটা’।
বিহার ঝাড়খন্ডে পণপ্রথা, বাল্যবিবাহ সমস্যা নিয়ে কাজ করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ব্রেকথ্রু। সংগঠনটির ভাইস প্রেসিডেন্ট সোহিনী ভট্টাচার্য বলছিলেন, ওই পোখারিটোলা গ্রামের খবর তাদের কাছেও পৌঁছেছে।
তার কথায়, ‘যিনিই এই অভিযানটা শুরু থাকুন না কেন, দারুণ কাজ করেছেন। যদি ঠিকমতো চালিয়ে যেতে পারেন, তাহলে বহু মেয়ে এই পণের জন্য অত্যাচারের হাত থেকে মুক্তি পাবে’।
‘আসলে বিহার-ঝাড়খন্ডে পণপ্রথার সঙ্গে বাল্যবিবাহও যুক্ত হয়ে রয়েছে। যে মেয়ের বয়স যত বেশি বা যে যত বেশি শিক্ষিত, তার বাবা-মাকে তত বেশি পণ দিতে হয়। সেজন্যই মেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়ে দেন বহু মানুষ’।
‘নিজের পরিবারের কাছেই একটা মেয়ের জীবনের মূল্যটা কমে যায়। মুসলমানদের মধ্যে কিন্তু পণপ্রথা ছিল না, কিন্তু হিন্দু স¤প্রদায়ের কাছ থেকে তারা এই পণের ব্যাপারটা শিখেছে। ঝাড়খন্ডের আদিবাসী স¤প্রদায়ের মধ্যেও পণপ্রথা ছড়িয়েছে’, বলছিলেন সোহিনী ভট্টাচার্য।
পোখারিটোলার এই পণ বিরোধী অভিযান এতটাই সমর্থন পেয়েছে পালামৌ অঞ্চলে যে, এখন আর মুসলিম পরিবারগুলোতে কেউ বরপণ চাইতেই সাহস পাচ্ছেন না। আর যদি বা পাত্রপক্ষ এবং কন্যাপক্ষ নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া করে পণের ব্যবস্থা করেও ফেলে, তাহলে সমাজের মাথারা গিয়ে সেটা আটকিয়ে দিচ্ছেন। এমনকি পণ নেয়ার কথা কানে এলে কাজি সাহেব সেই বিয়ে দিতেও সরাসরি অস্বীকার করছেন! সূত্র : বিবিসি বাংলা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।