পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
মো. আতাউর রহমান সানী, দোহার-নবাবগঞ্জ (ঢাকা) থেকে : কাজ নেই বলে কেউ পত্রিকা পড়ছে, কেউ গালে হাত দিয়ে বসে আছে, আবার কেউবা অফিস ফেলে ক্রেতা-বিক্রেতার খোঁজে বের হয়েছে। এ দৃশ্য ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলায় নবাবগঞ্জ সাব রেজিস্ট্রার অফিসের সামনে (ভেন্ডার) দলিল লেখকদের।
দলিল লেখকদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানায়, জমি দামের চেয়ে সরকারি গড় মূল ৭/৮ গুণ বেশী থাকায় জমি ক্রয়-বিক্রয় নেই বললেই চলে। দলিল লেখকদের মধ্যে অনেকেরই কাজকর্ম না থাকায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে। পেশাগত আয় দিয়ে সংসার পরিচালনা করা কঠিন। জমির দাম ও রেজিস্ট্রার খরচ স্বাভাবিক মূল্যে না আসলে ভবিষ্যতের অগ্রগতির সম্ভাবনা দেখছেন না।
দলিল লেখক ও স্ট্যাম্প ভেন্ডার সমিতি সূত্রে জানা যায়, সরকার প্রতি বছরই গড়মূল্য নির্ধারণ করে থাকেন। গড়মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রতিটি সাব রেজিস্ট্রার অফিসে সর্বোচ্চ মূল্যের দলিল, মধ্য মূল্যের দলিল ও সর্বনি¤œ মূল্যের দলিল একসাথে যোগ করেন। তিন দলিলের মূল্যকে শতাংশে ভাগ করে যে সমস্ত বিক্রয় দলিল প্রতি নগণ্য মূল্যে ক্রয়-বিক্রয় হয় ঐ সমস্ত বিক্রয় দলিলের মূল্য নির্ধারণ করে গড় মূল্যে নিয়ে আসা হয়। যার ফলে বাজারের বিক্রয় মূল্য থেকে দেশের সর্বত্র সরকারি হিসেবে জমির রেজিস্ট্রি মূল্য ৭ থেকে ৮ গুণ বেশি। এ কারণে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই সংকটে পড়েছেন। যেমন দলিল গ্রহীতাদের নির্ধারিত দামের চেয়ে রেজিস্ট্রার খরচ অতিরিক্ত দিতে হয়, তেমনি জমি কমদামে বিক্রয় করে জমি মালিকরা তাদের সঠিক মূল্য পায় না। ফলে দেশে জমি ক্রয়-বিক্রয় হ্রাস পাচ্ছে। জমি বিক্রয় কমে যাওয়ায় সরকারও যথেষ্ট পরিমাণ আয়কর থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বিভিন্ন মৌজায় সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলা সদর কাশিমপুর মৌজায় কিছু জমি বিক্রয় করে থাকেন প্রতি শতাংশ ২ থেকে ৩ লাখ টাকা অথচ সে জমির সরকারি গড় মূল্য ৬ লাখ ৭১ হাজার ৪ শ’ ঊনত্রিশ টাকা। যন্ত্রাইল মৌজায় প্রতিবিঘা জমি বিক্রয় হয় মাত্র ৫ লাখ টাকা। যার রেজিস্ট্রার খরচ হয় ৫৫ হাজার টাকা। ঐ জমির সরকারি নির্ধারিত গড়মূল্য প্রতি বিঘা ২১ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। যার রেজিস্ট্রি খরচ ২ লাখ ৩৬ হাজার ২শ’ ৮০ টাকা।
সবচাইতে অবাক করা বিষয় হচ্ছে উপজেলার যন্ত্রাইল ইউনিয়নের ছোট গোবিন্দপুর মৌজায়Ñ শ্রেণী বাড়ি যাহার সরকারি মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি শতাংশ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা যার প্রতি শতাংশ রেজি: খরচ ১১ পারসেন ১৬,৫০০ টাকা। কিন্তু সরেজমিনে দেখা যায়, ঐ মৌজায় ভূমি ( প্রতি শতাংশ) বেচা-কেনা হচ্ছে মাত্র ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকায়। রেজি: খরচ বেশি হওয়ায় ঐ মৌজায় এখন আর জমি ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে না। ঐ গ্রামের বাসিন্দা মো. ভুলু কাজী জানান, আমাদের এই ছোট গোবিন্দপুর মৌজায় জমির দাম সরকারি ভাবে যদি ৬০ হাজার নির্ধারণ করে ইহার উপর ৭ পারসেন্ট রেজি: খরচ ধরা হয় তাহলে জমি আবার আগের মতো বেচা-কিনি হবে এবং সরকারও রাজস্ব পাবে। তিনি আরো জানান, দুই বছর যাবত এই মৌজায় জমি বেচা-কেনা নাই। সরকারের কাছে আমাদের প্রাণের দাবি তিনি যেন এ বিষয়টি বিবেচনা করে।
নাম জানাতে অনিচ্ছুক জমি ক্রয়-বিক্রেতাদের মধ্যে অনেকেই জানান, কিছু অসাধু জমির দালালরা নিজস্ব পুঁজি খাটিয়ে জমির মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত দাম লেখিয়ে বায়না করে থাকেন। এরপর তারা বায়নানামায় ঐ দর দেখিয়ে প্রতি শতাংশে ৫/১০ হাজার টাকা বেশী নিয়ে বিক্রয় করেন। ফলে তারা জমির দাম দ্বিগুণ পেয়ে থাকেন। সরকারি গড় মূল্য এভাবেই বাড়তে থাকে।
দলিল লেখক আব্দুল কুদ্দুস জানান, ২/৩ বছর আগেও দলিল লিখে ভালই জীবনযাপন করছিলেন। বর্তমানে খুবই খারাপ অবস্থা অনেক সময় বাজার করার টাকা থাকে না।
নবাবগঞ্জ দলিল লেখক ও স্ট্যাম্প ভ্যান্ডার সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. আব্দুল মালেক জানান, প্রতিটি মৌজাতেই জমির মূল্যের চেয়ে সরকারি নির্ধারিত গড়মূল্য বেশী। এভাবে চলতে থাকলে দলিল লেখকরা তাদের আয় দ্বারা সংসার চালাতে পারবেন না। অন্যদিকে সরকারও আয়কর কম পাচ্ছে। জমির বর্তমান মূল্যের সাথে মিল থাকলে জমির ক্রয়-বিক্রেতা, দলিল লেখক ও জমি বিক্রেতা ও গ্রহীতাদের জন্য সুবিধা হবে। এবং বেশী জমি রেজিস্ট্রি হলে সরকার আয়কর বেশী পাবে।
নবাবগঞ্জ উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার রেজাউল করিম বকশি জানান, সারা দেশেই একই অবস্থা চলছে, তবে এব্যাপারে সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।