পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নাছিম উল আলম : বরিশালের গৃহবধূ হনুফা বেগমের হাঁচির সাথে তিন দফায় বের হয়ে এসেছে ছোট বড় অন্তত ৩৫টি পোকা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এ রোগের নাম ‘ম্যাগোট ইন দ্যা নোজ এন্ড প্যারানাজাল এয়ার সাইনাস’।
যেকোন ভাবে নাক দিয়ে কোন ধরনের পোকা বা তার ডিম ভেতরে প্রবেশ করার পরে তারা নিরাপদ স্থান খুঁজে নিয়ে সেখানে বাসা বাঁধে। পরে সেখানে ডিম ছেড়ে বংশ বিস্তারও করে ওসব কীট-পতঙ্গ। কিন্তু ততদিনে যার শরীরে ওইসব কীট বাসা বাঁধে, তার প্রাণ হয় ওষ্ঠাগত। আর যদি কোন ভাবে ঐ কীট মস্তিষ্কে প্রবেশ করে বা বাসা বাঁধতে পারে, তবে আক্রান্ত মানুষটির প্রাণ সংশয়ও ঘটে।
বরিশালের মুলাদী উপজেলার নাজিরপুর গ্রামের চল্লিশোর্ধ্ব হনুফা বেগম বেশ কিছুদিন ধরেই মাথাব্যথা ও চোখ থেকে অনবরত পানি পড়ার সাথে কমবেশী ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছিলেন। মাঝে মধ্যে বেদনানাশক ওষুধ খেয়ে মাথা ব্যথা নিবারণের চেষ্টাও চালান। কিন্তু তার কষ্ট ক্রমশ সহ্যের বাইরে চলে যাবার মধ্যে গত ২১ ফেব্রুয়ারী নাক থেকে রক্ত বের হতে শুরু করে। সাথে মাথা ব্যথাও বেড়ে যায়। হনুফাকে জেলার গৌরনদীর একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসার জন্য নেয়া হলে সেখানকার চিকিৎসক বরিশালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখানোর পরামর্শ দেন।
এ অবস্থায় গত ২৩ ফেব্রুয়ারী পুনরায় নাক থেকে রক্ত বের হতে থাকলে ঐদিনই হনুফাকে বরিশাল নগরীর ব্রাউন কম্পাউন্ড এলাকার একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ইএনটি বিশেষজ্ঞ খান আব্দুর রউফের অধীন ভর্তি করা হয়। কিন্তু চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় পরদিনই হনুফা ঐ ক্লিনিকের বেডে বসে হাঁচি দিতে থাকলে নাক থেকে বড় আকারের ১৫ থেকে ২০টি জীবন্ত পোকা বের হয়ে আসে। একইভাবে গত সোমবার আবারও তার হাঁচির সাথে আরো ১০ থেকে ১২টি পোকা নাক থেকে বের হয়। আর এর পরে তার মাথাব্যথাও অনেকটা কমে আসে। ফ্লুইডের সাহায্যে তার নাক-এর অর্গানসমূহ পরিষ্কার করার পরে আরো কয়েকটি পোকা বের হয়েছে গত মঙ্গলবার। ইতোমধ্যে তার সিটিস্ক্যানও করা হয়েছে। এখন তার নাক, কান ও মস্তিষ্কে আর কোন ধরনের কীট-পতঙ্গের অস্তিত্ব নেই বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
হনুফা ‘ম্যাগোট ইন দ্যা নোজ এন্ড প্যারানাজাল এয়ার সাইনাস’ আক্রান্ত হয়েছে বলে ডা. রউফ জানিয়েছেন। তার মতে, নাক, গাল ও কপালের অভ্যন্তরের কিছু অংশে ফাঁকা জায়গা থাকে। যে কোনভাবে কোন পোকা সেখানে প্রবেশ করতে পারলে বাসা বাঁধে। পরে সেখানে ডিম পাড়ে। আর ঐ নিরাপদ আস্তানায় ডিম থেকে বাচ্চাও বের হয়। হনুফার অবস্থাও একই হয়েছে বলে জানান ডা. রউফ। যে কোনভাবে হনুফার নাকের ভিতর দিয়ে পোকা প্রবেশ করে সংশ্লিষ্ট অর্গানে বার সন্নিহিত তার খালি জায়গায় স্থান করে নিয়েছিল। সেখানে ডিম দেয়ায় বাচ্চা বের হয়ে অগণিত পোকার নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্র গড়ে ওঠে। দীর্ঘ সময় ধরে পোকা বাসা বাঁধলেও হনুফা ও তার পরিবার স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি বুঝতে পারেনি। আর এ কারণে তার মাথাব্যথা এবং চোখ দিয়ে অনবরত পানি বের হতো। সুষ্ঠু চিকিৎসায় হনুফা এ অবস্থা থেকে খুব শিঘ্রই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবেন বলেও জানিয়েছেন ডা. রউফ।
তবে দেরী হলে ওই পোকা বা তার বাচ্চারা মাথার ভিতর গিয়ে বাসা বাঁধতো। কিন্তু হনুফার অবস্থাটা এখনো সে পর্যায়ে যায়নি। তবে দেরী হলে ওই পোকা মাথার ভিতর গিয়ে বাসা বাঁধতে পারতো। এতে করে তার মৃত্যু ঝুঁকিও ছিল জানিয়ছেন চিকিৎসক। সুষ্ঠু চিকিৎসা লাভ করায় এখন সে বিপদমুক্ত।
ডা. রউফ আরো জানিয়েছেন, মাস ছয়েক আগে বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জের এক শিশুর কান থেকে এ ধরনের পোকা বের হয়েছিল। পরবর্তীতে চিকিৎসার মাধ্যমে সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছে। তবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যে সব স্থানে আম বাগানের নিবিড়তা বেশী, সেখানে এ ধরনের রোগও বেশী হয়। বাগানে কর্মরতরা সারাদিনের কাজের ফাঁকে আম গাছের নীচে বিশ্রাম করে। এ সময় পোকা তাদের নাক অথবা কান দিয়ে প্রবেশ করে ঐসব অর্গানের খালি স্থানগুলোতে বাসা বাঁধার সুযোগ করে নেয়। ডা. রউফ কোন গাছের নীচে বেশীক্ষণ অবস্থান করার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।