Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কসোভোকে বাংলাদেশের স্বীকৃতি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন

| প্রকাশের সময় : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : ইউরোপীয় রাষ্ট্র কসোভোকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ। এর আগে ১১৩টি দেশ কসোভোকে স্বীকৃতি দেয়। অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) ৫৬ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৩৭তম দেশ হিসেবে রাষ্ট্রটিকে স্বীকৃতি দিলো। কসোভোকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদানের প্রস্তাব গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেয়া হয়।
মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফান্স ও জার্মানি কসোভোকে স্বীকৃতি প্রদান করেছে।
ইউরোপের বলকান অঞ্চলের রাষ্ট্র কসোভো সার্বিয়ার একটি প্রদেশ ছিল। প্রদেশটি ১৯৯৯ সাল থেকে জাতিসংঘ প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। যদিও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রদেশটির ওপর সার্বিয়ার সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি দিয়েছে, কার্যত এটির ওপর সার্বীয় শাসনের প্রয়োগ নগণ্য। ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কসোভো স্বাধীনতা ঘোষণা করে। কসোভোর সীমান্তে মন্টেনিগ্রো, আলবেনিয়া ও ম্যাসিডোনিয়া অবস্থিত। এর জনসংখ্যা ২০ লাখ। এদের বেশিরভাগই জাতিগতভাবে আলবেনীয়। তবে সার্বীয়, তুর্কি, বসনীয়, জিপসি এবং অন্যান্য জাতির লোকদের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ও রয়েছে।
শাস্তি বাড়িয়ে সামুদ্রিক মৎস্য আইন অনুমোদন
মেরিন কালচার জোন প্রতিষ্ঠা ও শাস্তি বাড়িয়ে ‘সামুদ্রিক মৎস্য আইন, ২০১৬-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের ১৯৮৩ সালের দ্য মেরিন ফিশারিজ অর্ডিন্যান্স ছিল। এটি এরশাদ সরকারের আমলে জারি করা হয়। সামরিক শাসনামলে হওয়ায় আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী এটি বাংলায় প্রণয়ন করা হয়েছে নতুন আইন হিসেবে। এতে তিনটি নতুন ধারা যুক্ত করা হয়েছে। শাস্তির মাত্রা একটু বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া তেমন কোনো বড় পরিবর্তন আনা হয়নি।
সচিব বলেন, প্রস্তাবিত আইনে সরকার উপকূলীয় এলাকা বা নদী মোহনাসংলগ্ন উপযোগী এলাকাকে চিহ্নিত করে মেরিন কালচার অঞ্চল বা জোন প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। অনুমোদিত পদ্ধতিতে মৎস্যসহ সামুদ্রিক বিভিন্ন প্রজাতি চাষে অনুমতি দিতে পারবে। আধুনিক এ ধারণাটি আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আগের আইনে কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বাধা দেয়ার শাস্তি ছিল ৩ বছরের জেল বা এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দ-। এখন জেল ৩ বছরই রাখা হয়েছে। তবে জরিমানা এক লাখ টাকার স্থলে ৫ লাখ টাকা করা হয়েছে। ইচ্ছাকৃতভাবে মৎস্য আহরণের নৌযান ইত্যাদির ক্ষতিসাধনের শাস্তি ছিল ৩ বছরের জেল বা এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দ-। সেখানেও নতুন আইনে জরিমানা ৫ লাখ টাকা করা হয়েছে।
শফিউল আলম আরো বলেন, কোনো ব্যক্তি বা মালিক লাইসেন্সের শর্ত লঙ্ঘন করলে আগের নিয়মে ৩ বছরের জেল বা এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দ-। এ ক্ষেত্রেও ৩ বছরের জেলসহ জরিমানা ৫ লাখ টাকা করা হয়েছে।
সচিব আরো বলেন, আটক বা চিহ্নিতকরণ এড়ানোর জন্য প্রমাণাদি ধ্বংস করার শাস্তি ছিল ৩ বছরের জেল বা এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দ-। জেল তিন বছর ঠিক আছে, জরিমানা এক লাখের জায়গায় ৫ লাখ করা হয়েছে।
যদি কেউ কোনো নৌযানের মালিক হয়ে বা বাংলাদেশের মৎস্য জলসীমায় কোনো মৎস্য আহরণে নৌযান পরিচালনা করে তা নির্ধারিত পন্থায় চিহ্নিত না করে এ জন্য বর্তমানে শাস্তির বিধান রয়েছে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা। এ জরিমানা বাড়িয়ে এক লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
তিনি আরো বলেন, নৌযানে আরোহণ করা ব্যক্তিদের সংঘটিত অপরাধের জন্য নৌযানের স্কিপার (অধিনায়ক বা ক্যাপ্টেন) দায়ী হবেন। এটার জন্য শাস্তি ছিল সর্বোচ্চ জরিমানা ৫ হাজার টাকা, নতুন আইনে সর্বোচ্চ জরিমানা ৫০ হাজার টাকা।
শফিউল আলম বলেন, আগের আইন অনুযায়ী জরিমানার ১০ ভাগের এক ভাগ টাকা দিয়ে আপোষের জন্য বসতে পারতেন। প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, কমপক্ষে ৫ ভাগ টাকা পরিশোধ করে আপোষ করতে পারবে।
নতুন যুবনীতি অনুমোদন
মন্ত্রিসভায় নতুন যুবনীতির খসড়া অনুমোদিত হয়েছে। এতে জাতীয় কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে দেশের যুবসমাজের কল্যাণে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব এম শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, নীতিমালায় যুবসমাজ সচিব বলেন, নতুন নীতিমালায় বেকার, প্রবাসী, উদ্যোক্তা, বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া, লেখাপড়া না জানা, মাদকাসক্ত, তৃতীয় লিঙ্গ, গৃহহীন ও পল্লীর যুবকদের (নারী-পুরুষ) জন্য সমাজের উন্নয়নে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
তিনি বলেন, পূর্বের নীতিমালায় এ ধরনের কোনো নির্দেশনা ছিল না। এটি হবে ২০০৩ সালে প্রণীত বিদ্যমান নীতিমালার প্রতিস্থাপন। সবশেষ যুবনীতি ২০০৩ সালে প্রণীত হয়েছিল। এরপর ১৪ বছর পার হয়ে গেছে, এ জন্য আগেরগুলো ঠিক রেখে একটু আধুনিকায়ন করা হয়েছে। নতুন যুবনীতিতেও যুবদের বয়স আগের মতো ১৮ থেকে ৩৫ বছর রাখা হয়েছে।
শেখ হাসিনা জাতীয় যুবকেন্দ্র হবে ইনস্টিটিউট
শেখ হাসিনা জাতীয় যুবকেন্দ্রকে ইনস্টিটিউটে রূপান্তর করতে ‘শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউট আইন ২০১৭’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, শেখ হাসিনা জাতীয় যুবকেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে ১৯৯৮ সাল থেকে। প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মাধ্যমে এ কেন্দ্রকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।
আইনের খসড়া অনুযায়ী, এই ইনস্টিটিউটের একটি নির্বাহী কাউন্সিল থাকবে, যার প্রধান হবেন যুব ও ক্রীড়া সচিব। ১৮ ক্যাটাগরির সদস্য এই নির্বাহী কাউন্সিলে সদস্য হিসেবে থাকবেন।
নির্বাহী কাউন্সিলে মনোনীত সদস্যদের তিন বছরের জন্য মনোনয়ন দেয়া হবে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, নির্বাহী কাউন্সিলকে বছরের কমপক্ষে দুইবার সভা করতে হবে।
যুবদের মানব সম্পদে রূপান্তরে প্রশিক্ষণ ও কারিকুলাম প্রণয়ন করা, যুবকর্মের ওপর উচ্চতর গবেষণা ও মূল্যায়ন, ডিপ্লোমা ও ডিগ্রি দেয়া, যুবকদের বিষয় নিয়ে একটি তথ্যভা-ার গড়ে তোলা, প্রশিক্ষণ ও যুববিষয়ক নীতি প্রণয়ন করবে এই ইনস্টিটিউট। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ইনস্টিটিউট গ্র্যাজুয়েশন, মাস্টার্স ও ডিপ্লোমা সনদ দিতে পারবে। সরকারের অনুমোদন নিয়ে ইউজিসির সুপারিশ, পরামর্শ ও নির্ধারিত পদ্ধতি অনুযায়ী এসব ডিগ্রি দিতে হবে। বিভিন্ন ধরনের কোর্স পরিচালনার জন্য এ প্রতিষ্ঠানে একটি অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল থাকবে, যার প্রধান হবেন ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক।
দুই চুক্তির খসড়া অনুমোদন
বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে দ্বৈত কর আরোপ পরিহার ও রাজস্ব ফাঁকি রোধ সংক্রান্ত একটি চুক্তির খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
শফিউল আলম বলেন, বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল এই চার দেশের ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় ভুটানের সঙ্গে অনেক বিষয়ে চুক্তি হয়েছে। সেখানে বাণিজ্যসুবিধা সম্প্রসারণের জন্য দুই দেশ মিলে দ্বৈত করারোপ পরিহার ও রাজস্ব ফাঁকি রোধসংক্রান্ত একটি চুক্তিপত্র তৈরি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যেও একই বিষয়ে আরেকটি চুক্তির খসড়া অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা।
এই চুক্তি করতে ১৯৯৭ সাল থেকে প্রক্রিয়া চলছিল জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, অনেক সভার পর দুই দেশের সম্মতিতে এই চুক্তিপত্র তৈরি করা হয়েছে।
ওয়ার্ল্ড লিডারশিপ ফেডারেশন (ডব্লিউএলএফ) পুরস্কারে ভূষিত হওয়ায় জাতীয় সংসদের সরকার দলীয় হুইপ ইকবালুর রহিমকে মন্ত্রিসভা অভিনন্দন জানিয়েছে।
হিজড়া সম্প্রদায়ের জন্য বিকল্প আয় ও আবাসনের ব্যবস্থা করার জন্য ভারতভিত্তিক ডব্লিউএলএফ সোস্যাল ইনোভেটর ক্যাটাগরিতে তাকে পুরস্কৃত করা হয়।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে অনির্ধারিত আলোচনায় ইকবালুর রহিমকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে বলে বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানিয়েছেন।
সচিব বলেন, সম্প্রতি দুবাইয়ে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ইকবালুর রহিমকে এই পুরস্কার দেয়া হয়েছে। হিজড়া সম্প্রদায়ের ১২৫ জনকে পুনর্বাসন, প্রশিক্ষণ ও বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করা এবং বৃদ্ধাশ্রম তৈরির জন্য তাকে এই পুরস্কার দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, হুইপ ইকবালুর রহিম তার নির্বাচনী এলাকা দিনাজপুর সদর উপজেলায় মানবপল্লী বাঙ্গীবেচা আশ্রয়ণ প্রকল্প করে হিজড়া সম্প্রদায়ের মানুষকে পুনর্বাসন করেছেন। ২০১১ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে তিনি এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন। এই পল্লীতে মোট ২৫টি ব্যারাক রয়েছে। প্রতি ব্যারাকে পাঁচটি করে ঘর। এই প্রকল্পে ১২৫ জন হিজড়ার পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ওয়ার্ল্ড লিডারশিপ ফেডারেশন অর্থনীতি, শিক্ষা এবং সামাজিক বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সংস্কার ও সৃজনশীলতার জন্য ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার দিয়েছে। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ইকবালুর রহিম পুরস্কার গ্রহণ করেন।



 

Show all comments
  • আমিনুল ইসলাম ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১১:১১ এএম says : 0
    ইউরোপীয় রাষ্ট্র কসোভোকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ