Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বগুড়ায় নিহত আজিমুলের অতীত ও বর্তমান

দেড়মাস আগে কমান্ডারের দায়িত্ব নিয়ে উত্তরে জেএমবিকে সংগঠিত করছিল সে

| প্রকাশের সময় : ৩ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে : বগুড়ায় গত বুধবার মাঝরাতে শেরপুর উপজেলার ভবানীপুরের জামগ্রামে পুলিশের সাথে জেএমবি সন্ত্রাসীদের গুলি বিনিময়ের সময় নিহত হয়েছে আমিজুল ইসলাম ওরফে আল আমিন ওরফে রনি (২৩)। নিহত রনি ছিল তামিম চৌধুরীর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা জেএমবির উত্তরাঞ্চলের সামরিক প্রধান। সে দেড় মাস আগে দায়িত্ব নিয়ে বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলে নব্য জেএমবিকে সংগঠিত করার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপরে বগুড়ার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান স্বক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পুলিশের কাছে গুরুত্বপূর্ণ এই টার্গেট তার গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী পৌর এলাকার বুজরুক রাধারাম গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছে মর্মে খবর পেয়ে বগুড়া ডিবি ও শেরপুর থানা পুলিশের একটি অগ্রগামী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছলে তাকে পেয়ে যায়। এ সময় বগুড়া ডিবির সদ্য বিপিএম পদকপ্রাপ্ত পুলিশ কনস্টেবল আব্দুস সালাম দৌড়ে গিয়ে তাকে জাপটে ধরেন। কিন্তু পালাবার জন্য মরিয়া ওই জেএমবি কমান্ডার তার কাছে থাকা ছুরি দিয়ে সালামকে ছুরিকাঘাত করে। এসময় তার সাহায্যে এগিয়ে যায় অপর কনস্টেবল ইসমাইল। সে এরপর  ইসমাইলকে ছুরিকাঘাতে রক্তাক্ত করলেও তারা প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে আঁকড়ে ধরে রাখে রাখেন টার্গেটকে। ফলে ধরা পড়ে যায় জেএমবি কমান্ডার আজিমুল ওরফে রনি। এরপর আহত পুলিশ কনস্টেবল দু’জনকে রাজশাহী মেডিক্যালে ভর্তি করে আজিমুলকে নিয়ে তার সহযোগীদের নিয়ে তার সহযোগী ও অস্ত্রের খোঁজে বুধবার রাজশাহী ও বগুড়ার বিভিন্নস্থানে তল্লাশি চালানো হয়।
আজিমুলের দেয়া তথ্যে বুধবার রাত ৩টায় তাকে নিয়ে পুলিশ বগুড়ার শেরপুরের ভবানীপুর ইউপির জামগ্রাম ব্রিজের কাছে পৌঁছলে জেএমবি সন্ত্রাসীরা পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ শুরু করে। পুলিশ ও পাল্টা গুলি ছুঁড়লে পালাতে গিয়ে দু’পক্ষের গুলিবিনিময়ের মাঝে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয় আজিমুল। পুলিশ এসময় ঘটনাস্থল থেকে ১টি বিদেশি পিস্তল, ২টি ম্যাগজিন ও ৩ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে। আহত আজিমুলকে হাসপাতালে নেয়ার পথেই তার মৃত্যু হয় ।
নিহত আজিমুল ওরফে আমিনুলের জঙ্গি কানেকশন সম্পর্কে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান ম-ল জানান, আজিমুল প্রথমে ছাত্র শিবির, পরে পুরাতন জেএমবি ছেড়ে ২০১৫ সালে নব্য জেএমবি’তে যোগ দেয়। প্রায় দেড় মাস আগে সে উত্তরাঞ্চলের সামরিক প্রধান হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করে। এর আগে উত্তাঞ্চলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে রাজিবগান্ধীসহ অন্য দুইজন। রাজিবগান্ধী গ্রেফতার হয়ে এখন বগুড়ার শিবগঞ্জের শিয়া মসজিদের হামলার ঘটনায় রিমান্ডে রয়েছে। তাকে বগুড়ার শেরপুরের জুয়ানপুরে জেএমবি আস্তানায় বোমা ও গ্রেনেড বিস্ফোরণ মামলায়ও রিমান্ডে নেয়া হবে।
তিনি আরো জানান, আজিমুল ২০০৮ সালে রাজশাহীর গোদাগাড়ির নরেন্দ্রপুর দাখিল মাদরাসা থেকে দাখিল পাশ করার পর গোদাগাড়ি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে ২০১০ সালে । পরে ২০১৩ সালে গোদাগাড়ি ডিগ্রি কলেজ থেকে বিএ পাশ করার পর রাজশাহী সরকারি কলেজে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্স পাট ১ এ ভর্তি হয়। দায়িত্ব নেয়ার পর আজিমুল সাংগঠনিক কাজে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় কাজ করার পর
তার বাবার নাম দুরুল হক। সে তার পালক পিতা গোদাগাড়ির আতাউর রহমানের বাড়িতে মাঝে মাঝে যাওয়া আসা করত। আজিমুল যার হাত ধরে নব্য জেএমবিতে এসেছিল এখন তাকেও খোঁজা হচ্ছে। জেএমবির কর্মকা-ে আজিমুল সক্রিয় থাকলেও তাকে তেমনভাবে চেনা যায়নি। তবে সন্দেহভাজন হিসেবে তাকে অনেকদিন ধরেই তার সম্পর্কে  খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছিল ।
 কিছুদিন আগে বগুড়ার শেরপুরের জুয়ানপুর এলাকার জেএমবির একটি ঘাঁটিতে গ্রেনেড ও বোমা বিস্ফারণ ঘটনারও সন্দেহভাজন আসামি ছিল সে। জুয়ানপুরের যে বাড়িতে বিস্ফোরণ হয়েছিল ওই বাড়িতে তার নিয়মিত যাওয়া-আসাও ছিল।




 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ