পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রাম ব্যুরো : বেড়াতে এসে পাসপোর্ট ভিসা হারিয়ে কারাবন্দি হন ভারতীয় নাগরিক জালাল মোহাম্মদ (৪৫)। সেখানে কেটে যায় সাড়ে তিন বছর। অবশেষে মুক্তি মিলেছে তার। তবে বাড়ি ফেরার মতো টাকা পয়সা হাতে নেই। তাতে কি প্রয়োজনে হেঁটেই স্বদেশে ফিরে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন তিনি। বললেন, মুক্তির কি আনন্দ তা কাউকে বোঝাতে পারব না। তার বাড়ি ভারতের শিলিগুঁড়িতে। হিন্দি-বাংলা মিলিয়ে কথা বলেন জালাল। নিজের গ্রামের নাম, আর বাবা-মায়ের নাম বলতে পারছেন তিনি।
চট্টগ্রামের আইনজীবী টি আর খানের জিম্মায় বিচারক সোমবার জালালকে জামিন দেন। তাকে দেশে ফেরাতে এরইমধ্যে চট্টগ্রামে নিয়োজিত ভারতীয় সহকারী হাই-কমিশনার এবং চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করেছেন এই আইনজীবী। টি আর খান বলেন, জালালের বিরুদ্ধে করা বিদেশি নাগরিক আইনের করা মামলাটি এখন যুক্তিতর্ক পর্যায়ে আছে।
ওই মামলায় জালালের বিরুদ্ধে গত সাড়ে তিন বছরে একজনও সাক্ষ্য দেয়নি। তার মানসিক অবস্থা স্বাভাবিক নয়। তার বাবা-মার নাম ও গ্রামের নাম জানতে পেরেছি। তিনি বলেন, জালাল মোহাম্মদ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুঁড়ি জেলার কঁচুবাড়ি এলাকার বাসিন্দা। তার বাবার নাম আলিম উদ্দিন ও মায়ের নাম হাসিনা।
জালাল বলেন, গ্রামে তিনি কৃষিকাজ করতেন। তারা নয় ভাই-বোন, মা-বাবা বেঁচে আছেন। তিনি এখনও বিয়ে করেননি। কখন এবং কোনো সীমান্ত দিয়ে তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন জানতে চাইলে এর কোনো উত্তর দিতে পারেননি জালাল।
আইনজীবী টি আর খান বলেন, মামলার নথি এবং জালালের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি, তিনি ভারতীয় নাগরিক। ২০১৩ সালের ২৭ অক্টোবর চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চন্দ্রঘোনা পেপার মিল এলাকায় ঘুরছিলেন। সেখানেই তিনি নিজের ব্যাগ হারিয়ে ফেলেন। ব্যাগের মধ্যে তার পাসপোর্ট, টাকা, কাগজপত্র ও কাপড় ছিল।
এরপর স্থানীয়দের সহায়তা চাইলে তারা পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ কোনো কাগজপত্র না পাওয়ায় বিদেশি নাগরিক আইনের ১৪ ধারায় মামলা করে তাকে গ্রেফতার দেখায় বলে জানান টি আর খান। তিনি বলেন, অসহায় মানুষটি বিনা বিচারে সাড়ে তিন বছর হাজতবাস করেছে। দীর্ঘ সময় ধরে তিনি জেলেই ছিলেন। তার বিষয়ে জেল থেকে দূতাবাসকেও জানানো হয়নি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকায় তিনি হয়তো মানসিকভাবে কিছুটা ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন। জেল থেকে বের হওয়ার পর কোথায় যাবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাড়ি যাব। জিজ্ঞেস করলাম কীভাবে যাবেন? টাকা পয়সা কিছু আছে? আশ্চর্যজনকভাবে বললেন, হেঁটে হেঁটে চলে যাব। টাকা পয়সা নেই।
জালালকে নিয়ে মঙ্গলবার নগরীর খুলশী এলাকায় ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনারের কার্যালয়ে যান টি আর খান। সহকারী ভারতীয় হাইকমিশনার সোমনাথ হালদারের সাথে জালালকে নিয়ে দেখা করেন তিনি। সোমনাথ জানান, জালালের সাথে কথা হয়েছে। তার নাগরিকত্ব নিশ্চিত হলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনারের কার্যালয়ে যাওয়ার আগে নতুন পোশাকে জালালের একটি ছবিসহ ফেসবুক স্ট্যাটাস দেন টি আর খান। সোমবার জামিনে কারামুক্ত হওয়ার পর চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে আইনজীবীদের সাথে জালালের আরেকটি ছবিও ফেসবুকে দেয়া হয়। তাতে লেখা হয়, আমরা এই অসহায় লোকটির প্রতি অবিচার করেছি। আমার খুব খারাপ লাগছে। লোকটিকে তার পরিবারের কাছে ফেরত না পাঠানো পর্যন্ত আমরা তার পাশেই আছি।
এদিকে বাংলাদেশে বেড়াতে এসে পাসপোর্ট হারিয়ে সাড়ে তিন বছর হাজতবাস করা ভারতের নাগরিক জালাল মোহাম্মদকে প্রয়োজনীয় মানসিক চিকিৎসা দিতে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল তার আইনজীবীর আবেদনে চট্টগ্রামের বিচারিক হাকিম হোসেন তারেক রেজা এ আদেশ দেন।
জালাল মোহাম্মদের আইনজীবী টি আর খান বলেন, তিনি মানসিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ নন। বিষয়টি আদালতকে জানিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে আবেদন করি। আবেদন গ্রহণ করে আদালত চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধানকে জালালের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের আদেশসহ জালালকে সন্ধ্যায় চমেক হাসপাতালে নেয়া হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।