Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দিল্লির আগ্রাসী মনোভাব অনেককেই ভারতবিরোধী করে তুলবে

ডয়েচে ভেলেকে সাক্ষাৎকারে সুলতানা কামাল

| প্রকাশের সময় : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : ‘সুন্দরবন বাঁচাও’ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকায় ভারতের রোষানলে পড়েছেন বাংলাদেশের অন্যতম মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল। ফলে কলকাতায় থাকা তার অসুস্থ আত্মীয়কে দেখতে যেতে পারছেন না তিনি। সুন্দরবনের কাছে রামপালে ভারতের সহায়তায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছেন বাংলাদেশের অনেক অ্যাক্টিভিস্ট। তাদের দাবি, এর ফলে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতি হবে। তাই সুন্দরবন বাঁচাতে রামপালের কাছে কয়লাভিত্তিক প্রকল্পের বিরোধী তারা, যদিও সরকারের কথায় সুন্দরবনের ক্ষতি এড়াতে যথেষ্ট উদ্যোগ নেয়া হবে।
মানবাধিকার কর্মী এবং আইনজীবী সুলতানা কামাল সরকারের এই বক্তব্যে আশ্বস্ত নন। বরং নেদাল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে গত রোববার ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি তুলে ধরেন তার উদ্বেগের কারণগুলো। সুন্দরবনের কাছে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র সম্পর্কে তিনি জানান, বিষয়টি ‘আমি তোমার শরীরে বিষ ঢোকাবো ঠিকই, কিন্তু সেই বিষে বিষক্রিয়া যাতে না হয় সেই চেষ্টাও করব’-এর মতো ব্যাপার।
সরকারের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে, রামপালে আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি ব্যবহার করে সুন্দরবনকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা হবে। কিন্তু সুলতানা কামাল জানান, এ রকম কোনো প্রযুক্তি আসলে ব্যবহার করা হবে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কেননা প্রকল্পের কাগজপত্রে বা যেসব সরঞ্জাম কেনা হচ্ছে, তাতে এই প্রযুক্তির কথা উল্লেখ নেই।
তার কথায়, ‘আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি ব্যবহার করলে কয়লার ব্যবহার কমবে, সেটাই একমাত্র মহাত্ম, আর কিছু নয়। কিন্তু এর ফলে বিষাক্ত গ্যাসের নিঃসরণ কমানো যাবে না। মোটের ওপর এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে এমন কোনো প্রমাণও আমরা পাইনি’।
প্রসঙ্গত রামপালবিরোধী আন্দোলনকারীদের অধিকাংশই ভারতবিরোধী, স্বাধীনতার বিপক্ষের এবং উন্নয়নবিরোধী বলে জানিয়েছেন সরকারের একাধিক এমপি-মন্ত্রী। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সরকারের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন সুলতানা কামাল। তাকে স্বাধীনতার বিরোধী প্রমাণ করতে পারলে সুন্দরবন বাঁচাও আন্দোলন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। শুধু তাই নয়, ভারত বিরোধিতার বিষয়েও কথা বলেছেন বর্তমানে ফ্রিডম বুকফেয়ারে অংশ নিতে দ্য হেগে অবস্থানরত এই মানবাধিকার কর্মী। তিনি জানান, সুন্দরবন বাঁচাও আন্দোলন করায় সম্প্রতি তাকে ভিসা দেয়নি ভারত।
তিনি বলেন, ‘আমার ভাসুর কলকাতায় থাকেন, তিনি অসুস্থ। অথচ তাকে আমি দেখতে যেতে পারছি না, কারণ রামপালবিরোধী আন্দোলন করায় ভারত আমাকে ভিসা দেয়নি’।
সুলতানা কামালের কথায়, ‘ভারতের এই যে আমাদের সার্বভৌমত্বের ওপর হস্তক্ষেপ করা...। আমাদের জাতীয় ইস্যু নিয়ে যখন কথা বলছি, সেটার মধ্যে অনাকাক্সিক্ষতভাবে একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করা, এগুলো যদি তারা করতে থাকে, একে একে অনেক মানুষই ভারতবিরোধী হয়ে যাবে। বিশেষ করে ভারতের আগ্রাসী, অযৌক্তিক এবং দাদাগিরির যে মনোভাব রয়েছে, সেটার কারণে’।
ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারটি ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের বাকস্বাধীনতা পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেন সুলতানা কামাল। তিনি বলেন, ‘যারা মুক্তভাবে কথা বলতে চায়, তাদের সঙ্গে আমাদের অমত থাকতে পারে। যাদের ব্লগার বলছি, তাদের অনেকেই অনেক কিছু লেখে, যার সঙ্গে আমিও সবসময় একমত হই না, অনেকেই হবেন না। অনেকের সেটা ভালো নাও লাগতে পারে। কিন্তু একটা সভ্য দেশে, সভ্য সমাজে, একটা নিয়মনীতি থাকে যে তারা তাদের কথাবার্তা বলুক...। আমাদের পছন্দ না হলে আমরা দৃঢ়ভাবে, স্পষ্টভাবে বলি যে, এটা আমাদের পছন্দ হচ্ছে না। কিন্তু এখানে সহিংসতার কোনো জায়গা থাকতে পারে না’।
তিনি আরো বলেন, ‘যারা এসব হত্যাকা- ঘটাচ্ছে, তারা কি বলে এগুলো ঘটাচ্ছে, তার বিরুদ্ধে যতটা না দাঁড়াচ্ছি, তার থেকেও আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই যে, তারা যেহেতু সহিংসতার আশ্রয় নিয়ে এটা করছে, সেজন্য আমরা তাদের বিরুদ্ধে’।
বাংলাদেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলোর হেফাজতে ইসলামকে সাথে রাখার বিপজ্জনক কৌশলেরও সমালোচনা করেন সুলতানা কামাল। জানান, বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের উচিত সাধারণ জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ থাকা, কোনো উগ্রপন্থী ইসলামী দলের প্রতি নয়। সূত্র : ডয়েচে ভেলে।



 

Show all comments
  • Nur- Muhammad ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ৭:৪১ এএম says : 0
    রামপাল আন্দোলনের জন্য (আপনার কথা অনুযায়ী) ভারত আপনার ভিসা দেয় নাই। এখানে হেফাজতকে টেনে আনলেন কেন? হেফাজত ত আপনার ভিসা আটকায় নাই।(হেফাজতকে আমি ও সমর্থন করি না) তবে প্রতেক ব্যাক্তি বা দলের মতামতকে সন্মান করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আমাকে সহ সকলকে এই শিক্ষাই দেয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Azad Miah ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১১:৩৭ এএম says : 0
    That's right
    Total Reply(0) Reply
  • Humyun Kabir ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১১:৩৭ এএম says : 0
    তুলবে নয় তুলেছে
    Total Reply(0) Reply
  • Sohidul Islam ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১১:৩৮ এএম says : 0
    Apni kub balo bolasen
    Total Reply(0) Reply
  • Nannu chowhan ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১:০২ পিএম says : 0
    Now you can understand ,India is the country,"They know only their own interest,they can't give they can get,they don't care what are you giving & what is the value of the friendship?" So our leaders,pls. Let us try to look our nation interest 1st . Friendship is not by the cost of our national interest.thanks...
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ