Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বাণিজ্য পরিবহন ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতার অঙ্গীকার

পাকিস্তানে ১০ জাতির ইসিও সম্মেলন সমাপ্ত

প্রকাশের সময় : ৩ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:৫৮ এএম, ৩ মার্চ, ২০১৭

ইনকিলাব ডেস্ক : সদস্য দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারের আহ্বানের মধ্যদিয়ে গত বুধবার পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত হল ইকোনোমিক কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন ইসিও’র ত্রয়োদশ সম্মেলন। সম্মেলনে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে যোগাযোগ, বাণিজ্য, পরিবহন ও জ্বালানি খাতের মতো সেক্টরে সহযোগিতা বাড়ানোর অঙ্গিকার করেন দেশগুলোর নেতারা। বিশেষ করে জ্বালানি খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান। এছাড়া তিনি সদস্য দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ইসিও দেশগুলো তাদের বিমান, স্থল ও সমুদ্র পরিবহন উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে পারে।
সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণে জনাব এরদোগান আরো বলেন, আমরা তুরস্কে ২০২৩ সালের টার্গেটকে খুব গুরুত্ব দিচ্ছি বলে আমার দেশ বাণিজ্যের প্রসারে যে কোন পদ্ধতি উদ্ভাবনে প্রস্তুত’। তিনি ইসিও দেশগুলোর প্রতি আরো ব্যাপক পদক্ষেপ নেবার আহŸান জানিয়ে বলেন, বিনিয়োগের সাথে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি গভীর সম্পর্কযুক্ত।
এরদোগান বলেন, ‘আমি আরো বিশ্বাস করি যে, নাগর্নো-কারাবাখে আর্মেনিয়ার আগ্রাসনের কারণে আজারবাইজান যেসব সমস্যার মোকাবিলা করছে সে সম্পর্কে আমাদের কিছু করণীয় রয়েছে’।
তিনি বলেন, ‘বিগত ২০ বছর ধরে কূটনৈতিক উদ্যোগ নেয়া সত্তে¡ও সঙ্ঘাত চলে আসছে। বিষয়টির প্রতি ইসিও সম্মেলনের দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন’। এরদোগান সিরিয়া, ইরাক ও ইয়েমেনে যুদ্ধ বন্ধে উদ্যোগ নেবার জন্যও ইসিও দেশগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণের আহŸান জানান।
এরদোগান বলেন, ইসিও দেশগুলোর জনসংখ্যা বিশ্বের মোট পপুলেশনের ৬ শতাংশ হলেও বিশ্ব অর্থনীতিতে অংশীদারিত্ব মাত্র ২ ভাগের। সবার আগে প্রয়োজন ইসিও দেশগুলোর মধ্যেকার চুক্তিকে সক্রিয় করে আন্তঃবাণিজ্যের প্রসার তরান্বিত করা।     তিনি বলেন, আমাদের ১০টি দেশের জনসংখ্যা ৪০ কোটিরও বেশি যা অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। ইসিও অভিন্ন মূল্যবোধ ও গভীরে প্রোথিত ইতিহাস ও ভ্রাতৃত্বের প্রতিনিধিত্ব করে। এ সম্মেলন আমাদের গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ করে দিয়েছে সংস্থার সাধারণ চিত্র ও ঘাটতিগুলোর দিকে দৃষ্টি দিতে এবং তার আলোকে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে শক্তিশালী করতে’।
তিনি ইসিও’র সংস্কার দাবি করেন, বিশেষ করে সদস্য দেশগুলোর মানবসম্পদকে শক্তিশালী করা এবং বাজেট ও প্রকল্পের মালিকানার কৌশল উদ্ভাবন প্রশ্নে। এরদোগান পরিবেশ, কৃষি ও পর্যটন খাতে বৃহত্তর সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, তুরস্ক পরিবহন খাতে বিশাল বিশাল প্রকল্প গ্রহণ করেছে। যেমন ইস্তাম্বুলের মারমারি, ইউরেশিয়া টানেল, ইয়াভুজ সুলতান সেলিম সেতু, ওসমান গাজী সেতু এবং হাই-স্পিড ট্রেনের লাইন। এগুলো শুধুমাত্র তুরস্ক নয়, ইসিও দেশগুলোর পরিবহন সেক্টরকেও শক্তিশালী করেছে। তিনি হাতে হাত রেখে আঞ্চলিক সমস্যাগুলোর সমাধানে এগিয়ে আসার জন্যও ইসিও সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহŸান জানান।   
এদিকে সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, আর্মেনিয়া-আজারবাইজানের মধ্যকার নাগর্নো-কারাবাখ দ্ব›দ্ব অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও পূর্ণ অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ব্যাহত এবং বৃহত্তর স্তরে উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ করছে। ঘোষণায় নাগর্নো-কারাবাখ দ্ব›দ্বসহ ইসিও অঞ্চলে বিদ্যমান অমীমাংসিত দ্ব›দ্ব সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বিশেষভাবে সার্বভৌমত্ব ও অখÐতার মূলনীতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় অদূর অতীতে গৃহীত প্রস্তাব বাস্তবায়নের উদ্যোগ আরো বাড়ানোর ওপর জোর দেয়া হয় সম্মেলনে। আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভও এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।
নাগর্নো-কারাবাখ দ্ব›দ্ব তার নতুন মোড় নেয় যখন আর্মেনিয়ার এসএসআর ১৯৮৮ সালে আজারবাইজানীয় এসএসআর-এর মধ্যে ভূমির মালিকানা দাবি করে।
আজারবাইজানের নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চলে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে একটি হিংস্র যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধের ফলে আর্মেনীয় সশস্ত্রবাহিনী নাগর্নো-কারাবাখ এবং সংলগ্ন ৭টি জেলা (লাচিন, কালবাজার, আঘদাম, ফুজুলি, জাবরাইল, গুবাদলি ও জাঙ্গিলান)সহ আজারবাইজানের ২০ শতাংশ ভূমি দখল করে নেয়। এর ফলে আজারবাইজানের ১০ লাখেরও বেশি মানুষ শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুহারায় পরিণত হয়। ১৯৯৪ সালে বিশকেকে এক চুক্তির আওতায় আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে সামরিক দ্ব›েদ্বর অবসান ঘটে।
১৯৮৫ সালে ইসিও প্রতিষ্ঠিত হয়। সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিল তুরস্ক, পাকিস্তান ও ইরান। ১৯৯২ সালে আরও সাতটি দেশকে ইসিওভুক্ত করা হয়। দেশগুলো হচ্ছে আফগানিস্তান, আজারবাইজান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও উজবেকিস্তান। পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত এবারের সম্মেলনে সংস্থাটির সদস্য দেশগুলোর নেতারা অংশ নেন। এছাড়া বিশেষ আমন্ত্রণে বৈঠকে অংশ নেয় চীন।
এদিকে সিরিয়া ইস্যুতে ব্যাপক মতপার্থক্যের মধ্যেই পাকিস্তানে একমঞ্চে মিলিত হন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান এবং ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। ইসিও সম্মেলনে যোগ দিতে পাকিস্তান সফরে আসেন দুই নেতা। ইসিও সম্মেলনের ফাঁকেই দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় মিলিত হন এরদোগান-রুহানি। এ সময় দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নানা বিষয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়। সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি, ডন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ