Inqilab Logo

বুধবার, ২৯ মে ২০২৪, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

বসুন্ধরায় নর্থ-সাউথ ছাত্রদের অবরোধ-ভাঙচুর দফায় দফায় বিক্ষোভ

| প্রকাশের সময় : ৩ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

শুক্রবারের পরীক্ষা ও ক্লাস বাতিল রাস্তায় ৫ ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ  
স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর ভাটেরা থানার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার নিরাপত্তারক্ষীদের পিটুনিতে এক ছাত্রের আহত হওয়ার জের ধরে পার্শ্ববর্তী প্রগতি সরণিতে অবরোধসহ আবাসিক এলাকাটির ভেতরের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও ভাঙচুর করেছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা।
শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে এবং বসুন্ধরার ভিতরের বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর করে। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় যান চলাচল বাধাগ্রস্ত করতে রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে দেয় শিক্ষার্থীরা। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন করা হয়। বেলা পৌনে ৩টার দিকে থেকে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের একটি ক্যাফেটেরিয়ার পাশাপাশি আবাসিক এলাকার ভেতরে থাকা বসুন্ধরা গ্রুপের কর্পোরেট কার্যালয়ে ভাঙচুর করে। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা সংলগ্ন যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে দায়িত্ব পালনকারী ট্রাফিক সার্জেন্ট সজীব বলেন, সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ২টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা প্রগতি সরণী অবরোধ করে রাখে ছাত্ররা। পরে নর্থ সাউথের প্রক্টর ও পুলিশ এসে ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদেও সেখান থেকে উঠিয়ে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এলাকায় ভেতরে ছাত্ররা তখনো বিক্ষোভ করছে। তবে ছাত্ররা প্রগতি সরণি থেকে সরে দাঁড়ানোর পর এ সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানান এই পুলিশ সদস্য। এ ঘটনার কারণে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি আজ শুক্রবার সব ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে ক্লাস ও পরীক্ষার মেকআপ সময়সূচি পরবর্তীতে জানানো হবে।
সরেজমিন দেখা গেছে, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রধান কার্যালয়ের ‘বসুন্ধরা হাউজিং’ ভবনে হামলা করে কাঁচের দরজা, জানালা ও দুটো জেনারেটর ভাঙচুর করেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া ওই এলকার সব চেকপোস্টে আগুন ধরানোর চেষ্টা করেন। তবে পুলিশের বাধার কারণে তা করতে পারেননি শিক্ষার্থীরা। তবে যান চলাচল বন্ধ রাখায় কুড়িল বিশ্ব রোড, প্রগতি সরণী, বাড্ডা রামপুরা গুলশানসহ ওই এলাকার রাস্তায় দুই দফায় ৫ ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। শত শত গাড়ি রাস্তায় আটকা পরে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়েন্ত্রণে নেয়। তবে ক্যাম্পাসের ভেতরে ও আশপাশ এলাকায় বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে জনসংযোগ কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), বসুন্ধরা গ্রুপ এবং শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এদিকে, বৈঠকে বসুন্ধরা গ্রুপ কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের বেশ কয়েকটি দাবি মেনে নিয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ এ ঘটনায় জড়িত নিরাপত্তাকর্মীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ, আহত শিক্ষার্থীকে মেডিক্যাল ও অন্যান্য ক্ষতিপূরণ দেয়া, শিক্ষার্থীদের যথাযথ সম্মান দিতে নিরাপত্তাকর্মীদের অবহিত করা এবং বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রধান ফটক প্রাথমিকভাবে রাত ৮টা পর্যন্ত ও পরবর্তীতে ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখা।
জানা গেছে, বুধবার সন্ধ্যায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় মোটরসাইকেল রাখা নিয়ে নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে তর্ক ও কথাকাটাকাটি হয় এক শিক্ষার্থীর। এক পর্যায়ে ওই শিক্ষার্থী প্রহৃত হন। পরে পুলিশ এসে শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করে। এ ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে রাতেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পারে। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বৃহস্পতিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মানববন্ধন করার ঘোষণা দেন। কিন্তু সকালে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন করতে দেয়া হয়নি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা বসুন্ধরা গ্রুপের একটি অফিস ও কয়েকটি খাবারের দোকান ভাঙচুর করে।
জানা যায়, নিরাপত্তারক্ষীদের মারধরে বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শাহরিয়ার হাসনাত তপু আহত হলে  এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রছাত্রীরা রাতে একদফা বিক্ষোভ করে। আবার গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ফের বিক্ষোভ শুরু করে তার সহপাঠীরা। দুপুরে প্রগতি সরণী থেকে সরে গিয়ে আবাসিক এলাকার ভেতর বসুন্ধরা গ্রুপের কয়েকটি স্থাপনায় ভাঙচুরের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে শুক্রবার হতে যাওয়া এমবিএর সব ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুই ঘণ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে প্রগতি সরণী অবরোধ করে রাখার পর দুপুর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এলাকায় ছাত্রছাত্রীরা বিক্ষোভ ও ভাঙচুর শুরু করে বলে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান।
বুধবার দিবাগত রাত ১০টার দিকে বসুন্ধরায় অ্যাপোলো গেইটে মোটরসাইকেল রাখাকে কেন্দ্র করে আবাসিক এলাকাটির নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে তপুসহ আরও দুই নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের কথা কাটাকাটি হয়। এর এক পর্যায়ে নিরাপত্তারক্ষীরা তাদের ওপরে হামলা করে। এ খবর শুনে আরও ১০-১৫ জন ছাত্র সেখানে গেলে তারাও মারধরের শিকার হন। এরপর রাত থেকেই বিক্ষোভ শুরু করেন নর্থ সাউথের শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে গুলশান জোনের সহকারী কমিশনার মোস্তাক আহমেদ বলেন, পরিস্থিতি আমরা প্রায় শান্ত করে ফেলেছি, সব রাস্তায় যান চলাচল স্বাভাবিক। তারপর ও কিছু ছাত্র বিচ্ছিন্নভাবে বিক্ষোভ দেখানোর চেষ্টা করছে। আমরা সতর্ক আছি।
নর্থসাউথের প্রক্টও সৈয়দ কামরুল ইসলাম বলেন, সকালে বসুন্ধরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা ক্ষমা চেয়েছে এবং ছাত্রদের দাবিও মেনে নিয়েছে। তবু কিছু শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এখনো বিক্ষোভ দেখাচ্ছে, আমরা তাদের শান্ত করার চেষ্টা করছি। তপু বর্তমানে অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এদিকে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন স্টপ ইট অ্যান্ড শেয়ার কাবাবের দোকানে ভাঙর করেন শিক্ষার্থীরা। দোকান মালিকদের কয়েকজন জানান, হামলার আগে শিক্ষার্থীরা দোকান বন্ধ না করলে হামলার হুমকি দেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বেলা ২টার পর ওই এলাকায় র‌্যাব সদস্যরা অবস্থান নেয়।
ঘটনাস্থলে র‌্যাব পুলিশের টহল অব্যাহত রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ