পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মোবায়েদুর রহমান : এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সু-সময়। তার রাজনৈতিক জীবনে, বিশেষ করে ১৩ বছরের প্রধানমন্ত্রীত্বকালে এমন সু-সময় তার আর কখনো আসেনি। বস্তুত তার জীবনে এমন চমৎকার একটি সময়ের শুরু হয়েছে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকেই। ওই নির্বাচনটি যদিও বিতর্কিত ছিল তবুও নির্বাচনের পর থেকেই তিনি নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী হয়েছেন। বিগত ৩ বছর ১ মাস সময় পার হয়ে গেল, দেশে কোন কার্যকর বিরোধী দল নেই। আরও খোলাসা করে বলতে গেলে বলতে হয় যে, দেশে কোন বিরোধী দলের অস্তিত্ব আছে, সেটি মনে হয় না।
তিনি তার রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে চলেছেন বাধাহীন ভাবে। নিকট ভবিষ্যতেও তার সামনে কোন শক্ত প্রতিবন্ধকতা বা বিরোধিতা দৃশ্যমান নয়। প্রশাসনিক ক্ষেত্রেও সমস্ত স্তরের একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী তিনি। জাতীয় কোন বিরোধী দল নেই। বেসামরিক প্রশাসন, পুলিশ, র্যাব ও বর্ডার গার্ড তার সম্পূর্ণ অনুগত। সামরিকবাহিনীর সাথেও তার রয়েছে সু-সম্পর্ক। জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ এবং ইউনিয়ন পরিষদে তার দল আওয়ামী লীগের রয়েছে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং একক প্রাধান্য।
বৈদেশিক ক্ষেত্রেও তার জন্য অত্যন্ত অনুকূল। প্রতিবেশি ভারত তাকে অকুন্ঠ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। আমেরিকার ট্রাম্প প্রশাসনকে বাংলাদেশের সরকার বান্ধব বলেই প্রতীয়মান হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন তার সাথে সুসম্পর্ক রেখেছে। গণচীন তার সরকারের প্রতি সাহায্যের উদার হাত প্রসারিত করেছে। কোন কর্নার থেকেই তার প্রতি কোন বৈরিতা নাই।
মহৎ কাজের এখনই সময়
ইতিহাসে তার নিজের এবং তার সরকারের নাম সোনার অক্ষরে লেখার এটিই হলো সুবর্ণ সময়। দু’বছর আগেও আদমশুমারী মোতাবেক বাংলাদেশের জনগোষ্ঠির ৯২ শতাংশ ছিলেন মুসলমান। ২০১৫ সালের প্রথম দিকে মুসলমানদের অংশ হয়েছে ৯০ শতাংশ। এই ৯০ শতাংশ মানুষের আশা আকাক্সক্ষা, চাহিদা এবং চিন্তা ধারাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার এটিই হলো উৎকৃষ্ট সময়। গণতন্ত্র একটি রাজনৈতিক সজ্ঞা। অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলো যুগের সামষ্টিক চাহিদা আর জনগণের বিশ্বাসের প্রতিফলন হলো মানুষের মনের খোরাক পূরণ করা। একটি সরকারকে সফল হতে হলে সেই সরকারকে ওই তিনটি ক্ষেত্রেই বা তিনটি ফ্রন্টেই সফল হতে হবে।
এই সরকার অর্থনৈতিক ফ্রন্টে অনেক অগ্রগতি সাধন করেছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন দেশ ও বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ মহলের স্বীকৃতি লাভ করেছে। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সরকার নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী হয়েছে সত্য, কিন্তু গণতন্ত্র ও মৌলিক অধিকারের ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা সব মহলের প্রশংসা অর্জন করতে পারেনি। বলা যায়, এই দু’টি ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা বিতর্কিত। এ ছাড়া এমন কতগুলি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, যে সব পদক্ষেপ সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষের চিন্তা চেতনা এবং আশা আকাঙ্খার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, বরং ক্ষেত্র বিশেষে সেগুলি সাংঘর্ষিক। এসব পদক্ষেপ সমস্ত জনগোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে অন্তরায় সৃষ্টি করে। শুধু তাই নয়, কোন কোন ক্ষেত্রে সেটি জাতীয় ঐক্যের ক্ষেত্রে একটি বিভাজন সৃষ্টি করে। একটি বিভাজিত জাতি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সব ক্ষেত্রে দৃঢ় পদক্ষেপে এগুতে পারে না।
বঙ্গবন্ধু এই সত্য উপলব্ধি করেছিলেন
এই বিষয়টি জাতির স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান সম্যক উপলব্ধি করেছিলেন। তাই ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি লন্ডন ও ভারত হয়ে পাকিস্তানের কারাগার থেকে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর তিনি কোলাবরেটর আইন, কয়েকটি রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা এবং এই ধরণের আরও কয়েকটি পদক্ষেপের নেতিবাচক দিক উপলব্ধি করেছিলেন। কোলাবরেটর আইনে ১ লক্ষ লোককে গ্রেফতার করলেও পরবর্তীতে ১০ ভাগের ৯ ভাগ বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হয়। যে সাত শতাধিক ব্যক্তির দ- হয়েছিল তারা ছাড়া অবশিষ্ট সকলকে তিনি অনুকম্পা প্রদর্শন করেন। ফলে ৯০ হাজারেরও বেশি বন্দী মুক্তি পায়। এই সবই তিনি করেছিলেন জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য।
ইসলামের প্রসারে বঙ্গবন্ধু
এ কথা সত্যি যে তার আমলে যে সংবিধান প্রণীত হয়, সেই সংবিধানে রাষ্ট্রের অন্যতম মূলনীতি ছিল ধর্ম নিরপেক্ষতা। তৎসত্ত্বেও তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই প্রতিষ্ঠানের প্রথম পরিচালক নিযুক্ত হন অবিভক্ত বাংলার বিশিষ্ট দার্শনিক ও ইসলামী চিন্তাবীদ মনীষী আবুল হাশিম। শেখ মুজিবই ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিয়ে ঘোড় দৌড় বন্ধ করেন এবং রেস কোর্সের নাম পরিবর্তন করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান রাখেন। তার আমলেই মদ এবং জুয়া নিষিদ্ধ হয়। এসব কারণে আওয়ামী লীগ ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা বললেও সাধারণ মানুষের মাঝে ধর্ম সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের একটি ইতিবাচক ইমেজ সৃষ্টি হয়।
রাজনৈতিক ক্ষেত্রে মতাদর্শগত পার্থক্যকে তিনি ব্যক্তিগত সম্পর্কে টেনে আনতেন না। তাই দেখা যায় যে ফজলুল কাদের চৌধুরী, খান এ সবুর, শাহ আজিজুর রহমান প্রমুখ রাজনীতিবিদ পাকিস্তানের সমর্থক থাকলেও তাদের সেই বিশ্বাস শেখ সাহেবের সাথে তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কের উপর কোন প্রভাব ফেলেনি। বরং শোনা যায় যে, শেখ সাহেব ব্যক্তিগতভাবে তাদের খোঁজখবর রাখতেন এবং তাদের পরিবারবর্গকে সম্ভব হলে নীরবে সাহায্য ও সহযোগিতা করতেন।
ওআইসি ও বঙ্গবন্ধু
শেখ সাহেবই ১৯৫ জন পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দীকে এবং যুদ্ধপরাধীকে পাকিস্তানে ফেরত যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। শেখ মুজিব আরও দুঃসাহসিক কাজ করেছেন। ভারতের প্রচ্ছন্ন বিরোধিতা সত্ত্বেও তিনি সেই সময় লাহোরে অনুষ্ঠিত ইসলামি শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। তার আমলেই পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভূট্টো ঢাকায় এসেছিলেন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জনাব ভূট্টোকে বিপুল সংবর্ধনা জ্ঞাপন করেছিলেন। শেখ সাহেবের এসব উদার পদক্ষেপ কূটনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য বিরাট সাফল্য বয়ে আনে। প্রথমে পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। বাংলাদেশকে পাকিস্তান স্বীকৃতি না দেওয়ার ফলে গণচীন এবং সৌদি আরবের মত দুইটি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বশক্তির স্বীকৃতিও আটকে থাকে। পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার ফলে গণচীন এবং সউদী আরবও বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়।
বাম ঘরানা ও বঙ্গবন্ধু
বামপন্থিদের ব্যাপারেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ছিল নিজস্ব অবস্থান। রাজনৈতিক কারণে তিনি মস্কোপন্থি ন্যাপ এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাথে গণঐক্য জোট গঠন করেন, কিন্তু তাই বলে তিনি তাদেরকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অংশীদার করেন নি। এসব হলো ইতিহাসের কথা, বাংলাদেশ যত দিন টিকে থাকবে, তত দিন ইতিহাসের পাতায় এসব ঘটনা অমোঘ দলিল হিসাবে সাক্ষ্য হয়ে বিরাজ করবে।
এখন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রয়েছেন। ইতিপূর্বে ১৯৯৬ সালেও তিনি ক্ষমতায় এসেছিলেন। তখনও তিনি ৫ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। ২০০৯ সালে তিনি ২য় বার ক্ষমতায় আসেন এবং ৫ বছর ক্ষমতায় থাকেন। এখন তিনি ৩য় মেয়াদে ক্ষমতায় আছেন এবং এই মেয়াদেও ৩ বছর পার হয়েছে। সব মিলিয়ে তিনি ১৩ বছরের বেশি ক্ষমতায় আছেন। প্রথম ২ দফায় তার ক্ষমতায় থাকাকালে বামপন্থিরা তাকে সহযোগিতা করলেও আনুষ্ঠানিকভাবে তারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভাগ বসাতে পারেনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।