ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
এবিসিদ্দিক : সরকার গত সাত বছরে (২০০৯-১০ থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত) ১৭,১৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বৈদেশিক সাহায্য গ্রহণ করেছে (প্রতি ডলার ৭৮ টাকা ধরে প্রায় ১ লাখ সাড়ে ৩৩ হাজার কোটি টাকার বেশি)। একই সময়ে বৈদেশিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি ছিল ৩২,৩৯৮ মিয়িলন ডলারের বেশি। ঋণ প্রাপ্তির প্রতিশ্রুতি ছিল ২৭,৮৯৭ দশমিক ৮৫ মিলিয়ন ডলারের আর পাওয়া গেছে ১২,৮৫৭ দশমিক ৭২ মিলিয়ন ডলার। অনুদান প্রতিশ্রুতি ছিল ৪,৫০০ মিলিয়ন ডলার যার বিপরীতে পাওয়া গেছে ৪,২৮৩ দশমিক ২৫ মিলিয়ন ডলার। অপরদিকে গত অর্থবছরে ২৬টি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও দেশের কাছ থেকে ৮২টি চুক্তির মাধ্যমে ৬,৯৯৭ দশমিক ৯৭ মিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়। এরমধ্যে ঋণ প্রতিশ্রুতি ছিল ৬,৫০৩ দশমিক ১৫ মিলিয়ন ডলার আছে অনুদান প্রতিশ্রুতি ছিল ৪৯৪ দশমিক ৮২ মিলিয়ন ডলারের। তবে ঋণ ও অনুদান চুক্তির অর্ধেক ছাড় পাওয়া যায় (৩,৪৪৯ দশমিক ৯৭ মিলিয়ন ডলার)। চলতি অর্থবছরে (২০১৬-১৭) বৈদেশিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায় ৬ হাজার মিলিয়ন মার্কিন ডলারের। ইতোমধ্যে চুক্তি অনুযায়ী সম্পূর্ণ অর্থের ছাড় পাওয়া গেছে। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ ও বিশ^ব্যাংকের মধ্যে ৯৯৯ দশমিক ৭৭ মিলিয়ন ডলারের ৭টি ঋণ চুক্তি আর ১৭৮ দমমিক ২৭ মিলিয়ন ডলারের ৫টি অনুদান চুক্তি হয়। এডিবির সাথে ৮৮৯ মিলিয়ন ডলারের ৯টি ঋণ আর ১১ মিলিয়ন ডলারের ৫ অনুদান চুক্তি হয়। জাপানের সাথে ১,৬৮৮ দশমিক ৭৭ মিলিয়ন ডলারের ৬টি ঋণ চুক্তি আর ৭ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলারের ২টি অনুদান চুক্তি হয়। ইউএন সিস্টেম-এর সাথে ১৪০ দশমিক ২৭ মিলিয়ন ডলারের ২১টি অনুদান চুক্তি হয়, ভারতের সাথে ২ হাজার মিলিয়নের একটি ক্রেডিট লাইন এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষর হয়। এছাড়া অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের সাথে ১,০৮৭ দশমিক ৮০ মিলিয়ন ডলারের ২৬টি চুক্তি হয়। চলতি অর্থবছরে (২০১৬-১৭) সরকার ৬ হাজার মিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক সাহায্য প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। গত অর্থবছরে ৮,২২৪.৮৩ কোটি টাকা বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের পরিশোধ করেছে। যার মধ্যে আসল ৮৪৮.৪৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমতুল্য ৬,৬৪৩.১৪ কোটি টাকা এবং সুদ ২০২.১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমতুল্য ১,৫৮১.৬৯ কোটি টাকা। এ অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের বাজেট বরাদ্দ ছিল ১,০৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমতুল্য ৮,৬০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এ অর্থ বছরে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ কার্যক্রমে বাজেট বরাদ্দ হতে ৩৭৫.১৭ কোটি টাকা কম ব্যয় হয়েছে। উল্লেখ্য, স্বাধীনতার পর থেকে এ যাবৎ বাংলাদেশ যথাসময়ে ঋণ পরিশোধ করতে সক্ষম হয়েছে। এমনকী ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে কিস্তির পুনঃতফসিলকরণের জন্য বাংলাদেশের কখনো আবেদন করারও প্রয়োজন হয়নি। এখানে উল্লেখ্যÑ বাংলাদেশ সরকার দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে বেশি ঋণ গ্রহণ করে থাকে। বৈেিদশিক আর্থিক সহায়তা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে সরকারি ভাষ্য হলোÑ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশের পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার পথ-পরিক্রমায় বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভে সক্ষম হয়েছে; যা অর্থনৈতিক নীতি ও কৌশলের ধারাবাহিক সাফল্যের প্রতিফলন। ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার জন্য সপ্তম পঞ্চ-বার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী জিডিপি হার ৬.৫% হতে বৃদ্ধি করে ক্রমান্বয়ে ২০২০ অর্থবছরে ৮% এ পৌঁছাতে হবে (২০১৬ থেকে ২০২০ পর্যন্ত প্রতি অর্থবছরে গড়ে ৭.৪%)। সেজন্য বিনিয়োগও ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করে ২০২০ অর্থবছরে জিডিপির ৩৪.৪ % হওয়া আবশ্যক, যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছিল ২৯.৪%। অধিকন্তু, ২০২০ অর্থবছরে মোট বিনিয়োগের মধ্যে সরকারি বিনিয়োগের হারও জিডিপির ৮.০% হতে হবে। অভ্যন্তরীণ উৎস হতে সম্পদ আহরণের সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় বিনিয়োগ চাহিদা পূরণে বৈদেশিক সহায়তার আহরণ ও কার্যকর ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ।
বাজেট ঘাটতি আর উন্নয়ন ব্যয় মেটানোর জন্যই সরকার বৈদেশিক সাহায্য নিয়ে থাকে। তবে যতই দিন যাচ্ছে ততোই ঋণের বোঝাটাও বাড়ছে। বড় বাজেট আর বড় ঘাটতি। চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি ৯৭ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা মেটাতে হবে ঋণ থেকে। গত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৮৭ হাজার ১৬৫ কোটি টাকা যদিও মূল বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছিল ৮৬ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা। তার আগের অর্থবছরে ছিল ৫৮ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার বৈদেশিক খাত থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে ৩৯ হাজার কোটি টাকা। উন্নয়ন খাতে বৈদেশিক সাহায্য (ঋণ) নির্ভরতা বেড়েই চলছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে উন্নয়ন খাতে বৈদেশিক অর্থের ব্যবহার ছিল ১,৪৭০ দশমিক ৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। দশ বছর পর তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩ হাজার মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। অপরদিকে বৈদেশিক ঋণের স্থিতি বাড়ছে। ঋণের সুদাসল পরিশোধ করতেই বাজেটে বিশাল অংকেট টাকা ব্যয় হয়। বর্তমানে মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ সাড়ে ১৩ হাজার টাকার বেশি। আর বৈদেশিক ঋণের স্থিতি প্রায় সোয় দুই লাখ কোটি টাকা। ৩০ জুন ২০১৫ তারিখে বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক ঋণের স্থিতির পরিমাণ ২ লাখ ১২ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকা (২৬,৫৭৩ ইউএস ডলার)। এরমধ্যে পাবলিক সেক্টরের মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি স্থিতি ১ লাখ ৯১ হাজার ২০৮ কোটি (২৩,৯০১ ইউএস ডলার) এবং সরকারি গ্যারান্টেড ঋণের পরিমাণ ২১ হাজার ৩৭৬ কোটি (২,৬৭২ ইউএস ডলার)। ২০১৫ সালে ৩০ জুন পর্যন্ত এডিবির স্থিতি ঋণ ৭৪০২.০২ মিলিয়ন ইউএস ডলার, পাইপলাইনে ৩২৫৭.৫৭ মিলিয়ন ইউএস ডলার। আইডিএর (বিশ্বব্যাংকের) স্থিতি ঋণ ১১৫৯৬.১৮ মিলিয়িন ইউএস ডলার, পাইপলাইনে ৫২১৬.৪৯ মিলিয়ন ইউএস ডলার। আইডিবির (ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক) স্থিতি ঋণ ৪০৬.৩৯২ মিলিয়ন ইউএস ডলার, পাইপলাইনে ৭৩৯.০৪ মিলিয়ন ইউএস ডলার। ওপেক এর স্থিতি ঋণ ৪১.৪৯ মিলিয়ন ইউএস ডলার, পাইপলাইনে ১৫৩.৯৭ মিলিয়ন ইউএস ডলার। ইফাদের স্থিতি ঋণ ৩৩৮.৬৭ মিলিয়ন ইউএস ডলার, পাইপলাইনে ১৭০.০৩ মিলিয়ন ইউএস ডলার। চীনের স্থিতি ঋণ ৯১৭.১৯ মিলিয়ন ইউএস ডলার, পাইপলাইনে ২৬৬.৪৮ মিলিয়ন ইউএস ডলার। ভারতের স্থিতি ঋণ ২০৭.১২ মিলিয়ন ইউএস ডলার, পাইপলাইনে ৫৯৪.০৪ মিলিয়ন ইউএস ডলার। দক্ষিণ কোরিয়ার স্থিতি ঋণ ৩৫২.৫৮ মিলিয়ন ইউএস ডলার, পাইপলাইনে ২৭০.৫৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার। এছাড়া জাপানের স্থিতি ঋণ ২০৬০.২৭ মিলিয়ন ইউএস ডলার, পাইপলাইনে ৩৫৮৬.০৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার এবং অন্যান্য দেশ ও সংস্থার স্থিতি ঋণ ৫৭৯৯.১৩ মিলিয়ন ইউএস ডলার, পাইপলাইনে ১৪৮৫.৪২ মিলিয়ন ইউএস ডলার। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১.৮ শতাংশ নিট বৈদেশিক সহায়তা হতে সরকারের বাজেট ঘাটতি অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি আদায় ৬ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে।
লেখক : সাংবাদিক
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।