Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঘরে ঘরে আলো জ্বলবে- সেটাই আমাদের লক্ষ্য -প্রধানমন্ত্রী

| প্রকাশের সময় : ২ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষাবৃত্তির টাকা বিতরণের কর্মসূচি উদ্বোধন
বিশেষ সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ঘরে ঘরে আলো জ্বালব, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। বাংলাদেশের একটি ঘরও আর অন্ধকারে থাকবে না। গতকাল বুধবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নতুন ট্রান্সমিশন ও বিতরণ লাইনের পাশাপাশি আটটি বিদ্যুতকেন্দ্র উদ্বোধনের সময় তিনি এ কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে আমরা গড়ে তুলব। তিনি বলেন, উদ্বোধন করা বিদ্যুতকেন্দ্রগুলোতে মোট এক হাজার ৩৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে। এতে দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হবে। প্রকল্পগুলোর মধ্যে সদ্যনির্মিত আটটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, একটি সাবস্টেশন ও একটি সঞ্চালন লাইনও রয়েছে। প্রকল্পগুলো চালু হলে বিভিন্ন জেলার ১০টি উপজেলা এবং বান্দরবানের একটি উপজেলায় বিদ্যুৎ শতভাগ সরবরাহ নিশ্চিত হবে। সদ্য নির্মিত আটটি বিদ্যুতকেন্দ্র হলো- শাহজিবাজার ৩৩০ মেগওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্র, খুলনার ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্র, আশুগঞ্জ ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্র, মানিকগঞ্জের ৫৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্র, নবাবগঞ্জের ৫৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্র, জামালপুরের ৯৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্র, বরিশালের ১১০ মেগাওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্র এবং মদনগঞ্জ ৫৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সরাসরি মতবিনিময় করেন- গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়া, মেহেরপুরের মুজিবনগর, টাঙ্গাইলের ভুঞাপুর, নীলফামারীর সৈয়দপুর, জামালপুরের সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ, বান্দরবানের থানচি উপজেলা ও গাজীপুরের কালিয়াকৈরবাসীর সঙ্গে।
উদ্বোধন করা বিদ্যুতকেন্দ্রগুলোতে মোট এক হাজার ৩৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। এতে দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হবে।
অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ড. আহমেদ কায়া কাউস পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে বিদ্যুৎতকেন্দ্রগুলোর বৃত্তান্ত তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে একটি ভিডিও ক্লিপিংসও প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদসহ মন্ত্রী পরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ এবং উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য আমরা চেষ্টা করেছি, যার সুফলটা এখন দেশের মানুষ পাচ্ছে।  অতীতে বিদ্যুৎ নিয়ে হাহাকার অবস্থা ছিল। আমরা বিদ্যুৎ প্রকল্পের বহুমুখীকরণের এবং বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নিই।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নেত্রী বিদ্যুৎ দিতে না পারলেও দিয়েছিলেন খাম্বা। কারণ, তার ছেলে খাম্বা ইন্ডাস্ট্রি করেছিল। তারা বিদ্যুৎ উৎপাদন তো বাড়ায়নি বরং কমিয়ে দিয়েছে। আমরা সততা ও দক্ষতার সাহায্যে উৎপাদন বৃদ্ধি করে বর্তমানে আমরা ১৫ হাজার ৩৫১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব করেছি। শতকরা ৮০ ভাগ মানুষের ঘরে আমরা বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছি। আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করলে দেশের মান যে উন্নত করা যায়, তা আমরা প্রমাণ করেছি।
প্রধানমন্ত্রী পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের উদ্দেশে বলেন, দীর্ঘদিন এখানে একটি অশান্ত পরিবেশ ছিল। আমি প্রথমবার সরকারে আসার পর পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি করি এবং এরপর সেখানে সত্যিই শান্তি ফিরে আসে এবং সার্বিক উন্নয়নের ব্যাপক কর্মসূচি আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল সেই রাস্তাঘাট, পুল-ব্রিজ আমরা করে দিচ্ছি। পাশাপাশি এখানে কোনো মোবাইল নেটওয়ার্ক ছিল না, আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর সেখানে যেন মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারে, সেই নেটওয়ার্ক আমরা করে দিয়েছি।
তিনি বলেন, আজকে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দিলাম। পাশাপাশি গোটা পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য ইতোমধ্যে ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সমগ্র এলাকায় বিদ্যুতায়নের ব্যবস্থা করা হবে। যেসব জায়গায় গ্রিডলাইন যাওয়া কষ্টকর, সেখানে সোলার প্যানেল দিচ্ছি। এখানে ৪৬ হাজার সোলার হোম করা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ওই এলাকার মানুষ যেন আর দরিদ্র না থাকে, সে জন্য সব ধরনের উদ্যোগ তার সরকার বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।  থানচিসহ বিভিন্ন এলাকার স্কুলগুলোকে আবাসিক স্কুল করে দেয়ারও আমরা উদ্যোগ নিয়েছি।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী বিজয় সরণী এলাকার প্রস্তাবিত বর্ধিত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ওপর একটি উপস্থাপনা প্রত্যক্ষ করেন। সেনাবাহিনীর প্রধান প্রকৌশলী মেজর জেনারেল মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান এটি উপস্থাপন করেন।
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদিন এতে আলোচনায় অংশ নেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান, প্রধানমন্ত্রী উপস্থাপনাটি প্রত্যক্ষ করার পর শহরের ব্যস্ততম এলাকা বিজয় সরণীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় স্বাচ্ছন্দ আনার জন্য কিছু পরামর্শ দেন।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষাবৃত্তির টাকা বিতরণের কর্মসূচি উদ্বোধন :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে দেশকে একটি শিক্ষিত জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী গতকাল বুধবার গণভবনে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষাবৃত্তির টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিতরণ কর্মসূচি  রূপালী ব্যাংকের ‘শিওর ক্যাশ’ কর্মসূচি উদ্বোধন করে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে রূপালী ব্যাংকের ‘শিওর ক্যাশে’র সাহায্যে মোবাইল ব্যাংকিং দ্বারা প্রাথমিক শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা বিতরণ এই কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান স্বাগত বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুুল নাসির চৌধুরী অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। অনুষ্ঠানে মোবাইলে উপবৃত্তির অর্থ বিতরণের ওপর একটি ভিডিও ক্লিপিংস পরিবেশন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী ট্যাবের সুইচ চেপে এ কার্যক্রম উদ্বোধনের সঙ্গে সারাদেশের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি এবং ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত দুই কোটি ৩০ লাখ মায়ের হাতে উপবৃত্তির টাকা পৌঁছে যায়।
‘মায়ের হাসি’ নামক এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৬০০ কোটি টাকা। প্রতি মাসে এক কোটি ২০ লাখ মায়ের কাছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এই নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পৌঁছে যাবে এবং মায়েরা শিওর ক্যাশের এজেন্টের মাধ্যমে এই টাকা ক্যাশ করে নিতে পারবেন।
কর্মসূচির উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মায়েদের যাদের হাতে মোবাইল ফোন নাই, তাদের ২০ লাখ সিম এবং ২০ টাকা ফ্রি টাকটাইম দেয়ার চুক্তি করেছে ‘টেলিটক’। কাজেই আমরা তাদের হাতে ও মোবাইল ফোন পৌঁছে দিচ্ছি। অর্থাৎ এখন সবার হাতেই মোবাইল ফোন এবং এই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে টাকা চলে যাচ্ছে। টাকা তোলার জন্য কোনো ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে না, দূরে যেতে হচ্ছে না। ঘরে বসেই টাকার খবরটা পেয়ে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, এই টাকার যেন অপব্যবহার না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই এই পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি। কাজেই আমি সত্যই আনন্দিত যে, ডিজিটাল বাংলাদেশ আজকে বাস্তব। এর সুফলটা আজ গ্রামের মানুষ পাচ্ছে, প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ পাচ্ছে। কাজেই আমি মনেকরি সেটাই সব থেকে বড় অর্জন। ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনলাইনে এক কোটি ২০ লাখ মায়ের কাছে আজ উপবৃত্তির টাকা পৌঁছে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি আর একটা আবেদন করব- অভিভাবকদের প্রতি নিজেদের ছেলে-মেয়েরা যেন মন দিয়ে লেখাপড়া করে সেদিকে আপনারা যেমন খেয়াল রাখবেন, তেমনি ছেলে-মেয়ে যেন বিপথে না যায়, ছেলেবেলা থেকেই সেভাবে তাদের গড়ে তুলবেন। তারা যেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে পারে, দেশকে ভালো বাসতে পারে, মানুষের জন্য তাদের মানসিকতা যেন এমনভাবে গড়ে ওঠে যে দেশটা নিজের, সেই বোধ যেন গড়ে ওঠে। যাতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ভবিষ্যতে এ দেশ গড়ে ওঠে এবং জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা আমরা গড়তে পারি।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া, রংপুরের পীরগঞ্জ এবং দিনাজপুরের পার্বতীপুরের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে সরাসরি যুক্ত থেকে মতবিনিময় করেন।
উপজেলায় বিদ্যুৎ শতভাগ সরবরাহ নিশ্চিত হবে। সদ্য নির্মিত আটটি বিদ্যুতকেন্দ্র হলোÑ শাহজিবাজার ৩৩০ মেগওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্র, খুলনার ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্র, আশুগঞ্জ ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্র, মানিকগঞ্জের ৫৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্র, নবাবগঞ্জের ৫৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্র, জামালপুরের ৯৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্র, বরিশালের ১১০ মেগাওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্র এবং মদনগঞ্জ ৫৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সরাসরি মতবিনিময় করেনÑ গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়া, মেহেরপুরের মুজিবনগর, টাঙ্গাইলের ভুঞাপুর, নীলফামারীর সৈয়দপুর, জামালপুরের সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ, বান্দরবানের থানচি উপজেলা ও গাজীপুরের কালিয়াকৈরবাসীর সঙ্গে।
উদ্বোধন করা বিদ্যুতকেন্দ্রগুলোতে মোট এক হাজার ৩৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। এতে দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হবে।
অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ড. আহমেদ কায়া কাউস পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে বিদ্যুৎতকেন্দ্রগুলোর বৃত্তান্ত তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে একটি ভিডিও ক্লিপিংসও প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদসহ মন্ত্রী পরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ এবং উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য আমরা চেষ্টা করেছি, যার সুফলটা এখন দেশের মানুষ পাচ্ছে।  অতীতে বিদ্যুৎ নিয়ে হাহাকার অবস্থা ছিল। আমরা বিদ্যুৎ প্রকল্পের বহুমুখীকরণের এবং বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নিই।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নেত্রী বিদ্যুৎ দিতে না পারলেও দিয়েছিলেন খাম্বা। কারণ, তার ছেলে খাম্বা ইন্ডাস্ট্রি করেছিল। তারা বিদ্যুৎ উৎপাদন তো বাড়ায়নি বরং কমিয়ে দিয়েছে। আমরা সততা ও দক্ষতার সাহায্যে উৎপাদন বৃদ্ধি করে বর্তমানে আমরা ১৫ হাজার ৩৫১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব করেছি। শতকরা ৮০ ভাগ মানুষের ঘরে আমরা বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছি। আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করলে দেশের মান যে উন্নত করা যায়, তা আমরা প্রমাণ করেছি।
প্রধানমন্ত্রী পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের উদ্দেশে বলেন, দীর্ঘদিন এখানে একটি অশান্ত পরিবেশ ছিল। আমি প্রথমবার সরকারে আসার পর পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি করি এবং এরপর সেখানে সত্যিই শান্তি ফিরে আসে এবং সার্বিক উন্নয়নের ব্যাপক কর্মসূচি আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল সেই রাস্তাঘাট, পুল-ব্রিজ আমরা করে দিচ্ছি। পাশাপাশি এখানে কোনো মোবাইল নেটওয়ার্ক ছিল না, আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর সেখানে যেন মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারে, সেই নেটওয়ার্ক আমরা করে দিয়েছি।
তিনি বলেন, আজকে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দিলাম। পাশাপাশি গোটা পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য ইতোমধ্যে ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সমগ্র এলাকায় বিদ্যুতায়নের ব্যবস্থা করা হবে। যেসব জায়গায় গ্রিডলাইন যাওয়া কষ্টকর, সেখানে সোলার প্যানেল দিচ্ছি। এখানে ৪৬ হাজার সোলার হোম করা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ওই এলাকার মানুষ যেন আর দরিদ্র না থাকে, সে জন্য সব ধরনের উদ্যোগ তার সরকার বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।  থানচিসহ বিভিন্ন এলাকার স্কুলগুলোকে আবাসিক স্কুল করে দেয়ারও আমরা উদ্যোগ নিয়েছি।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী বিজয় সরণী এলাকার প্রস্তাবিত বর্ধিত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ওপর একটি উপস্থাপনা প্রত্যক্ষ করেন। সেনাবাহিনীর প্রধান প্রকৌশলী মেজর জেনারেল মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান এটি উপস্থাপন করেন।
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদিন এতে আলোচনায় অংশ নেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান, প্রধানমন্ত্রী উপস্থাপনাটি প্রত্যক্ষ করার পর শহরের ব্যস্ততম এলাকা বিজয় সরণীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় স্বাচ্ছন্দ আনার জন্য কিছু পরামর্শ দেন।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষাবৃত্তির টাকা বিতরণের কর্মসূচি উদ্বোধন :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে দেশকে একটি শিক্ষিত জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী গতকাল বুধবার গণভবনে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষাবৃত্তির টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিতরণ কর্মসূচি  রূপালী ব্যাংকের ‘শিওর ক্যাশ’ কর্মসূচি উদ্বোধন করে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে রূপালী ব্যাংকের ‘শিওর ক্যাশে’র সাহায্যে মোবাইল ব্যাংকিং দ্বারা প্রাথমিক শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা বিতরণ এই কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান স্বাগত বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুুল নাসির চৌধুরী অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। অনুষ্ঠানে মোবাইলে উপবৃত্তির অর্থ বিতরণের ওপর একটি ভিডিও ক্লিপিংস পরিবেশন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী ট্যাবের সুইচ চেপে এ কার্যক্রম উদ্বোধনের সঙ্গে সারাদেশের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি এবং ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত দুই কোটি ৩০ লাখ মায়ের হাতে উপবৃত্তির টাকা পৌঁছে যায়।
‘মায়ের হাসি’ নামক এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৬০০ কোটি টাকা। প্রতি মাসে এক কোটি ২০ লাখ মায়ের কাছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এই নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পৌঁছে যাবে এবং মায়েরা শিওর ক্যাশের এজেন্টের মাধ্যমে এই টাকা ক্যাশ করে নিতে পারবেন।
কর্মসূচির উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মায়েদের যাদের হাতে মোবাইল ফোন নাই, তাদের ২০ লাখ সিম এবং ২০ টাকা ফ্রি টাকটাইম দেয়ার চুক্তি করেছে ‘টেলিটক’। কাজেই আমরা তাদের হাতে ও মোবাইল ফোন পৌঁছে দিচ্ছি। অর্থাৎ এখন সবার হাতেই মোবাইল ফোন এবং এই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে টাকা চলে যাচ্ছে। টাকা তোলার জন্য কোনো ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে না, দূরে যেতে হচ্ছে না। ঘরে বসেই টাকার খবরটা পেয়ে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, এই টাকার যেন অপব্যবহার না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই এই পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি। কাজেই আমি সত্যই আনন্দিত যে, ডিজিটাল বাংলাদেশ আজকে বাস্তব। এর সুফলটা আজ গ্রামের মানুষ পাচ্ছে, প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ পাচ্ছে। কাজেই আমি মনেকরি সেটাই সব থেকে বড় অর্জন। ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনলাইনে এক কোটি ২০ লাখ মায়ের কাছে আজ উপবৃত্তির টাকা পৌঁছে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি আর একটা আবেদন করবÑ অভিভাবকদের প্রতি নিজেদের ছেলে-মেয়েরা যেন মন দিয়ে লেখাপড়া করে সেদিকে আপনারা যেমন খেয়াল রাখবেন, তেমনি ছেলে-মেয়ে যেন বিপথে না যায়, ছেলেবেলা থেকেই সেভাবে তাদের গড়ে তুলবেন। তারা যেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে পারে, দেশকে ভালো বাসতে পারে, মানুষের জন্য তাদের মানসিকতা যেন এমনভাবে গড়ে ওঠে যে দেশটা নিজের, সেই বোধ যেন গড়ে ওঠে। যাতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ভবিষ্যতে এ দেশ গড়ে ওঠে এবং জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা আমরা গড়তে পারি।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া, রংপুরের পীরগঞ্জ এবং দিনাজপুরের পার্বতীপুরের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে সরাসরি যুক্ত থেকে মতবিনিময় করেন।
খুলনায় ১৫০ মেঃ গ্যাস বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে
কম্বাইন্ড সাইকেল উন্নীতকরণ
খুলনা ব্যুরো : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে খুলনা ১৫০ মেগাওয়াট গ্যাস টারবাইন বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে ২২৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল উন্নীতকরণে উদ্বোধন করেন। খুলনা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ সময় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সার্বিক বিষয়ে প্রেসব্রিফিংও করা হয়।
শতভাগ বিদ্যুতায়নের উদ্বোধন
সৈয়দপুর উপজেলা সংবাদদাতা : ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ এই সেøাগানকে সামনে রেখে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শতভাগ বিদ্যুতায়নের শুভ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদ চত্বরে পাগলাপীড়স্থ রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর উদ্যোগে এবং সৈয়দপুর উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
কুলিয়ারচর শতভাগ বিদ্যুতায়ন
কুলিয়ারচর (কিশোরগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা : গতকাল দুপুর ১২টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের অন্যান্য ৯টি উপজেলার সাথে কিশোরগঞ্জ জেলার শতভাগ বিদ্যুতায়িত কুলিয়ারচর উপজেলার উদ্বোধন করেন।



 

Show all comments
  • সফিক ২ মার্চ, ২০১৭, ১২:১৩ পিএম says : 0
    প্রধানমন্ত্রীকে অসংখ্য ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply
  • জেসমিন ২ মার্চ, ২০১৭, ১২:১৩ পিএম says : 0
    সবই ঠিক আছে, কিন্তু গরম না আসতেই ঢাকাতে এত লোডশেডিং কেন ?
    Total Reply(0) Reply
  • Nur- Muhammad ২ মার্চ, ২০১৭, ১২:৫৪ পিএম says : 0
    মাননীয় প্রধান মন্রী জনগণ ঘরে ঘরে বিদুৎ পাবে, কিন্তুু দাম বাড়লে, এর স্বর্থকতা থাকবে না। জনগণের আয় বাড়ান, পণ্য ও সেবার দাম কমান। তা হলে জনগণের জীবন যাত্রার মান বৃদ্ধি পাবে। আপনার পরিশ্রম ও স্বর্থক হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md.Nur Alam ২ মার্চ, ২০১৭, ১০:৩৩ পিএম says : 0
    তখন আমাদের বিদ্যুৎ ক্রয় করার ক্ষমতা থাকবে কি?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ