Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আস্থা ফেরানো নতুন ইসির প্রথম চ্যালেঞ্জ : এ টি এম শামসুল হুদা

| প্রকাশের সময় : ৩ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সুজনের গোলটেবিল আলোচনা
স্টাফ রিপোর্টার : সুজনের গোলটেবিল আলোচনায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদা বলেছেন, নতুন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বড় চ্যালেঞ্জ মানুষের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা, আস্থা অর্জন করা। তবে শুধু ইসির সদিচ্ছা দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না, এ জন্য নির্বাচনকালীন যে সরকার থাকবে, তাদের মনোভাব গুরুত্বপূর্ণ।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ‘নতুন নির্বাচন কমিশনের সামনে চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। সভাপতিত্ব করেন সুজনের সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।
আলোচনায় এ টি এম শামসুল হুদা বলেন, আস্থা অর্জন করা নতুন কমিশনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কমিশনের কথাবার্তায়, কাজেকর্মে জনমনে এই আস্থা তৈরি হতে হবে যে এই কমিশন দলবাজি করবে না। কোনো ধরনের সংশয় যেন তৈরি না হয়। তিনি নতুন কমিশনকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করার পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন বলতে শুধু পাঁচজনকে বোঝায় না। বর্তমান কমিশনের সর্বমোট চার হাজার কর্মকর্তা রয়েছে। কমিশনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য আলাদা নির্বাচনী ক্যাডার থাকা দরকার। নির্বাচন কমিশনের নাম পরিবর্তনের সমালোচনা করেন তিনি। শামসুল হুদা বলেন, ইভিএম নিয়ে ধীরগতিতে অগ্রসর হওয়া দরকার এবং যাদের ওপর ইভিএম মেশিনের দায়িত্ব দেয়া হবে তাদের ওপর আস্থা থাকতে হবে।
সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, স্বচ্ছতার ভিত্তিতে আমরা চেয়েছিলাম নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের লক্ষে অনুসন্ধান কমিটি যাদের নাম সুপারিশ করবে তাদের নামগুলো প্রকাশ করা হবে, যাতে জনগণ তাদের যোগ্যতা ও অযোগ্যতা সম্পর্কে জানতে পারে। কিন্তু তা করা হয়নি। বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে হলে দক্ষ ও সাহসী হতে হবে এবং সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা দিতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বর্তমান কমিশনের প্রধান কাজ হবে কমিশনের প্রতি জনগণের আস্থা ফেরানো। এ ছাড়া স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলে আইনে প্রচুর সংস্কার আনতে হবে, নির্বাচনী বিরোধ মীমাংসায় নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল ও আপিল ট্রাইব্যুনাল স্থাপন, বড় শহরগুলোতে সংসদীয় আসন সংখ্যা নির্ধারণ করে দেয়া দরকার।
বিচারপতি আবদুল মতিন বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে প্রধান দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের এবং আদালতের রায় অনুযায়ী এ জন্য তাদের সব ধরনের ক্ষমতা রয়েছে। তবে সরকারকে এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে হবে। এ ছাড়া সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমকে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে হবে। শামসুল হুদা কমিশন যেসব সুপারিশ রেখে গিয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন করা দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, নির্বাচন শুধু নির্বাচন কমিশনের বিষয় নয়। সুষ্ঠু নির্বাচন করতে কমিশন ব্যর্থ হলে পুরো জাতির বিরাট ক্ষতি হয়ে যায়। তাই আগামী জাতীয় নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজনে নির্বাচন কমিশনকে লেভেল পেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। নতুন কমিশন তাদের প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা দিয়ে এবং নৈতিক গুণাবলি দিয়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন আয়োজনে সক্ষম হবেন বলে আশা করেন তিনি।
আলী ইমাম মজুমদার বলেন, সকল দলের মতামতের ভিত্তিতে ইভিএমের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার। আমরা নতুন প্রযুক্তি কেন নেব না তা ভাবতে হবে। নবগঠিত নির্বাচন কমিশন সততা ও যোগ্যতা দিয়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর আসিফ নজরুল বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশনের সদিচ্ছা ও কমিশনারদের যোগ্যতা থাকা দরকার। কিন্তু বর্তমান সিইসির বড় কোনো দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা নেই বলে আমরা জানি।
সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নবগঠিত নুরুল হুদা কমিশন বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। সফলতা অর্জন করতে হলে তাদেরকে এগুলো কার্যকরভাবে মোকাবেলা করতে হবে। এসব চ্যালেঞ্জের প্রধান উৎস হল বিদায়ী রকিবউদ্দীন কমিশনের ব্যর্থতা। সরকারও অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের সামনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো তাদের সংখ্যা। কারণ পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট বর্তমান কমিশনের ক্ষেত্রে একটি বড় ঝুঁকি হলো তাদের মধ্যে সম্ভাব্য মতানৈক্য। বৃহত্তর স্বার্থের কথা চিন্তা করে আশা করি নবগঠিত কমিশন এ চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে পারবে।
তিনি বলেন, পুনর্গঠিত নির্বাচন কমিশনের সামনে অন্য একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ হল কমিশনের স্বাধীনতা অক্ষুণœ রাখা। আগের শামসুল হুদা কমিশনের নেতৃত্বে আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থার ব্যাপক সংস্কার সাধিত হয়েছিল। নবগঠিত কমিশনের সামনে একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হল নির্বাচনী ও রাজনৈতিক দলের সংস্কার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা। সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হলে আইনি কাঠমোতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে হবে। এসময় নতুন কমিশনের জন্য আইনি কাঠামোতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের প্রস্তাব করেন সুজন সম্পাদক। এগুলো হলোÑ (১) ‘না ভোটে’র বিধানের পুনঃপ্রবর্তন (২) মনোনয়নপত্র অনলাইনে দাখিলের বিধান (৩) জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে নির্বাচনের ক্ষেত্রে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে হলফনামা আয়কর বিবরণী দাখিলের বিধান (৪) সকল স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনকে প্রদান  এবং (৫) রাজনৈতিক দলের প্রাথমিক সদস্যদের নাম ওয়েবসাইটে প্রকাশ ও নিয়মিত আপডেট করার বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ